হলুদ, আমাদের প্রত্যেকের রান্নাঘরে ভীষণ সহজলভ্য একটি উপাদান। হলুদ ব্যতীত বাঙালিদের রান্না যেন কল্পনাই করা যায়না।
সেই প্রাচীন কাল থেকেই হলুদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে নানান রকম চিকিৎসায়, তবে আদুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সামনে যেন হারাতে বসেছে সেই চর্চা। আবার অনেকেই আছেন যারা কিনা জানেন হলুদের ঔষধি গুণ সম্পর্কে, কিন্তু কি করে ব্যবহার করতে হবে সেটা ঠিক জানেন না। তাই সকলের সুবিধার্থে ঘরোয়া চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার-
হলুদ কি?
হলুদ হচ্ছে আদা গোত্রীয় এক প্রকার গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের শিকড় বা মূল।
হলুদ গাছের শিকড়কে কয়েক ঘণ্টা সিদ্ধ করা হয়, তার পর গরম চুলায় শুকানো হয়। এরপর এই শিকড়কে চূর্ণ করে গাঢ় হলুদ বর্ণের গুঁড়া পাওয়া যায়, যা আমরা ব্যবহার করে থাকি। আবার শুকনো হলুদ ছিলে নিয়ে পানিতে ভিজিয়েও ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ভালো করে ধুয়ে কাঁচা হলুদের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য।
গবেষনায় হলুদের অসংখ্য স্বাস্থ্য-উপকারী ঔষধী কার্যকারীতা পাওয়া গেছে। আমরা অনেকেই জানি হলুদ এ্যান্টিসেপটিক হিসাবে কাজ করে। যুগ যুগ ধরে গ্রামীন বাংলা ছাড়াও দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি একটি প্রদাহ-নাশক ঔষধী হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
রন্ধন প্রক্রিয়ায় হলুদ ব্যবহার করা হয় মূলত খাবারের মধ্যেকার জীবানুগুলোকে ধ্বংশ করার জন্য। সাম্প্রতিক গবেষেনায় দেখা গেছে হলুদে ‘কারকিউমিন’ নামক একটি বায়ো-এক্টিভ যৌগ আছে, যা অগ্নাশয়ের(পেনক্রিয়েটিক) ক্যান্সার, আলজাইমার রোগ, কলোরেক্টাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, লিউকমিয়া প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। হলুদ এমন একটি ঔষধী মশলা যা লিভারের বিষক্রিয়া প্রতিহত করায় সবচেয়ে কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান।
জেনে নেয়া যাক হলুদ দ্বারা করা যায় এমন কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা-
- রোদে পুড়ে বা অন্য কোনও কারণে ত্বকের রঙ কালো হয়ে গেলে হলুদ ভীষণ চমৎকার কাজে দিবে। সামান্য পরিমাণ শসার রস নিন, তাতে অল্প একটু হলুদ বাটা বা গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন ও মুখে লাগান। ১৫/২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন ব্যবহারেই উপকার পাবেন। মুখে হলুদের দাগ দূর করা নিয়ে চিন্তিত হলে ব্যবহার করুন দুধ। তুলা দুধে ভিজিয়ে পরিষ্কার ত্বকের উপর বুলিয়ে আনুন। হলুদ দাগ উঠে যাবে।
- সাধারণ কাঁটাছেঁড়ায় হলুদ এন্টিসেপ্টিকের কাজ করে। খুব হাল্কা উষ্ণ পানি দিয়ে হলুদের পেস্ট তৈরি করে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিন। দ্রুত সেরে উঠবে।
- যারা হাড়ের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য হলুদ মহৌষধ। আধা গ্লাস দুধ নিন, তাতে আধ ইঞ্চি পরিমাণ হলুদ দিয়ে চুলায় জ্বাল দিন। দুধের রঙ হলুদ হয়ে গেলেই নামিয়ে নিন ও উষ্ণ অবস্থান পান করুন। প্রতিদিন রাতে এই পানীয় পান করলে হাড় হবে শক্তিশালী ও মজবুত, অষ্টিওপরসিস এর মতন রোগের সম্ভাবনা থাকবে না। এছাড়া এছাড়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এই পানীয় উপকারী। অন্যদিকে মেনপজের পরে মহিলাদের হাড়ের ভঙ্গুরতা নিরাময় করতেও অত্যন্ত কার্যকর।
- কৃমি সমস্যায় ভুগছেন, প্রতিদিন সকালে কাঁচা হলুদের রস ২০ ফোঁটা নিয়ে তার মধ্যে ১ চিমটি লবণ মিশিয়ে সেবন করুন। চাইলে সামান্য পানি মিশিয়ে নিতে পারেন। নিয়মিত সেবনে অচিরেই পরিত্রাণ মিলবে।
- সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয় হলুদ। কাশি কমাতে হলে হলুদের রস খেয়ে নিন কয়েক চামচ, কিংবা এক টুকরো হলুদের সাথে মধু মাখিয়ে তা মুখের মাঝে রেখে আস্তে আস্তে চুষতে পারেন। সেটা করতে না পারলে এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুঁড়ো, সামান্য মাখন এবং গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন। কয়েকবার সেবনেই নিরাময় হবে। কাশি ও গলা ব্যথা উভয়েই দূর হবে।
- শরীরে ব্যথা হলে বা ব্যথা পেলে দুধের মধ্যে হলুদ মিশিয়ে পান করুন। দীর্ঘ মেয়াদী বা সাময়িক, দুই প্রকার ব্যথাতেই আরাম পাবেন। এছাড়া কোথাও কেটে-ছড়ে গেলেও এই পানীয় পানে কাজ দেয়। দ্রুত ক্ষত নিরাময় হয়ে যায়।
- দেহে রক্তের ঘাটতি বা রক্ত শুন্যতা দেখা দিলে হলুদ বাটা খেলে উপকার মিলবে, কেননা এটি রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে চা চামচের এক চামচ কাঁচা হলুদের রস ও সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিয়মিত সেবন করুন, রক্তশূন্যতা অচিরেই দূর হবে।
- হাড়ের জোড়ায় ব্যথা হলে হলুদরে পেস্টের প্রলেপ নিয়মিত দিলেও উপকার পাওয়া যায়।
- শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে প্রলেপ দিলে আরাম মিলবে।
- মুখের মাঝে কোনও কারণে কেটে ছড়ে গেলে কিংবা অন্য কোনও কারণে জ্বালা পোড়া হলে গরম পানির মাঝে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে কুলি করুন। সেরে যাবে।
- হলুদ ডায়রিয়া নিরাময়ের ক্ষেত্রেও কার্যকরী। ডায়রিয়া হলে এক চামচ পরিমাণ কাঁচা হলুদের রস পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। জীবাণু ধ্বংস হয়ে ডায়রিয়া নিরাময় হবে। এছাড়াও যারা অন্ত্রের নানান রকম রোগে ভুগছেন তারা প্রতিদিন টাটকা হলুদ বেটে রস পানিতে মিশিয়ে খাবেন। এটি অন্ত্রের রোগের মহৌষধ।
- হলুদের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি নানা পদার্থ রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যেমন বাচ্চাদের লিউকমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় নিয়মিত কাঁচা হলুদের রস সেবন। প্রতিদিন দুধ বা পানির সাথে হলুদের গুঁড়ো বা রস মিশিয়ে খাওয়া অভ্যাস করলে অনেকটাই সুস্থ থাকা সম্ভব।
– সংগৃহীত (তথ্য সূত্র- ইন্টারনেট)।