মুঠোফোনের ইতিহাস:
প্রায় চার দশক আগে প্রথম মোবাইল ফোন সেট নামক যন্ত্রতি মানুষের হাতে এসেছিল। সেটি ছিল মটোরোলার গবেষক মার্টিন কুপারের আবিষ্কৃত ডায়না টিএসি। কুপার সেই মোবাইল ফোন দিয়ে প্রথম কথা বলেছিলেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বেল ল্যাবসের গবেষক জোয়েল এনজেলের সঙ্গে। মোবাইল ফোন সেট তৈরির জন্য তখন আলাদাভাবে কাজ করছিলেন মটোরোলার গবেষক মার্টিন কুপার ও বেল ল্যাবসের জোয়েল এনজেল। তবে কুপারই শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হেসেছিলেন।
মটোরোলা কোম্পানিতে কাজ করতেন মার্টিন কুপার। ওই সময় মটোরোলা কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন প্রযুক্তিবিদ জন মিশেল। তিনি কুপারের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, “বিশ্বের প্রথম মুঠোফোন তৈরি করবে মটোরোলা আর আবিষ্কারক হবেন কুপার”। কুপার সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে জয়ী হয়ে গর্বিত করেছিলেন জন মিশেল ও তাঁর প্রতিষ্ঠান মটোরোলাকে।
বিশ্বের প্রথম মুঠোফোন:
মার্টিন কুপার ডায়না টিএসি তৈরিতে সফল হন ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল। বর্তমান সময়ের হালকা-পাতলা স্মার্টফোনের মতো ছিল না সেটি।
সোয়া এক কেজি ওজনের সেই সেলুলার ফোনটি লম্বায় ছিল ১০ ইঞ্চি। একবার ব্যাটারি চার্জ হলে ২০ মিনিট কথা বলা যেত। আর ব্যাটারি চার্জ করতেও লাগত অনেক সময়। এক সময় এর পরিচিতি দাঁড়ায় ব্রিক ফোন বা ইট আদলের ফোন।
বিশ্বের প্রথম মুঠোফোন আলাপন: নিউইয়র্ক সিটির সিক্সথ অ্যাভিনিউয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রথমবারের মতো সেলুলার নেটওয়ার্কে ফোনকল করেন কুপার। টেলিফোনে বিশ্বের প্রথম ফোনকল গ্রহণ করেছিলেন বেল ল্যাবসের প্রধান গবেষক জোয়েল এনজেল। সেসময় সেলুলার নেটওয়ার্কে স্থানান্তরযোগ্য মুঠোফোন তৈরিতে কাজ করছিলেন জোয়েল এনজেলও। জোয়েলের অফিসে সরাসরি ফোনকল করার এ ঘটনাটিই বিশ্বের প্রথম ফোন আলাপ।
প্রথম মুঠোফোন বাজারজাত: এ ঘটনার প্রায় ১০ বছর পর প্রথমবারের মতো বাজারে আসে মটোরোলার তৈরি ডায়না টিএসি। এ মুঠোফোনটিতে বড় বড় ২০টি বাটন ছিল, বিশাল একটি রাবারের অ্যানটেনা ছিল। তখন একবার চার্জ হওয়ার পর কিছুক্ষণ কথা বলেই আবারও ১০ ঘণ্টা চার্জ দিতে হতো।
এখন হয়তো মুঠোফোন, স্মার্টফোনের দাম হাতের নাগালেই অনেকেরই। তবে সেদিন প্রথমবারের মতো সেলুলার ফোন কেনার খরচ কম ছিল না। ডায়না টিএসির দাম ছিল ৪০০০ ডলার। এত দাম সত্ত্বেও এ মুঠোফোন দ্য ব্রিক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সে সময়। আর এ ফোনের জনপ্রিয়তার ফলেই সেলুলার যুগের সূচনা ঘটে।
একনজরে বিশ্বের প্রথম মুঠোফোন:
মুঠোফোনের নাম : ডায়না টিএসি, যা পরে ব্রিক নামে পরিচিতি পায়
উদ্ভাবক: মার্টিন কুপার
নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান: মটোরোলা
উদ্ভাবনের সময়: ৩ এপ্রিল, ১৯৭৩
বাজারে আসে: ১৯৮৪ সালে
দাম: প্রায় চার হাজার ডলার
ওজন: ১.১৫ কেজি
চার্জ : ১০ ঘণ্টা
টকটাইম: ২০ মিনিট
2G প্রযুক্তির সূচনা: ১৯৯১ সাল থেকে দ্বিতীয় প্রজন্ম বা টুজি প্রযুক্তির সূচনা ঘটে। ফিনল্যান্ডের রেডিওলিনিয়া এ প্রযুক্তির সূচনা করে। ‘সো দ্যাট ফিনস ক্যান টক মোর’ স্লোগানে বাজারে আসে টুজি প্রযুক্তি।
3G প্রযুক্তির সূচনা: টুজির প্রায় এক দশক পর অর্থাৎ ২০০১ সালে বাজারে আসে থ্রিজি প্রযুক্তি। ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাড়তেই থাকে থ্রিজির চাহিদা।
4G প্রযুক্তি: আর বর্তমানে উন্নত মাল্টিমিডিয়া অ্যাপ্লিকেশনস্ আর দ্রুতগতির ইন্টারনেট সম্ভাবনা নিয়ে চালু হয়েছে ফোরজি প্রযুক্তি। গবেষণা চলছে ফাইভজি বা পঞ্চম প্রজন্ম নিয়েও।
মুঠোফোনে ব্যবহার বৃদ্ধি হার:
২০০৮ সাল পর্যন্ত ধরা হতো যে বিশ্বের প্রতি দুজন মানুষের মধ্যে একজন মুঠোফোন ব্যবহার করে। ১৯৯০ সালে যেখানে বিশ্বে মুঠোফোন ব্যবহারকারী ছিল এক কোটির মতো, ২০১১ সালে সে সংখ্যা ৬০০ কোটি। ২০১২ সালে ব্যবহারকারী এ সংখ্যা ৭০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়।
উদ্ভাবনের পর থেকে ক্রমেই পাল্টেছে মুঠোফোনের ধরন। এক সময় যা ছিল ইটের মতো মোটাসোটা, এখন তা ধুবই হালকা-পাতলা হয়েগেছে।
তাই মুঠোফোন এখন সাধারণ কথা বলার মুঠোফোন থেকে উন্নত হয়েছে স্মার্টফোন হিসেবে। একসময় যা ছিল দামি আর ব্যবসার উপকরণ, তা এখন পরিণত হয়েছে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা হিসাব করে দেখেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছে আজকের মুঠোফোন।
সূত্র: স্যালফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও পিসি সেলফ।