বাগেরহাট জেলা কারাগারে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারী ভাবে পরিবেশনকৃত উন্নত মানের খাবার খেয়ে অর্ধশত বন্দী অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে এডিশনাল ডিষ্ট্রিক ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মাহমুদুর রহমানকে প্রধান করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মু. শূকুর আলী।
বিকালে কারাগার পরিদর্শন শেষে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মু.শুকুর আলী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, কারা হাসপাতালে ৭৫ জনকে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরমধ্যে ২০ জন সুস্থ হয়ে ওয়ার্ডে ফিরে গেছে এবং ৫৫ জনের চিকিৎসা চলছে। এছাড়া বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে কমিটির রিপোর্ট পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে বন্দীদের অসুস্থতার খবর পেয়ে যশোর থেকে বাগেরহাটে আসেন কারা-পুলিশের খুলনা বিভাগীয় উপ-মহা পরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) এ কে এম ফজলুল হক।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসাধীন অসুস্থ বন্দীরা হলেন- হাজতী শাহ জালাল (৩৫), হেদায়েত (৪০), গোপাল চন্দ্র পাইক (২৮), আবু বক্কর সিদ্দিক (২৮), মো. এমাদুল (৩৫), মুজিবর ফরাজী (৩০), হেমায়েত (৩৫), মিজান (৪৫), মিন্টু শেখ (৪৭), জাহিদুল ইসলাম (২৪), লিটন (২০), রাসেল (২৪), কালাম (৪০), আব্বাস (৩০) এবং কয়েদী মনির হাওলাদার (৩০), মাহাতাব খান (৪৫), নজরুল ইসলাম (৪২), বাচ্চু (৪১), হীরামনি (৪২) ও মুক্ত মীর (৩০)।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ কয়েক বন্দী বাগেরহাট ইনফোকে জানান, ‘রাতে গরুর গোস ও পোলাও ভাত খেয়ে এশার নামাজের পর পেটের ব্যাথা শুরু হয়। এরপর থেকে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এতে প্রায় অধিকাংশ বন্দী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কর্তব্যরত কারারক্ষীদের জানানো হলেও রাতে জেলার বা সুপার কেউ তাদের দেখতে আসেননি’। বরং অসুস্থ বন্দীদের সাথে কারারক্ষীদের অনেকে র্দূব্যবহার করার অভিযোগ করেন হাসপাতালে ভর্তি বন্দীদের অনেকে।
এদিকে বন্দীরা অসুস্থ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাদের স্বজনেরা হাসপাতাল ও কারাগারের সামনে ভিড় করছে।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কুহেলী বেগম দুপুরে বলেন, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তারা অসুস্থ হয়েছে বলে প্রাথমিভাবে ধারণা করছি।
তবে, কারা কর্তৃপক্ষের দাবি- খাবার খেয়ে নয়, কারাগারের পানির কারণে এ অবস্থা হয়েছে।
এদিকে কারাগার সংশ্লিষ্ট একটি পক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কারাগারের উর্ধ্বতন অসাধু কর্মকর্তাদের সরকারী এই উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের জন্য দশ থেকে বিশ হাজার টাকার বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে হয়েছে কারা সংশ্লিষ্ট ওই ঠিকাদারদের।
এব্যাপালে বাগেরহাট জেলা কারাগারের সুপার আমানুল্লাহ জানান, সোমবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাগেরহাট জেলা কারাগারে সরকারি ভাবে উন্নত মানের খাবর পরিবেশন করা হয়। সোমবার সকালে পান্তা ইলিশ, দুপুরে আলুর দোম এবং রাতে ৫২৯ জন বন্দীকে রান্না করা গরুর গোস ও পোলাও পরিবেশন করা হয়।
রাতের খাবারের পর বেশকিছু বন্দী পেটের পীড়া ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগের উপস্বর্গ দেখা দেয়। এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে অসুস্থদের মধ্যে গুরুতর কয়েক জনকে চিকিৎসার জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর বকিদের কারা অভ্যান্তরে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. আমানুল্লাহ বলেন, সোমবার সকাল থেকেই কারাগারে উন্নত খাদ্য পরিবেশন করা হয়। খাদ্যের মান ভালো ছিল। কিন্তু কারাগারে খাবার পানির ভালো কোনো উৎস নেই।
বাগেরহাট ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: বিদ্যুৎ কান্তি পাল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বাগেরহাট জেলা কারাগারে খাদ্য অসুস্থ্য বন্দীদের উন্নত চিকিৎসা দিতে দুটি মেডিকেল টীম গঠন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে ডা: এমদাদুল হককে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টীম বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি বন্দীকে এবং ডা: মোশারফ হোসেনকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টীম কারা অভ্যান্তরে অসুস্থ বন্দীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
আরআই/এএস/এসআই হক–নিউজরুম/বিআই
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More