আমরা সবাই জীবনে কমবেশী হিমু হওয়ার চেষ্টা করি। অন্তত যারা খোঁড়া যুক্তির বিপরীতে কথা বলতে ভালবাসেন তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে হিমু। সাহিত্যের ইতিহাসে এমন চরিত্র খুবই কম আছে যে তার স্রষ্টা অর্থাৎ লেখকের আবেদনকেও ছাড়িয়ে গেছে। যার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।যে সবাইকে হিপনোটাইজ করে রাখতে পারে।
বাংলা সাহিত্যে এরকম বলিষ্ঠ চরিত্র মনে হয় হিমু আর ফেলুদা ব্যতিত তৃতীয়টি নেই।
এই হিমু শুধুমাত্র উপন্যাসে জন্ম নেওয়া অসমাপ্ত জীবন আখ্যান নয়।এই হিমু বইমেলার সবথেকে বড় আকর্ষণ না।এই হিমু এক সৈনিক,কবি,গায়ক।যে যুক্তিকে কখনও গ্রাহ্য করে না।বরং যুক্তির ফাঁকগুলো তুলে ধরে।যে কখনও ভয় পায় না।ভয়কে পরাস্ত করে।ভয় যার কাছ থেকে ১০০ হাত দুরে থাকে।
যে তার প্রতিটা পাঠকের ভালবাসায় সিক্ত।
হিমু অসম্ভব সুন্দর এক জীবন দর্শণে দীক্ষিত।
যে দর্শণে ভালবাসা আর ঘৃণার আপেক্ষিকতা সমান।যে দর্শণে আনন্দ কষ্ট জীবনে একই অনুভূতি।
এই অনুভূতিকে উপলদ্ধি করার মত মানসিক শক্তি আমাদের নেই।তাই জীবন নিয়ে আসাদের এত অভিযোগ।অনুযোগ।
শুধুমাত্র পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবী পরে ঘুরলেই হিমু হওয়া সম্ভব না।
হলুদ পাঞ্জাবী হিমুর নিজস্বতা বোঝায়।
আজ আমরা আইফোন, অ্যাপলের ল্যাপটপ, পালসার ২২০ ব্যবহার করে যারা হিমু হতে চাই। তারা নেহাতই মাথামোটা।
হিমু ঠান্ডা মাথার ধীরস্থির যুবক।জীবন থেকে বারবার আঘাত পেয়ে যে আজ এত প্রখর মোধার অধিকারী।যে সহজেই অন্যের মানসিকতা বুঝতে পারে।
যাকে সমাজ অপ্রয়োজনীয় বোঝা ও অনর্থক উপদ্রব মনে করে।কিন্তু হিমু মেধা ও গুরুত্ব যাচাই করার মত ক্ষমতা কি সমাজের আছে??
উত্তর, নাই। কারণ কারও মেধা যাচাই করতে গেলে তার নিজেরও মেধাবী হওয়া লাগে।কিন্তু সমাজে তেমন নীতিনির্ধারক কই?
এখন শহুরে রাস্তায় জীবন পথে ছুটে চলা অসংখ্য হিমুর দেখা মিলবে। তারা পকেটবিহীন পাঞ্জাবী পরিহিত থাকবে না। কিন্তু তারা জীবণ নামক পাঠশালার ছাত্র।
হিমু কোনো কাল্পনিক চরিত্র নয়। বরং অসংখ্য বাস্তব চরিত্রের সংমিশ্রণ।
**এইটা অনেক আগে লিখছিলাম। তবে স্যারের জন্মদিনে উনার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আর হীমুদের সংগ্রামকে নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আবারও শেয়ার করলাম।