ইনফো ডেস্ক | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
নিয়মকানুন মেনে গাড়ি চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ ছাড়াও দরকার কিছু দরকারি কাগজপত্র। যার অন্যতম ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’।
ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে থাকলে চালক রাস্তার ট্রাফিক সংকেতগুলো সম্পর্কে জানেন ও মানেন বলে ধরে নেওয়া হয়। কারণ লাইসেন্স দেওয়ার আগে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তিনস্তরের পরীক্ষার মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান করার কথা।
গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানোর সময় চালকের সঙ্গে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে পুলিশ আইন অনুযায়ী মামলা করতে পারে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে
ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। বিআরটিএ অফিস বা তাদের ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে লার্নার ফরম দেওয়া হয়। এটি পুরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ লার্নার অর্থাৎ শিক্ষানবিস লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদনের পূর্বে নির্দিষ্ট ব্যাংকে সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি:
লার্নার ফি: –
১. হালকা মোটরযান অর্থাৎ শুধু মোটরসাইকেল বা যে কোনো এক ধরণের মোটরযানের জন্য ৩৪৫ টাকা (১৫% ভ্যাটসহ)।)
২. মোটরসাইকেল এবং হালকা মোটরযান এক সাথে অর্থাৎ দুুুটি মোটরযান জন্য ৫১৮ টাকা (১৫% ভ্যাটসহ)।
শিক্ষানবিস থেকে পূর্ণমেয়াদের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নির্ধারিত পরীক্ষা দিতে হয়। এর জন্যও রয়েছে আলাদা ফি।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ফী (১৫% ভ্যাটসহ):-
ক. অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি – ২৫৪২ টাকা।
খ. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি – ১৬৮০ টাকা।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া:
প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে।
আবেদনকারীর স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা (প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ) বিআরটিএ’র যে সার্কেলের আওতাভূক্ত তাকে সেই সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। সার্কেল অফিস কর্তৃপক্ষ তাকে একটি শিক্ষানবিস বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করবে, যা দিয়ে আবেদনকারী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে।
২/৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর আবেদনকারীর (লার্নারে উল্লেখিত) নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট-এ অংশ নিতে হয়। ওই পরীক্ষায় ট্রাফিক আইন, ট্রাফিক সংকেত সম্পর্কিত বিষয়ে সংক্ষিপ্ত উত্তর লিখতে হয়। ফিল্ড টেস্টে সামনে-পেছনে, ডানে-বাঁয়ে ও পরীক্ষকের নির্দেশনা মতো গাড়ি চালিয়ে দেখাতে হয়।
এসময় আবেদন প্রার্থীকে তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স (মূল কপি) ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কলম সাথে আনতে হয়।
নিয়ম অনুয়ায়ী, এই তিনটি ধাপে পাশ করার পর একজন আবেদনকারীকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। উল্লেখ, পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম বয়স ২০ বছর এবং অপেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ১৮ বছর।
শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনপত্রে যেসব কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে
১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
২. রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
৩. জাতীয় পরিচয়পত্র বা ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
৪. নির্ধারিত ফি বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে (ব্যাংক এর তালিকা www.brta.gov.bd –তে পাওয়া যাবে) জমাদানের রশিদ।
৫. সদ্য তোলা ৩ কপি স্ট্যাম্প ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
তিনটি পরীক্ষায় (লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট) পাশ করার পর নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি দিয়ে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।
এরপর নির্ধারিত দিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ) দেওয়ার জন্য উপস্থিত হতে হয়। এসব প্রক্রিয়া শেষে বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড ইস্যু করে। স্মার্ট কার্ড পাওয়ার তারিখ গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
তবে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হলে আরও কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স
পেশাদার হালকা (মোটরযানের ওজন ২৫০০ কেজি’র নিচে) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে।
পেশাদার মধ্যম (মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে।
পেশাদার ভারী (মোটরযানের ওজন ৬৫০০ কেজির বেশি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে।
এছাড়া পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীকে প্রথমে হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। এর ন্যূনতম তিন বছর পর তিনি পেশাদার মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর মধ্যম (মিডিয়াম) ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার কমপক্ষে তিন বছর পর ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়।
লাইসেন্সের মেয়াদ:
সব ধরণের ড্রাইভিং লাইসেন্সেরই একটা নিদৃষ্ট মেয়াদ আছে। অপেশাদার হলে ১০ বছর, পেশাদার হলে ৫ বছর। মেয়াদ শেষে লাইসেন্সটি আবার নবায়ন করা যাবে।