২৬ বছর আগে নিলাম ডেকে বিক্রী করা ২ একর ৪২ শতক জমি নিয়ে বিপাকে পড়েছে দুর্নীতি’র আখড়া হিসাবে আলোচিত বাগেরহাট ভূমি অফিস।
অর্পিত সম্পত্তির সরকারী গেজেট (২০১২ সালে) প্রকাশিত হলে সম্প্রতি এই জালিয়াতি ধরা পড়ে।
অভিযোগ উঠেছে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে বাগেরহাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিলাম ক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে নিলাম রদের মামলা করেছেন। এদিকে ওই মামলা চ্যালেঞ্জ করে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন নিলাম ক্রয়কারীরা।
ট্রাইব্যুনালে দায়ের কৃত আর্জি থেকে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে এই জমির মালিক ছিলেন জনৈক অবরেন্দ্রনাথ ও মনিলাল দিং সরকারী খাজনা পরিশোধে অপারগ হলে বাগেরহাট সদর ভূমি অফিস ডিক্রী জারি করে এই জমির বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করে এবং জমি নিলামে তোলে। এর পর কুশরাইল গ্রামের মৃত হেমায়েত উদ্দিন শেখের স্ত্রী সালেহা বেগম, ছেলে কামরুজ্জামান ও একই গ্রামের জনৈক আব্দুস সালামের ছেলে আছাদুজ্জামান উক্ত সম্পত্তি নিলামে ক্রয় করেন।
পরবর্তীতে সার্টিফিকেট আদালত তাদের জমির দখল বুঝে দেয়। এর পর থেকে ওই ক্রেতাগন প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জমি ভোগ দখল করে আসছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকৃতপক্ষে ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি। জমির মালিক অবরেন্দ্রনাথ ও মনিলাল দিং এর কোন ওয়ারেশ কুরশাইল গ্রামে বসবাস করেন না। বাগেরহাট সদর ভূমি অফিসের একটি অসাধু চক্র নিলাম ক্রয়কারীদের সাথে পরস্পর যোগসাযসে ১৯৮৭ সালে জাল কাগজ তৈরী করে নিলাম বিক্রীর মাধ্যমে অবৈধভাবে লাভবান হয়েছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশির দশকে বাগেরহাট উপজেলা ভূমি অফিসে চাকুরী করেছেন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী জানান, ওই সময় এ ধরণের অনেক ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত করলে তা বের হয়ে আসবে।
এদিকে, ২০১২ সালের মে মাসে প্রকাশিত অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক সরকারী গেজেটের ৩৪ হাজার ৩২০ পৃষ্ঠায় বাগেরহাট সদর উপজেলার আড়পাড়া কুরশাইল মৌজায় ৩ টি পৃথক ভিপি মামলায় বিবাদীদের মধ্যে অমরেন্দ্রনাথ নামে এক ব্যক্তি ও মনিলাল নামে পৃথক দুই ব্যক্তির নাম উল্লেখ আছে। গেজেট অনুযায়ী তাদের পিতার নাম যথাক্রমে দীনবন্ধু, কামিনিকান্ত ও জামিনি। তাদের বর্তমান ঠিকানা ভারত। এই তিনটি মামলায় মোট অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ ৩ একর ৭৫ শতাংশ উল্লেখ রয়েছে।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে নিলাম খরিদকারী সালেহা বেগম ও কামরুজ্জামানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় জেনে অপর প্রান্ত থেকে এক পুরুষ নিজেকে সালেহা পরিবারের আত্মীয় দাবি করে বলেন,‘আপনার কথা তাদের বলবো। এ বিষয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। আমরা যা বলার আদালতের সামনে বলতে চাই।’
এবিষয়ে বাগেরহাট আদালতের সরকারী ভিপি কৌশলী সরদার ইলিয়াস হোসেন জানান, নালিশী জমি নিয়ে যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তবে তা দুই পক্ষের যোগসাযোসে ঘটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি আদালতে বিচার্য। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ এ্যাক্ট কার্যকর হওয়ায় এই আইনের ১৩ নং ধারা অনুযায়ী পিডিআর এ্যাক্টে বিষয়টি নিষ্পত্তির সুযোগ নেই।
বিষয়টি নিয়ে বর্তমান বাগেরহাট সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: আরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, ২০১২ সালে প্রকাশিত অর্পিত সম্পত্তির গেজেটের সূত্র ধরে জালিয়াতির বিষয়টি সম্প্রতি আমাদের গোচরে আসে। এই ব্যক্তিরা সদর সার্টিফিকেট আদালতের তৎকালীন পেশকার ও স্থানীয় তহশীলদারের সাথে যোগসাযোশে এই তঞ্চকতা করেছিলেন। সরকারী স্বার্থে নিলাম রদ ও রহিত করতে পিডিআর এ্যাক্টের ২৩(২) ধারা মতে ওই ৩ নিলাম ক্রেতার বিরুদ্ধে ৩টি মিস কেস (মামলা) দায়ের করে নিলামের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি জানান, পিডিআর এ্যাক্ট ১৯১৩ একটি স্বতন্ত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের সাথে তা সাংঘর্ষিক না। নিলাম ক্রয়কারীরা ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। ওই মামলা চলাকালে এই ৩টি মিস মোকদ্দমার কার্যক্রম চালাতে কোন বাধা নেই। তবে এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালই উপযুক্ত আদেশ দেবেন।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।