বলেশ্বর নদের ভাঙন থেকে রক্ষা করা হলো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের কবরটি।
বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামের বাড়ির ভাঙন কবলিত পারিবারিক কবরস্থান থেকে তার দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়। পরে বিকেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজারে অবস্থিত শহীদ মিনার চত্ত্বরে দাফন করা হয়।
এর আগে উপজেলা সদরের রায়েন্দা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সামজিক সংগঠন ফুল দিয়ে শহীদ আনোয়ারের কফিনে শ্রদ্ধা জানান।
আনোয়ার হোসেনের সহযোদ্ধা সুবেদার (অবঃ) আঃ আজিজ, ফুল মিয়া, ইউসুফ আলী শিকাদার, শেখ সামসুর রহমান ও আবু জাফর জব্বার জানান, শহীদ আনোয়ার হোসেন উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামের মৃত আলেফ খানের ছেলে। ১৯৭১ সালে সেনাবাহিনীর ক্যাডেট অফিসার থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে নিজ এলাকায় চলে আসেন এবং স্থানীয়দের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দল গঠণ করে সুন্দরবনে ক্যাম্প স্থাপন করেন।
তারা জানান, ১৯৭১ সালের ১২ জুন রাজাকার বাহিনী শরণখোলা থানা ভবনে ক্যাম্প স্থাপন করে এলাকায় হত্যা, লুঠ, ধর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের প্রতিহত করার প্রস্তুতি নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ১১ জুলাই আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শরণখোলা থানা ভবনের ঐ রাজাকার ক্যাম্প আক্রমন করে।
এখানে ঐ দিন সম্মুখযুদ্ধে ক্যাডেট অফিসার আনোয়ার হোসেন, বিমান বাহিনীর সদস্য ইসমাইল হোসেন ও আসমত আলী নামে তিন জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তবে রাজাকারদের শক্ত প্রতিরোধের মুখে আনোয়ারের সহযোদ্ধারা শুধুমাত্র আনোয়ার হোসেনের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ঐ দিন রাতেই আনোয়ার হোসেনের লাশ তার গ্রামের বাড়ি উত্তর সাউথখালীতে দাফন করা হয়।
শহীদ আনোয়ার হোসেনের ভাই মুক্তিযোদ্ধ হেমায়েত উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তার ভাইয়ের কবরটি বলেশ্বর নদের ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হতে যাচ্ছিলো। এই অবস্থায় কবরটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদও একই অনুরোধ করেছিলো। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম মামুন উজ্জামান বৃহস্পতিবার কবরটি স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন।
এব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম মামুন উজ্জামান জানান, শহীদ এনায়ারের পরিবারের আবেদন ও মুক্তিযোদ্ধাদের দাবীর প্রেক্ষিতে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও ধর্মীয় রীতি অনুসরন করে শহীদ আনোয়ার হোসেনের দেহবশেষ উপজেলা সদরে শহীদ মিনার চত্বরে আন্যান্য শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এমন একজন বীরের কবর রক্ষা করতে পেরে আমি গর্বিত।