নাক ডাকা… শুনতে যতই হাস্যকর হোক, অনেকেই এই সমস্যার ভুক্তভোগী। যিনি নাক ডাকেন সে নিজে টের না পেলেও তার সঙ্গীর ঘুম হারাম হয়ে যায়।
তবে ব্যাপারটা আসলে এক রকমের শারীরিক সমস্যা। অতিরিক্ত নাক ডাকার পেছনে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ আছে। আছে নাক ডাকা সমস্যার সমাধানও। আর তাই নাক ডাকা সমস্যাটিকে অবহেলা না করে আসুন জেনে নেই কেন মানুষ নাক ডাকে এবং কিভাবে তা কমানো সম্ভব।
নাক ডাকার কারণসমূহ-
বয়সঃ
মধ্য বয়সে পৌছানোর পর কন্ঠনালী সংকীর্ণ হয়ে আসে। এর ফলে নাক ডাকার প্রবণতা বাড়ে।
পুরুষের কন্ঠনালী নারীর চাইতে অপেক্ষাকৃত সরু। তাই নারীদের নাক ডাকার সম্ভাবনা পুরুষের তুলনায় কিছুটা কম।
ন্যাসাল ও সাইনাসের সমস্যাঃ
সাইনাস ও ন্যাসাল সমস্যার জন্য নাক বন্ধ থাকলে নিঃশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে নাক ডাকার প্রবণতা বাড়ে।
ওজনাধিক্যঃ
ওজন বেড়ে গেলে ফ্যাটি টিস্যুর কারণে নাক ডাকা বেড়ে যেতে পারে।
অ্যালকোহল, ধুমপান ও মেডিকেশনস্ঃ
অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধুমপানের কারণে নাক ডাকা বেড়ে যায়। অনেক সময় কিছু কিছু অষুধের কারণে মাসল্ সিথিল হয়ে নাক ডাকার প্রবণতা বাড়ে।
একটু চেষ্টা করলে আপনি নিজেই নিজের নাক ডাকার প্রবণতা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারেন। আপনার দরকার শুধু ধৈর্য্য ও চেষ্টা। ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি আপনার নাক ডাকা সমস্যা কমিয়ে ফেলতে পারেন সহজেই।
নাক ডাকা বন্ধে করণীয়-
ওজন কমান- সামান্য ওজনহ্রাসেও আপনার নাক ডাকা অনেকখানি কমে যেতে পারে। এমনকি ফ্যাটি টিস্যু কমে যাওয়ার কারণে নাক ডাকা বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
ব্যায়াম- ব্যায়াম শরীরকে কর্মচঞ্চল রাখে, মাসল গুলোকে টোন করে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে গলার মাসল গুলোরও টোনিং হয়। ফলে নাক ডাকার প্রবণতা কমে।
ধূমপান বন্ধ করুন- ধূমপায়ীদের নাক ডাকার সম্ভাবনা অধূমপায়ীদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই ধুমপান বন্ধ করলে নাক ডাকা কমে যাবে অনেকটাই।
অ্যালকোহল ও ঘুমের অষুধ ত্যাগ করুন- ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘুমের অষুধ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। ঘুমের অষুধ গলার মাসল গুলোকে রিল্যাক্স করে ও নাক ডাকা বাড়িয়ে দেয়।
নিয়মিত ঘুম- প্রতিদিন একটি নির্ধারিত সময়ে ঘুমাবেন। কমপক্ষে সাত-আট ঘন্টা ঘুমাবেন। নিয়মিত একই সময়ে ঘুমানোর অভ্যাসে নাক ডাকার প্রবণতা কিছুটা কমে আসে।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে করণীয়-
ন্যাসাল প্যাসেজ ক্লিয়ার রাখুন- নাক বন্ধ থাকলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয় এবং গলায় একটি বায়ুশূন্য স্থানের সৃষ্টি হয়। এই বায়ুশূন্য স্থানের কারণে নাক ডাকার সমস্যা তৈরী হয়। তাই ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে নাক বন্ধ থাকলে ড্রপ দিয়ে হলেও নাক পরিস্কার করে ঘুমানো উচিত।
মাথার পজিশন- ঘুমানোর সময় বিছানা থেকে মাথা ৪ ইঞ্চি উপরে থাকলে শ্বাস নিতে সুবিধা হয় ও নাক ডাকার সম্ভাবনা কমে যায়।
ভারী খাবার ও ক্যাফেইন না খাওয়া- ঘুমানোর অন্তত দুই ঘন্টা আগে খাওয়া-দাওয়া সেরে নেয়া উচি। ঘুমানোর পূর্বে চা-কফি বা কোন ভারী খাবার খাওয়া উচিত না।
পাশ ফিরে শোয়ার অভ্যাস করুন- সোজা হয়ে পিঠের উপর ভর করে ঘুমালে নাক ডাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই পাশ ফিরে ঘুমানোর অভ্যাস করার চেষ্টা করুন।
কখন ডাক্তার দেখানো উচিত?
অনেকেই বুঝতে পারেনা যে তার নাক ডাকা একটি ভয়াবহ রোগে পরিণত হয়েছে। নাক ডাকার সমস্যা অনেক বেশি বেড়ে গেলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হওয়া উচিত।
- -ঘুমানোর সময় অনেক জোরে জ়োরে নাক ডাকা ও সারাদিন ক্লান্তি লাগা।
- -ঘুমের মধ্যে হাপানো, শ্বাসকষ্ট হওয়া বা দম আটকে যাওয়া।
- -সারা রাত নাক ডাকা ও দিনের বেলা অসময়ে ঘুমিয়ে পরা যেমন খাওয়ার সময় বা কথা-বার্তা বলতে বলতে ঝিমিয়ে যাওয়া।
এধরণের সমস্যাগুলোর সাথে আপনার মিল থাকলে দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। নাক ডাকা আপাতদৃষ্টিতে তেমন বড় কোন সমস্যা মনে না হলেও ব্যক্তি ও কর্মজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পরে। নাক ডাকার কারণে দাম্পত্য জীবনে নানান রকম অশান্তির ঘটনাও অহরহ ঘটে।
নাক ডাকার সমস্যাটা ইচ্ছাকৃত না। তাই যেই ব্যক্তি নাক ডাকে তার আত্মীয়-স্বজনকে তার প্রতি সহনশীলতা বাড়াতে হবে। সমস্যার প্রকটতা বেশি হলে বাসায় বসে না থেকে বিষেশজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেয়া উচিত।
লেখক- নুসরাত সারমিন লিজা।।