• মাসুমা রুনা
বাসাটা বাজারের কাছে হওয়াতে সারাক্ষন নানা রকম আওয়াজ আসে কানে। সেই ছোটবেলায় দোতলার ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে কত যে দুষ্টুমি করেছে পরী।
পলিথিনে পানি ভরে দেখে শুনে ঠিকই ফেলতে পারতো হেটে চলা মানুষটার গায়ে। বাসায় নালিশ আসার আগেই ঘরের মধ্যে নিত্য নতুন জায়গাতে লুকিয়ে থেকেছে। নালিশ কখনো আসতো কখনওবা আসতো না। তবে লুকিয়ে থাকাটা তার একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেলো।
একবার তো খাটের তলায় ঘুমিয়েই গেছিলো! তার চার বছরের ছোট আরেক বোন থাকাতে মা থাকতো তাকে নিয়ে ব্যস্ত। এই সু্যোগে সে একা একা শিখে ফেলেছিলো কত কি!
প্রিয় ঝুল বারান্দায় এসে একুশ বছরের তরুণীর খুব মনে পড়ছে তার পিছনের দিনগুলির কথা!
বাজারের ভিতরে বাসা হলেও আশেপাশের কয়েকটা বাসার ছেলেমেয়েদের সাথে ঠিকই বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিলো। পাশের বাড়ীটার একমাত্র মেয়ে আয়শা। একটু ভাব মেরে চলতো। কারণ সে ছিলো অতিরিক্ত ফর্সা আর পড়ালেখায় এ পরীর চেয়ে বেশ আগানো। কিভাবে জানি সেই ফর্সা রঙ নিয়ে গর্বিত আর মেধাবী মেয়েটার সাথে বেশ জমে গেলো তার বন্দুত্ব।
আজ মনের অবস্থা কিছুটা তরল। তাই এসব ভাবতে ভাবতে বহুদূর চলে গেছে। গতকাল নদীর পাড়ে খালি পায়ে ঘুরাঘুরি অবস্থায় সে ধরা খেয়েছে তার বাবার কাছে।
তার বাবা মেয়েটাকে বেলা তিনটার সময় ওখানে দেখে চমকে গেছে! পরী!!? এই পরী বলে তিন বার ডাক দেয়ার পর তার হুশ হয়েছে।
এদিকে আসো!! এইখানে কি করো?
পরী কিছু না বলে বাবার সাথে রিকশায় উঠে পড়লো।
তার বাবার কাপড়ের ব্যাবসা। সারা সময় দোকানের কর্মচারী, আর লেনদেন-এর হিসাবে মাথা জ্যাম হয়ে থাকে। মেয়ের পায়ে যে স্যান্ডেল নাই এটা তার চোখে পড়ার কথা না। বাসায় ফিরে শুধু বউকে বলেছে, আপাতত মেয়েটার বিয়ে দেয়ার চিন্তা বাদ দাও। তার মা ভয়ে কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে যায়।
পরী হয়ে যায় ব্যাপক খুশি।
আর সেই খুশিতেই আজ বারান্দায় বসে এলোমেলো ভাবনা দের জুড়তে বসে গেছে…..
রাত ৮টা বেজে গেছে। ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই তার ছোটবোন এসে বললো, আপা, তোমার কাছে একজন আসছে!
-কে?
– চিনিনা আপা।
– মহিলা? নাকি পুরুষ?
– একটা ছেলে! তুমি যাও, গিয়েে ঘটনা বোঝো। তোমার কলেজের কোন ফ্রেন্ড। হতে পারে। তবে কিছুটা ক্যাবলা গোছের। বসতে বলছি আর এক গাল হেসে দিছে! হে হে হে!
পরী ওর বোনের উৎসাহ দেখে আর ফাজলামি মার্কা আচরনে বিরক্ত হয়ে বসার ঘরের দিকে রওনা দিলো….
(চলবে…)
এসআইএইচ/বিআই/৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
» রোদেলা সুখ (পর্ব-১)