বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রীজ এর আয়োজনে জেলা স্টেডিয়ামে চলছে মাসব্যাপী শিল্প ও বানিজ্য মেলা। রবিবার (৩০ মার্চ) রাতে মেলার উদ্বোধন হলও এখন পর্যন্ত পন্যের দোকান (স্টল) নেই বললে চলে।
শুক্রবার রাতে সরেজমিন ঘুরে মাত্র ৩টি স্টল ছাড়া আর কোন দোকান দেখা যায়নি পুর মেলা চত্বরে। অথচ এখানে দুপুর থেকে রাত অবদি চলছে চরকার নামে জুয়া, র্যাফেল ড্র এবং সার্কাস ও যাত্রার নামে নগ্ন নৃত্য।
দেশব্যাপী উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার মাঝে এমন আয়োজন আর উচ্চ শব্দে মাইকের ব্যবহারে ব্যহত হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের প্রস্ততি।
পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়া এবং প্রস্তুতির বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে, জেলা প্রশাসন এ মেলা অনুষ্ঠানের এমন অনুমতি প্রদান করায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ। এছাড়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমতি ছাড়াই ষ্টেডিয়াম মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয়ায়, বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
কয়েকটি চানাচুর ভাজা, চটপটি-ফুসকা, চায়ের দোকান আর দু একটি জুতা-স্যান্ডেল ও কাপড়ের দোকন ছাড়া অন্য কোন দোকান বা স্টল না থাকলেও এ মেলার নাম বাগেরহাট শিল্প ও বানিজ্য মেলা।
তবে শিল্প ও বানিজ্য মেলার আবহে স্টল না থাকলেও এখানে দেদারছে অসামাজিক কাজ চলার অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতক্ষ্যদর্শী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, শুধুমাত্র দু’রাতে যাত্রার প্যান্ডেলে ৩০ থেকে ৪০ লিটার মদ বিক্রি হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে এসকল কার্মকান্ড পরিচালিত হলেও সকলে রয়েছে ধরা-ছোয়ার বাইলে।
যদিও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি শাহজাহান মীনা উদ্বোধনী বক্তৃতায় দাবী করেছিলেন দুই চার দিনের মধ্যেই নাকি স্টেডিয়াম পন্যের স্টলে ভরে উঠবে। অনুষ্ঠানে অপর অতিথি পৌর মেয়র ও জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান হাবিবুর রহমান বক্তব্য দিতে গিয়ে আয়োজক কমিটির এবার মেলায় পুতুল নাচের নামে জ্যান্ত পুতুল নাচ না হয়, সেজন্য আয়োজকদের সর্তক থাকার দাবী করেছিলেন।
গত বছরও এই একই মাঠে চেম্বার অব কর্মাসের আয়োজনে শিল্প ও বানিজ্য মেলার নামে স্রেফ জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য পরিচালিত হয়েছিল। যা ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। এ অবস্থার পর ও সেই চেম্বার অব কর্মাস শিল্প ও বানিজ্য মেলার আয়োজন করেছে যেখানে শুরুতেই নেই শিল্প বানিজ্যের লেশমাত্র।
অপরদিকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বিশেষ বরাদ্বে বাগেরহাট স্টেডিয়াম প্যাভেলিয়ন, গ্যালারী নির্মান ও মাঠ উন্নয়নের জন্য ১০ কোটি টাকার প্রকল্প কাজ অব্যহত রয়েছে। যার কারণে স্টেডিয়ামের উন্নয়ন যাতে কাজ বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য স্টেডিয়ামের পরিবর্তে খানজাহান আলী কলেজ বা অন্য মাঠে প্রয়োজনে খেলা পরিচালিত হয়ে আসছিলো। তবে, চলমান উন্নয়ন কাজে বিঘ্নতা সৃষ্টি ও বিলম্বিত করে চলছে এ মেলার আয়োজন।
এ অবস্থার মধ্যে গতবছরের বানিজ্য মেলার কু-কৃতির কথা জেনেও ১০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ ভিতর কিভাবে জেলা ক্রীড়া সংস্থা এ মেলার আয়োজনের জন্য স্টেডিয়াম মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিলেন তা নিয়ে ক্লাব কর্মকর্তা ও সাধারন সদস্যরা হতবাগ হয়েছেন। ক্লাব কর্মকর্তারা বর্তমান ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী কমিটির কয়েক কর্মকর্তার এসকল কর্মকান্ডের বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
অপরদিকে মেলার মাঠে পুলিশ প্রহরায় থাকলেও চলছে জুয়ার আসর। পুলিশ ও প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে এই ধরনের কর্মকান্ড চলছে বলে মেলার আয়োজকদের একটি পক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান।
এ সকল ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মু. শুকুর আলী বাগেরহাট ইনফোকে জানান, মেলার নামে কোন আশ্লীল নৃত্য ও জুয়া সম্পূর্ন রুপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদি এ ধরনের কোন কর্মকান্ড পরিচালিত হয় তা হলে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ক্রীড়া সংস্থার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই এ মেলা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর আয়োজক সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে মেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
ষ্টেডিয়ামের উন্নয়ন কাজ প্রসংগে তিনি বলেন, আভ্যন্তরীন কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাইরে শেষ মূহুর্তের কাজ চলছে। এতে উন্নয়ন কাজে বিঘ্নতার কোন কারণ নেই।
উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাতের প্রশ্নে তিনি বলেন, উচ্চ শব্দে মাইক ব্যবহারে সতর্ক থাকার জন্য আয়োজক সংস্থাকে অনুরোধ জানানো হবে।
এ বিষয় ষ্টেডিয়ামের উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স পদ্মা বিল্ডার্সের সত্বাধিকারী আব্দুস সালাম খাঁন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে গত এক বছরে আমরা মাত্র ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। বাকী কাজ জুন মাসের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে কাজ চলছে।
শেষ মূহুর্তে ষ্টেডিয়াম অভ্যন্তরে কোন মেলার আয়োজন করা হলে, তা চলমান উন্নয়ন কাজে বাঁধার সৃষ্টি করবে; বিলম্বিত হবে সামগ্রিক কাজ শেষ হবার প্রক্রিয়া।
এ ব্যাপারে মোবাইলে আলাপ কালে ক্রীড়া পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী মো: আওলাদ হোসেন বাগেরহাট ইনফোকে জানান, উন্নয়ন কাজ চলাকালীন ঐ স্থানে কোন মেলা বা লোক সমাগমের আয়োজন করা নিয়ম বহির্ভূত। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পূর্বানুমতি ছাড়া কোন ভাবেই এ ধরনের মেলার আয়োজন গোটা নিয়ম-বিধির ব্যার্তয় ঘটাবে।
তবে, ক্রীড়া পরিষদ কোন অনুমতি দিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জাবাবে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন নি।
রবিবার রাতে জেলা এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাগেরহাট-৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মু.শুকুর আলী, ক্রীড়াবিদ ও বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খাঁন হাবিবুর রহমান, সদর উপজেলার পুন: নির্বাচিত চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান খাঁনসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন কালে মেলাঙ্গনে কোন ষ্টল বা দোকান-পাট দেখা যায় নি। তবে রাতে রাজমহল অপেরা পার্টি যাত্রা পালা মঞ্চস্থ করেছে। এ ছাড়া, মেলায় এসেছে কাঞ্চন সার্কাস পার্টির বিরাটকায় হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভাল্লুক,বানরসহ নানা জাতের জীব-জন্তু। শহর ও বিভিন্ন এলাকায় মেলার ব্যাপক প্রচারের লক্ষ্যে চলছে মাইকিং।