বাগেরহাটের স্বনামধন্য লোককবি সেখ সামছুদ্দীন। মহান ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগের মহত্ত্ব তুলে ধরে তিনি লেখেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম গান ‘রাষ্ট্রভাষা’।
চারণ কবি শামসুদ্দিন আহমেদ ১৯১৫ সালে বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার ব্যেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তার বাল্যশিক্ষা শুরু হয় বাগেরহাট টাউন স্কুলে (বর্তমান বাগেরহাট বহুমুখি কলেজিয়েট স্কুল)। এখান থেকেই তিনি জুনিয়র পাস করেন। তবে পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে সুযোগ হয়নি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের।
ছোটবেলা থেকেই ‘কবিতা ও গানে’র প্রতি অসাধারণ ঝোঁক ছিল সামছুদ্দীন আহমেদের। বাল্যকাল থেকে তিনি ভক্ত ছিলেন পল্লীগীতির সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের।
পেশায় তিনি ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসয়ী। অবশ্য কেউ কেউ তাকে তেল বিক্রেতা বলে উল্লেখ করেন।
চারণ কবি সামছুদ্দীন আহমেদের বড় ছেলে শেখ দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, তিনি হাট-বাজারে ফেরি করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করতেন আর গান বাঁধতেন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিলের সময় পাক সেনাদের নির্বিচার গুলিতে ঢাকার রাজপথে ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনার দিনই (২১শে ফেব্রুয়ারি) রাতেই বাগেরহাটের চারণ কবি শেখ সামছুদ্দিন আহমদ রচনা করেন “রাষ্ট্রভাষা” নামেভাষা আন্দোলনের প্রথম গানটি।
পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে বাগেরহাটের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বাত্তক ধর্মঘট পালন শেষে সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক (সিসি ব্যাংক) মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশে নিজের লেখা গান গেয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন ছাত্র-জনতাকে।
জানা যায়, সে সময় তিনি শহরের বিভিন্ন স্থানে তার রচিত ‘রাষ্ট্রভাষা’ গান গেয়ে ভাষা অন্দোলন গতি সঞ্চার করেন। তার এ গান এতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে স্বল্প সময়ে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পরে।
তার গানের সূত্র ধরে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। ১৯৫৩ সালে খুলনার দি ইষ্টার্ন প্রেস থেকে পাকিস্তান পল্লীগীতি নামে তার লেখা গানের একটি সংকলন প্রকাশ হয়। সেখানে তার এই বিখ্যাত গানটিসহ মোট ১৬টি গান ছাপা হয়। যার প্রতিটি চরণে তৎকালিন পাকিস্তান সরকারের শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও সমালোচনা ছিল।
শিল্পি আব্বাছ উদ্দিন, কবি জসিমউদদীন, পিসি কলেজের তৎকালীন অধ্যাপক মীর মশাররফ হোসেনসহ দেশবরণ্য ব্যক্তিদের কাছে প্রশংসা লাভ করে তার এ বইটি । মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তান সরকার বিরোধীদের তালিকা তৈরি করছে এ আশঙ্কায় তিনি নিজের লেখা পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য হন তিনি। এক প্রকার নিভৃতে ১৯৭৪ সালে তিনি মারা যান।
“রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনও করিলিরে বাঙালি,
তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি।” গানটি শুনতে ক্লিক করুন:
‘রাষ্ট্রভাষা’ গানটি তিনি প্রথমে নিজের মতন করে লোক সুরে গেয়েছিলেন। পরবর্তিতে গানটি সুর করেন শহীদ আলতাফ মাহমুদ এবং প্রথম কণ্ঠ দেন রথীন্দ্রনাথ রায়। একুশে ফেব্রুয়ারির নিয়ে লেখা হলেও তার গান মাহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের।
তথ্যসূত্র: স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত। সম্পাদনা: বাগেরহাট ইনফো ডটকম।