ভাষা সৈনিক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ মনছুর আহমেদ মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাগেরহাটে।
বার্ধক্য জনিত কারণে শনিবার সাকাল সাড়ে ১০টায় শহরের পুরতন বাজার এলাকার লিচুতলার নিজ বাসবভনে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহে…….রাজেউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো পচাশি বছর। তিনি দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শনিবর বাদ আছর তার দির্ঘ্য দিনের কর্মস্থল বাগেরহাট বহুমুখী কলেজিয়েট স্কুল মাঠে তার নামাজের জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। জানাযা শেষে বাগেরহাট শহরের সরই করবস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
এদিকে, তার মৃত্যুর খরব শোনর পর থেকে শহরের পুরতন বাজার এলাকার লিচুতলাস্থ বাসবভনে ছুটে যান তার দির্ঘ্য দিনের সহকর্মী, শিক্ষক, ছাত্র, রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতাসহ বাগেরহাটের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সর্বস্তরের মানুষ।
মরহুম মুনসুর আহম্মেদ ১৯২৯ সালের পহেলা নভেম্বর পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার পত্যাশী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আলহাজ্ব কাশেম আলী হাওলাদার। তিনি ভাষা আন্দোলনসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন আন্দোলনে বাগেরহাটে স্বক্রীয় ভূমিকা পালণ করেছেন।
মনছুর আহমেদ ১৯৪৬ সালে তৎকালীন বাগেরহাট টাউন স্কুল (বর্তমান বাগেরহাট বহুমুখী কলেজিয়েট স্কুল) থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন।
১৯৫৮ সাল থেকে শুরু হয় তার শিক্ষকতা জীবণের। বাগেরহাটে চিরুলিয়া বৃষ্টিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শুরু করেণ শিক্ষকতা। এর পর ১৯৭০ সালে যোগ দেন তৎকালিন বাগেরহাট টাউন স্কুলে এবং ১৯৯৪ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরে যান।
মুক্তি যুদ্ধের পর বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের আহম্মদ আলীর মেয়ে হেলেনাকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর একে একে তাদের ঘরে ২ টি ছেলে ও ২ টি মেয়ে সন্তান জন্ম লাভ করে।
বড় মেয়ে শামীমা ফেরদৌসী বাগেরহাট আমলাপাড়া স্কুলের শিক্ষিকা, মেজো ছেলে ড. তরিকুল ইসলাম একজন চিকিৎসক, সেজো মেয়ে হাবিবা কুমকুম ফকিরহাট কাজী আজাহার আলী কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক এবং ছোট ছেলে রাগিব হাসান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন।
২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর মনসুর আহম্মদের স্ত্রী হেলেনা বেগম না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। এর পর থেকেই বাগেরহাট শহরের পুরাতন বাজার লিচুতলা এলাকায় বাড়িতে ছেলে ড. তরিকুল ইসলাম ও মেয়ে হাবিবা কুমকুমের সাথে বাস করতেন তিনি।
১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনের সময় বাগেরহাটে বাংলা ভাষার দাবিতে অনুষ্ঠিত মিছিল-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন মনছুর আহমেদ। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের আগে পাকিস্তান সরকার আরও অনেকের সাথে তাকে গ্রেপ্তার করে এবং তিনি দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন।
১৯৬৮ সালে তিনি ন্যাপ (মোজাফফর) এর রাজনীতিতে স্বক্রীয় হন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাটে গঠিত মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন তিান।
নব্বই এর দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পষিদের জেলা সভাপতি হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
১৯৭৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (কামরুজ্জামান) বাগেরহাট জেলা সমপাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ভাষা সৈনিক মসছুর আহমেদ তার জীবদ্দশায় বাগেরহাটের সর্বস্তরের মানুষের কাছে নির্লোভ, নিরহংকার ও প্রগতিশীল সমাজকর্মী হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন। তিনি বাগেরহাট ফাউণ্ডেশনের আজীবন সম্মাননাসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন।
তার মৃত্যতে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সিপিবি, বাগেরহাট প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।