• মো. সুরুজ খান
যখন দেশের চিকিৎসক আমার সমস্যা নির্ণয় ও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছেন না, তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভারত যাবো। নিজের পাসপোর্ট থাকলেও স্ত্রী’র পাসপোর্ট নেই বিধায় নিজেরা যথাযথভাবে পূরণ করে ফর্ম জমা দিয়েছিলাম পাসপোর্ট অফিসে।
সাত/আট দিনে পরে ভেরিফিকেশনের জন্য ফোন দিলেন, বাড়ি আসলেন, কথা শেষে অফিস খরচ দাবি করে বসলেন। সাফ জানিয়ে দিলাম অফিস খরচ আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। যদি প্রয়োজন পড়ে ফোন দিবো। কিন্তু আমি ফোন করি নি।
যথা সময়ে পাসপোর্ট আনতে গিয়ে দেখি তৈরি হয় নি। কেন হয় নি, এমন প্রশ্নে (?) জানতে পারলাম পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট আসে নি। ছুটলাম ডিএসবি অফিসে। গিয়ে অফিসারের নিকট জানতে চাইলাম, কেন রিপোর্ট যায় নি?
তিনি দায়িত্বপ্রাপ্তদের ফোন দিলেন। তারা আসতে আসতে গল্প শুরু করলাম। কি করি, কোথায় কি ইত্যাদি।
এক পর্যায়ে অন্য একজন বললেন, ‘ওদের যদি মিষ্টি খেতে কিছু দিতেন, তাহলে এত কষ্ট করে আসা লাগতো না।’
-উত্তরে বলেছিলাম, প্রেসক্লাবের সামনে, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলি মিষ্টি খাওয়া লেনদেন বন্ধ করুন। আর আমি মিষ্টি খেতে টাকা দিবো! আমার বিবেকে বাঁধে।
অফিসার অপ্রস্তুত হলেন মনে হলো, প্রশ্ন করলেন টিআইবি’র সাথে কত দিন?
=> এই তো ২০০৯ সাল থেকে।
=> ৩৮ বছরের চাকুরি জীবনে এমন বিবেকবান লোক একটাও দেখি নি।
প্রশংসা না উপহাস ঠিক বুঝতে পারলাম না।
অফিসার বলে চললেন, হয়তো কোন কাগজ কম আছে।
– আমি=> যত বার প্রয়োজন ঘাটতি পেপারস্ দেবো, কিন্তু……
কিছুক্ষণের মধ্যে দায়িত্ব প্রাপ্তরা আসলেন। বললেন, স্যার নাগরিক সনদ নেই।
আমি বলেছিলাম, কাগজ সব না দিলে পাসপোর্ট অফিস রিসিভ করে না। আমি সব কাগজ দিয়েছি। হয়তো ভূতে কাগজ গায়েব করেছে। এর জন্য কি করতে হবে?
অফিসার: আপনি নাগরিক সনদের মূল কপি দিয়ে যাবেন, কালই কাগজ চলে যাবে।
দায়িত্বপ্রাপ্তরা: একটা ফোন নম্বর দিছিলাম না? যোগাযোগ করলে এত ঝামেলা হয়?
=> এমনি ফোন দেই নি।
ঐদিন বিকালে আবার সেই অফিসে গিয়ে নাগরিক সনদ পৌঁছে দেই। তবে অফিস খোলা ও ছুটি-সহ ছয় দিন পর রিপোর্ট দেওয়া হয় পাসপোর্ট অফিসে।
এই বাস্তবতায় যারা না পড়বেন, তাঁদের কাছে গল্প মনে হবে। প্রশ্ন হলো, আমি বা আমরা এই ভোগান্তি সহ্য করবো! নাকি মিষ্টি খাওয়ার জন্য অর্থের যোগান দিবো। আরও প্রশ্ন হলো, আমি বোকা তাই এতো ঝামেলা ও অপেক্ষা করে পাসপোর্ট নিয়েছি। সবাই কি ঝামেলা করতে চায় বা অপেক্ষা করতে পারবে বা সময় আছে?
দেশে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠিত হলেও সরকারি মিষ্টিখোর কর্মকর্তাদের কেন এখনও ডায়াবেটিস সৃষ্টিতে ব্যর্থ হচ্ছেন? ডায়াবেটিস হলে তো আমাদের মতো ছাপোষা জনসাধারণকে মিষ্টির প্যাচে পড়তে হয় না।