সন্তান-সম্ভবা নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে এর ক্ষতিকর তরঙ্গ-বিকিরণ (রেডিয়েশন) গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কে পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব।
এমনটি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক। মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আগে অনেক গবেষণা হয়েছে কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফলটিকে মনে করা হচ্ছে সবচে ভয়ঙ্কর। বুধবার দ্য টেলিগ্রাফ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন জানান হয় এসব তথ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতিবিদ্যা, স্ত্রীরোগ ও প্রজনণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. হিউ টেইলর ও তার সহযোগীরা এ গবেষণা চালান।
গবেষণা শেষে সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গর্ভবতীদের মোবাইল ফোন নিজের কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা উচিত।
তা না হলে গর্ভস্থ শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কারণ মোবাইল ফোনের তরঙ্গ-বিকিরণ গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে ক্ষতিকর প্রভাব রাখতে পারে। এর ফলে প্রসব জটিলতায় পড়তে পারে গর্ভবতীরা। এমনকি মানসিক বিকলাঙ্গ হয়েও জন্ম নিতে পারে শিশু।
ড. টেইলর জানান, ইঁদুরের ওপর এ গবেষণাটি চালানো হয়। গবেষণায় দুই দল গর্ভবতী ইঁদুরের মধ্যে একটি দলের খাঁচার নীচে মোবাইল ফোন রেখে তাতে নিয়মিত কল দেওয়া হয়। অন্য দলটির খাঁচার নিচে রাখা হয় একটি বন্ধ মোবাইল ফোন। এরপর উভয় দলে জন্ম নেওয়া বাচ্চা ইঁদুরগুলোর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা যাচাই করার পর দেখা যায়, সক্রিয় মোবাইল তরঙ্গের মধ্যে থাকা ইঁদুরগুলোর বাচ্চাদের মধ্যে অতিরিক্ত চঞ্চলতা, উদ্বেগ ও দুর্বল স্মৃতিশক্তির লক্ষণ দেখা দিয়েছে। যা অন্য দলের ইদুরগুলোর বাচ্চাদের মধ্যে এ লক্ষণ দেখা যায়নি।
“আমাদের গবেষণার ফলাফলে আমরা দেখিয়েছি ভ্রণাবস্থায় মোবাইল তরঙ্গের সংস্পর্শে থাকার সাথে এডিএইচডির সম্পর্ক রয়েছে। এর ফলে শিশুদের আচরণগত সমস্যার কারণও হতে পারে মোবাইল তরঙ্গ।” তবে এ প্রভাবের পেছনে কার্যকারণ সম্পর্কে জানার জন্য আরো বিস্তারিত গবেষণা চালানো প্রয়োজন বলেও মনে করেন টেইলর।
টেইলরের ভাষ্যমতে, মানব ভ্রুণের মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও একই ধরণের প্রভাব পড়তে পারে। গর্ভাবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ব্যাপারে তাই সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত। এছাড়া মোবাইল ফোনের তরঙ্গের প্রভাবে মস্তিষ্কের পিফ্রন্টাল করটেক্স অংশের নিউরনের গঠন প্রভাবিত হয়। মস্তিষ্কের এ অংশের সমস্যার কারণে শিশুদের মধ্যে অ্যাটেশন ডিফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভ ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি) দেখা দিতে পারে।
এদিকে ব্ল্যাকবেরি ও অ্যাপলের মতো মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে মোবাইল ফোন শরীর থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছে। তবে সেটি ডিভাইস ম্যানুয়ালে লেখা থাকার কারণে অধিকাংশ ব্যবহারকারীর নজর এড়িয়ে যায়। বিষয়টা সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ”ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর” লেখার মতোই অকার্যকর।
অনুসরন : পরিবর্তন, সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ।।