• আহাদ উদ্দিন হায়দার
বিশ্বজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এখন বহুল আলোচিত বিষয় ‘ব্লু হোয়েল’! এটি মূলত একটি গেম বা খেলা হিসেবেই চিহ্নিত ও বহুল আলোচিত হচ্ছে। অন্তত আমাদের বোঝার মাত্রাটা অনেটা তেমনই।
কিন্তু গেমিং শব্দের অর্থ শিকার করা বা খুঁজে বের করে হত্যা করা। তবে আমরা গেমিং আর গেমকে মিলিয়ে ফেলছি নাতো!
ফেসবুকে অনেকেই নিজ নিজ বন্ধুদের বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছেন: সাবধান, বাংলাদেশেও পৌঁছে গেছে ব্লু হোয়েল গেম! এ নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে কৌতূহল থেকে জানতে চাইছেন পুরো ব্যাপারটা। কেউ কেউ আতঙ্কও ছড়াচ্ছেন।
অবশ্য আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে সতর্ক অবশ্যই থাকা উচিত। বিশেষ করে উঠতি বয়সীদের দিকে খেয়াল রাখা, ‘দেখি কী হয়’-এর কৌতূহল অনেক সময়ই যাদের নিয়ে যায় ভুল পথে। এ কারণে সচেতনতা বেশি জরুরি।
ভুল তথ্য প্রচার বা গুজব রটানো উল্টো এই গেমটির প্রচারণায় বেশি সাহায্য করবে। ফলে, সঠিক তথ্য জেনে রাখাটাই বেশি দরকার।
ইন্টারনেট সংস্কৃতিতে লক্ষ-নিযুত গেম এখন। বিশেষ করে তরুণ, শিশু, কিশোর থেকে সব প্রজন্মের কাছে হার্টথ্রব, জনপ্রিয় ও আসক্তিসম বিনোদন এগুলো। ‘ক্লাশ অব ক্লান’র মত বহুমাত্রিক ও বহুস্তর বিশিষ্ট গেমগুলো কোটি মানুষের মনের খোরাক।
কিন্তু মানসিক বিকারগ্রস্থ কোন উদ্ভাবকের সভ্যতা বিনাশকারী, মানবতাবিরোধী উদ্ভাবন তার কাছে গেম বা গেমিং যাইই হোক, বিশ্ববাসীর কাছে তা শুধুই এক উন্মাদের ‘ঠাণ্ডা মাথার হত্যা পরিকল্পনা’ বা গেমিং বিবেচিত হওয়া উচিত।
আমরা কেন ‘ব্লু হোয়েল’কে গেম বলবো? এতো এক বিকারগ্রস্থ খুনির শিকার ধরা জাল!
একজন নিরাপরাধ মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় মানসিক চাপে ফেলে, তাকে বিভ্রান্ত করে, তার বিনোদন আগ্রহকে ব্ল্যাকমেইল করে, তাকে মাদকাসক্ত করে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে ফেলা কি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ না?
ব্লু হোয়েল গেম খেলে বাংলাদেশে আত্মহত্যা:
এ গেম খেলে রাজধানী ঢাকার হলিক্রস গার্লস স্কুলের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে—এমন একটি গুঞ্জনের কারণে ফেসবুক বেশ সরগরম। বাংলাদেশের কয়েকটি পত্রিকাও এমন খবর দিয়েছে। যদিও প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আহমেদ জায়িফ তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ব্লু হোয়েল গেমস খেলে হলিক্রসের মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে যে খবর চাউর হয়েছে, তার এখন পর্যন্ত কোনো ভিত্তি নেই। মেয়েটার শরীরে ব্লু হোয়েলের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার আত্মহত্যার ধরনটিও আরও আট-দশটা আত্মহত্যার ঘটনার মতোই। মেয়েটির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তাঁরা তাকে ভয়ানক রকম নজরদারির মধ্যে রেখেছিলেন। অহেতুক সন্দেহ করতেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে তার ব্যক্তিত্বের বড় ধরনের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় হয়তো ঘটনাটি ঘটেছে। কে জানে, বাবা-মাও হয়তো বিষয়টি বুঝতে পারছেন। কিন্তু এখন ব্লু হোয়েল গেমে সান্ত্বনা খুঁজছেন!’
ঘাতক এই গেমের কারণে অবশ্য বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই একটি আত্মহত্যার ঘটনায় মামলা গড়িয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।
এখন তবে আমাদের কী করণীয়?
তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি ও বিকাশ যেমন কাম্য, তেমনি কাম্য এর যুক্তিসংগত নিয়ন্ত্রণ। প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও বিস্তারের কৃতিত্ব যেমন উন্নত বিশ্বের তেমনি তা নিয়ন্ত্রণের দায়ও তাদের। তাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে এসব খুনিদের প্রতিহত করার পাল্টা প্রযুক্তি। অন্যথায় এধরণের স্যাডিস্ট এ্যাক্ট বেড়েই চলবে।
নিষিদ্ধের প্রতি কৌতুহল মানুষের সহজাত। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আমাদের ‘ব্লু হোয়েল’ বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির সরল উদ্যোগ যতই ভালো হোক না কেন, ভাবতে হবে কী বলে আর কতটুকু বলে অন্যকে সচেতন করবো।
কারণ ফেসবুক বহু মত পথ, ভিন্ন ভিন্ন বয়স, শ্রেণী পেশা, যোগ্যতা ও মানসিকতার মানুষের বিচরন স্থান। দৃষ্টিভংগী, প্রকাশভংগী, চিন্তার সীমাবদ্ধতা, ভাষার প্রয়োগসহ বিভিন্ন কারণে এখানে যে কোন একটি বিষয় নিজে জানা ও বোঝা, অন্যকে জানানো এবং আরেক জনের জানার মধ্যে পার্থক্য করে দেয় বিভিন্ন ভাবে।
আমি মনে করি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ব্লু হোয়েল’ নিয়ে জনস্বার্থে সার্বজনিন কিছু বলতে বা নির্দেশনা দিতে হলে রাষ্ট্র বা সরকারের পক্ষ থেকেই তা বলা বা করা বাঞ্ছনীয়। কারণ রাষ্ট্র বা সরকারের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার শক্তি, সামর্থ ও সক্ষমতা রয়েছে।
অন্যথায় বিপত্তি বাড়তে পারে।
আমাদের দাবি হোক, বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে ‘ব্লু হোয়েলে’র অনুপ্রবেশ সুযোগ নিষিদ্ধ করতে হবে। সেটা করতে হবে রাষ্ট্রকেই এবং দ্রুত।
আমরা এই অমানবিক হত্যা পরিকল্পনা বন্ধ করতে চাই। আমাদের মেধাবী তরুণ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখতে চাই। যাতে আমরা আমাদের দেশে ব্লু হোয়েল দ্বারা আর কোন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে না পারে তা দেখতে চাই।
এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে ‘যুদ্ধাবস্থা’য় দেখতে চাই। সেই সাথে সতর্কতা ও সচেতনতা তৈরি করা দারকার এখনই।
এইচ/এসআই/বিআই/১০ অক্টোবর, ২০১৭