গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এটা বাস্তবায়িত হলে বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন ধ্বংস হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা।
দুই ধাপে ২৫ বছরে মোট ২৬৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার যোগান দিলেও এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৫ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি ঘটাবে বলে জানান তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এছাড়া হুমকির মুখে পড়বে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র। এসব জানার পরে এ কেন্দ্র বন্ধে আন্দোলনে নামে জনগন।
ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত ১৮৩৪ একর জমিতে অবৈধভাবে বাসিন্দাদের উচ্ছেদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোট কথায় এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা না গেলে সুন্দরবন ও তার পরিবেশ-জীববৈচিত্র এবং এলাকাবাসীর কল্পনাতীত বাজে পরিনাম ঘটবে।
এজন্য সারাদেশে নানাভাবে আন্দোলন চলছে। সুন্দরবনের একটি বড় অংশ বাগেরহাট জেলায় থাকায় এ আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়ছে বাগেরহাট।
বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তিবিশেষ প্রত্যেকেই যে যার মত পরিসরে সুন্দরবনের পাসে এ কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধে জোর আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে বড়দের তুলনায় শিক্ষার্থি ও তরুনদের কর্মসূচি চোখে পড়ার মত।
বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন এ ধরনের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নিজেদের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। গত রবিবার দুপুর ১২ টায় বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সচেতনতামূলক জনসভা করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাগেরহাট জেলা সংসদ এবং বিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা। এদিন তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সৌজন্যে লিফলেট বিতরন করেন তারা। ক্যাম্পাসের সামনে দেয়াল লিখন ও পোষ্টার লাগায় তারা।
ছাত্র ইউনিয়নের নেতা সজীব বলেন “সুন্দরবন রক্ষার্থে ছাত্রসমাজ অগ্রনী ভূমিকা রেখে তারা সফল হতে পারবেন এবং বাঙালি জাতি আরও একবার ছাত্রসমাজের শক্তি চিনতে পারবে”।
এর আগে সকাল সাড়ে সাতটায় শুরু হওয়া বিদ্যালয়ের প্রভাতি শাখায় অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীতে লিফলেট বিতরন করেন উক্ত শ্রেণিসমূহের ছাত্রনেতা ফাহাদ, রিমো, সানি, সুমন, রাজুসহ আরও অনেকে। বিদ্যালয়ের দিবা শাখায় লিফলেট বিতরন করেন ফুয়াদ, রনি, অর্নি, জুবায়ের প্রমুখ।
লিফলেটের বিষয় ছিল আগামী ২৪ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরে তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা সুন্দরবন রক্ষাসহ ৭ দফা দাবিতে লংমার্চে বাগেরহাটের আপামর জনগনের অংশগ্রহনে তাদেরকে আগ্রহী করা। ২৮ সেপ্টেম্বর এ লংমার্চ বাগেরহাট শহর হয়ে সুন্দরবনের পাশে দীঘরাজে গিয়ে শেষ হবে এবং ঐখানেই সমাপনী বক্তব্য দিবেন নেতৃবৃন্দ।
ইসলামী ছাত্রশিবিরও এ বিষয়ে আন্দোলনে নামার জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাটের মেগনিতলাসংলগ্ন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যালয়ে এ বিষয়ে দলীয় সভা হয় বলে জানান দলের নেতা কাজী মঞ্জুরুল।
বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, “সরকার না বুঝেই হুট করে যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সুন্দরবন তথা বিশ্বপরিবেশের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ, বিশেষত বাগেরহাটবাসীদের জন্য। তাই এ বিষয়ে সব বয়সীদেরই একইভাবে আন্দোলনে নামা উচিত”।
বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, “আমরা সরকারি চাকুরিজীবি, আমরা সরকারের খাই। তবে তাদের ভুল সিদ্ধান্তে আন্দোলনে নামা আমাদের সমিচীন নয়। তবুও জোর গলায় আমি বলি রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হলে তা সুন্দরবনের ধ্বংস ডেকে আনবে, আনবেই আনবে”।
এছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা শহরের জাহানাবাদ বালিকা বিদ্যালয়, আমলাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আদর্শ শিশু বিদ্যালয়সহ নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মসূচি পালন করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এ আন্দোলনের বিপক্ষে অর্থাৎ সরকারের পক্ষ ভূমিকা রাখছে। তারা এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চায়। অপর শীর্ষ ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল এ আন্দোলনে এখন পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
অন্যান্য নানান সংগঠন উক্ত আন্দোলনে কর্মঠ রয়েছেন। সুন্দরবন বাঁচাও; কয়লা তাপ ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চাই না; সেভ সুন্দরবন; সুন্দরবন বাঁচাও, বিশ্ব বাঁচাও ইত্যাদি শ্লোগানমুখর পরিবেশে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়াও এ বিষয়ে সোচ্চার রয়েছে।
স্বত্ব ও দায় লেখকের…