প্রচ্ছদ / খবর / হরিণের মাংসের মূল্য বৃদ্ধি !

হরিণের মাংসের মূল্য বৃদ্ধি !

Deer-1হরিণের মাংসের মূল্য বৃদ্ধি, কি অবাক হচ্ছেন ! যেখানে হরিণ শিকার বা বিক্রিই নিশিদ্ধ সেখানে হরিণের মাংসের মূলবৃদ্ধি। তবে বলে রাখি এ কিন্তু সুন্দরবনের মায়াবী চিত্রল হরিণ!
৩শ’-৪শ’ টাকায় হরিণের মাংস ! শিরনামে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট ইনফো ডটকমে প্রকাশিত সংবাদেরটির কথা নিশ্চই মনে আছে। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় রমরমা হরিণ ব্যবসার খবরের পাশাপাশি তখন জানিয়ে ছিলাম মাত্র ৩/৪শ’ টাকা কেজি দরে হরিণের মাংস বিক্রির কথা।

এখন দাম বেড়েছে। ৬ মাসের ব্যাবধানে কিছুটা চুপিসারে আর চেইন (নেটয়ার্ক) রক্ষা করে বর্তমানে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা কেজিতে মিলছে হরিণের মাংস।

Deer-in-Bangladesh1বাগেরহাট ইনফোর অনুসন্ধানে জানা যায়, পেশাদার হরিণ শিকারিদের আছে বিশেষ সিন্ডিকেট এবং এদের সাথে থাকে এজেন্ট ব্যবসায়ীরা। আর অবাক করার মতন তথ্য হল সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় পেশাদার ব্যাবসায়ীরা শিকারিদের প্রদান করেণ অগ্রীম দাদান (টাকা)। যার বিনিময়ে শিকারিরা চাহিদা অনুয়াই সর্বাহ করেণ হরিনের মাংস।

এসব সংঘবদ্ধ শিকারি এবং ব্যবসায়ি চক্রের লোকালয়ে রয়েছে নির্দিষ্ট এজেন্ট। এসব এজেন্টের মাধ্যমে কখনও অগ্রীম অর্ডার আবার কখনও মাংশ লোকালয় এনে তার পর বিক্রি করা হয়।

ক্ষেত্র বিশেষে টাকা বেশী হলে এজেন্টরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে এ মাংস পৌঁছে দিয়ে আসে।

তবে চাহিদা আর যোগান বিধির সম্পার্কের সাথে সাথে যেভাবে দাম বেড়েছে হরিণের মাংসের এই সাথে এই হরিণের মাংসের সাথে আবার কখনও বা হরিণ বলে ভেড়া, শুকর এবং কুকুরের মাংস দেবার অভিযোগও আছে।

সূত্র মতে, মূলত মাংস, চামড়া ও শিং এর ব্যাপক চাহিদার কারণেই পেশাদার শিকারীরা হরিণ নিধনে মেতে ওঠে। এ ছাড়া এক শ্রেনীর ধর্নাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নিতান্তই সখের বশে হরিণ শিকার করে থাকেন। তবে বর্তমানে নানা বিধ তৎপাতার কারণে সাধারণ ভাবে বনে গিয়ে হরিণ শিকার কমেছে। তবে সুন্দরবনে ৩/৪ রাত অবস্থান করা পিকনিকের লঞ্চ গুলো থেকে হরিণ শিকারের চেষ্টা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে শিকার কারা হয়।

এছাড়া, উচ্চ পদস্থ্য কর্মকর্তাদের খুশী করতে ও তদ্বির হিসেবে হরিণের মাংস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এসব কারণেই প্রধানত লোকালয়ের অনেক লোকই হরিণ শিকারকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।

অপর আর একটি অসমর্থীত সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় সুন্দরবনে ভ্রমনে যাওয়া প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের খুশি রাখতে তাদেরকে হরিণের মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

Deer 3নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার এক হরিণের মাংস বিক্রেতা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তারা সাধারণত বনের বেশি গভীর থেকে হরিণ শিকার করে না। ৪ থেকে ৫/৬ জন করে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে করা হয় হরিণ শিকার।

আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফাঁদ, বর্শি এবং বিষ টোপ ব্যবাহার করা হয় শিকারের জন্য। আর শিকার কারা হরিণ জীবিত এবং মৃত উভয় অবস্থায় আনা হয় লোকালয়।

পেশাদার ওই হরিণ শিকারি এই প্রতিবেদককে বলেন, জীবিত অবস্থায় সুন্দরবন থেকে হরিণ নিয়ে আসা এখন বেশি ঝুকি পূর্ণ হওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্র জবাই এর পর চামড়া ছাড়িয়ে শুধু মাংস আনা হয়। আর চামড়া ও শিং সম্ভব হলে পরে ভিন্ন ভাবে অথবা মাটি চাপা দিয়ে আসা হয়।

আর জীবত অবস্থায় হরিণের পা ও মুখ বেধে আনা হয় বিভিন্ন কাঠ, গোল পাতা এবং মাছের নৌকার ও ট্রলারে চালা/ চরাটের ফাঁপা স্থানে করে।

অপর আর এক চোরা শিকারি জানানয়, মুলত শুক মেীসুম এবং বিভিন্ন উৎসব কেন্দ্র করে বাড়ে হরিণের চাহিদা। আর শুকন মৌসুমে বিশেষ করে মাঘ থেকে বৈশাখ মাসে হরিণ বেশি ধরা পড়ে।

এই দুই শিকারিই বাগেরহাট ইনফোর কাছে হরিণের মাংসের দাম বৃদ্ধির পেছনে চাহিদার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় মাংসের ভাগ এবং উৎকচ প্রদানের বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করেছেন।

অপরদিকে এসব শিকারিরা ছাড়াও চাহিদা থাকায় বিভিন্ন সময় জেলেরা সুন্দরবনের গহীন থেকে শিকার করে হরিণ। অনেক ক্ষেত্রে কোন কোন সময় জেলেরা এসব হরিণের মাংস লোকালয়ে আনা পর্যন্ত ভাল রাখার জন্য সিদ্ধ করে এনে বিক্রকরে।

Bagerhat-Pic-1(01-04-14)বন সংলগ্ন এলাকার লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হরিণ শিকারি এবং বিক্রি চক্রের সাথে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং বন কর্মকর্তাদের সু-সম্পার্ক। বেশির ভাগ ক্ষেতেই তাদের ম্যানেজ করে হয় এ অবৈধ ব্যবসা। তার বিভিন্ন সময় হরিণের মাংস সংগ্রহ করে এসব চোরা শিকারি এবং বিক্রেতাদের কাছ থেকে।

আর মাঝে মধ্যে যে দু’ একটি হরিণ বা হরিণের মাংস উদ্ধারের ঘটনা ঘটে তা কেবল মাত্র লোক দেখানো। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার প্রশাসন বা বন বিভাগের সাথে বনিবনা না হওয়াতে আটক করা হলেও অধিক অংশ সময় ধারা পড়ে না হরিণ শিকার ও বিক্রীর সাথে জড়িত এ চক্র।

সংশ্লিষ্ট সুত্র গুলোর সাথে কথা বলে জানান যায়, আগের চেয়ে একটু চুপি সারে হলেও এখনো পূর্ব সুন্দরবনের সংলগ বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার চেয়ারম্যেন মোড়, ভাড়া, ফয়লা বাজার, বড় কাঠালি (পেড়িখালি), ডাকরা, মংলা উপজেলার জয়মনী, চিলা, বাঁশতলা, বৌদ্ধমারী, বাণীশান্তা, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ঝিউধরা, গুলিশাখালী, সন্ন্যাসী, শরণখোল উপজেলার আমড়াতলা, ধানসাগর, তাফালবাড়ী, চালিতাবুনিয়া, বগি, খুলনার দাকোপের ঢাংমারী, খাজুরা প্রভৃতি এলাকায় সুযোগ বুঝে শিকারিরা হরিণের মাংস বিক্রি করে থাকে।

জেলা শহর এবং পার্শবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব স্থানে হরিণের মাংস ক্রয়ের জন্যও আসেন অনেকে ক্রেতা।

সাম্প্রতিক সময়ে হরিণ শিকার বৃদ্ধির ব্যাপারে জানতে চাইলে মোংলাস্থ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা বিভাগের মিডিয়া কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার রায় বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, হরিণ শিকার ও পাচার রোধে তারা সব সময় সতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা অভিজান চালিয় হরিণ, হরিণের মাংশ এবং চামড়া উদ্ধার করছে।

বাগেরহাটের শরণখোলায় জবাইয়ের পর উদ্ধার করা চিত্রল হরিণ
বাগেরহাটের শরণখোলায় জবাইয়ের পর উদ্ধার করা চিত্রল হরিণ

তিনি বলেন শুধু হরিণ হয় বনে যেকোন ধরণের বন্য প্রাণী শিকার এবং বনজ সম্পদ নিধন প্রতিরোধে সব সময় তৎপর কোস্টগার্ড। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি এক্ষেতে ইনফরমেশন পাওমাত্রই তারা অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় তিনি উল্লেখ করেন, গত ৫ এপ্রিল হরিণের চামড়া পাচার হচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে ৪টি হরিণের চামড়া উদ্ধার করে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন।

সুন্দরবনে সদ্যুতা দমন ও জেলেদের নিরাপত্তার পাশাপাশি বন্য প্রণী এবং বনজ সম্পদ পাচার প্রতিরোধ এবং এর সাথে জড়িতদের ধরতে কোস্টগার্ড সর্বদা বনবিভাগের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে বলেও জনান কোস্টগার্ডের ওই কর্মকর্তা।

এব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমির হোসেন চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, হরিণ শিকার, পাচার ও বিক্রি প্রতিরোধে বন বিভাগ বনজীবি ও স্থানীয়দের সাথে সমন্বয় করে কাছ করে যাচ্ছে। এক্ষেতে স্থানীয় জন প্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করে তাদের সহযোগিতা নিচ্ছেন তারা।

বর্তমান সময়ে সুন্দরবনে হরিণ শিকারি বৃদ্ধি পেয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বনবিভাগ কর্তিক মনিটরিং বৃদ্ধি ও স্থানীয়দের স্বচেতন করার ফলে আগের চেয়ে হরিণ শিকার কমে এসছে। তবে এখনও বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু চোরা শিকারি হরিণ পাচার ও মাংস বিক্রির চেষ্টা করলেও বন বিভাগ গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে।

তিনি বলেন, সুন্দরবনের উপর নির্ভলশীল ও বন সংলগ্ন জনগোষ্ঠির মাঝে স্বচেতনার অভাব এবং চাহিদা ও কিছু কিছু চোরা শিকারির কারণে হরিণ শিকার ও হরিণের মাংস বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি এঅঞ্চলের মানুষের মাঝে হরিণের মাংস, চামড়া উপহার হিসাবে প্রদানের আসক্তির কথা বলেন তিনি।

Deerবন্যপ্রাণী ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষায় এসময় তিনি স্বচেতনা বৃদ্ধি এবং উদ্ভুদ্ধকরণের উপর জোর দিয়ে বলেন, শুধু মাত্র আইন দিয়ে বা জোর করে বনজ সম্পদ পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই দরকার সকালকে এক সাথে কাজ কারা। যার জন্য বনবিভাগের পাশাপাশি সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা অনান্য সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হরিণ শিকার ও হরিণের মাংস বিক্রির ব্যাপারে সাধারনে মাঝে বন কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাগেরহাট ইনফোকে তিনি বলেন, বনবিভাগের কোন কর্মকর্তা-কর্মচরি এধরণের কোন প্রকার অবৈধ কাজের সাথে জড়িত থাকার প্রমান পেলে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবেনা। প্রায় দেড় বছর আগে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে দুই বন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত এবং বিভাগিয় ব্যাবস্থা গ্রহনের কথা জানান তিনি।

এসময় হরিণসহ যেকোন ধরণের বন্য প্রণী পাচার প্রতিরোধ এবং বনজ সম্পদ রক্ষায় সকালের সহযোগিতার পাশাপাশি এধরণের কোন তথ্য বা অভিযোগ থাকলে বনবিভাগকে জানানোর জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

১৩ এপ্রিল ২০১৪ :: সরদার ইনজামামুল হক,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।

About Inzamamul Haque