• মো. সুরুজ খান
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাত্রাপুর বাজারে এসেছি মাত্র। এর মধ্যে মেজ চাচা’র ফোন, দ্রুত বাসায় আয়।
বাসায় গিয়ে শুনলাম, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলা থেকে কিছু লোক এসেছে, যাত্রাপুরে ব্যবসা করেন। তাদের একজনের স্ত্রী বাগেরহাট শহরের একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে এক লাখ ২৩ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। সন্ধ্যায় ওই ব্যাংকের ট্যাগ করা পাঁচশত টাকার নোটের একটি বান্ডিল নিয়ে তিনি আসছেন মেজ চাচার কাছে রাখতে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মেজ চাচার সঙ্গে তাদের লেনদেন হয়েছে।
ব্যাংকের ট্যাগ করা ওই টাকা হাতে নিয়ে চাচা দেখেন ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিলের ভিতরে ৫টি ১০০ টাকার নোট। এখন ঘাটতি দুই হাজার টাকার কি হবে? এ জন্য আমাকে ডেকেছেন।
কি করা যায়, ভেবে না পেয়ে রাতেই বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন স্যারকে বিষয়টি জানাই। তিনি পরামর্শ দেন, টাকা নিয়ে ব্যাংকে যাওয়ার জন্য, ব্যাংক কি বলে তাই শোনার জন্য।
বুধবার (২২ মার্চ) সকালে ঐ নারীর সঙ্গে আমি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় যাওয়ার আগে ফোনে বিষয়টি জানাই স্নেহের ছোট ভাই ইনজামামকে। তার সঙ্গে কথা বলে ব্যাংকে ঢুকলাম। সেকেন্ড অফিসারকে বিষয়টি বললাম, তিনি ডেকে আনলেন ‘ক্যাশ’ অফিসারকে। তিনিও শুনলেন বিষয়টি।
পরে নিজেদের মাঝে আলোচনা করলেন, গতকাল (২১ মার্চ, ওই দিন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তলন করা হয়) কোন টাকা উদ্বৃত্ত ছিলো না। যা-ই হোক, কিছু ক্ষণের মধ্যে আমাকে ডেকে ঘাটতি টাকা বুঝিয়ে দিতে বললেন ক্যাশ অফিসারকে। এর মাঝে তারা ভালো ভাবে পরীক্ষা করে দেখলেন টাকার বান্ডিলের ট্যাগটি খোলা হয়েছে কিনা।
টাকা নিয়ে সেকেন্ড অফিসারের নিকট আসতেই দেখি তিনি ফোনে কথা বলছেন। বললেন পার্টি আমার সামনে আমি দেখছি। উনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কাউকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বললাম হ্যাঁ।
– কাকে?
– আমার এক ছোট ভাইকে বলেছি।
– কি করেন তিনি?
– সাংবাদিক। কেন?
– একজন সাংবাদিক ফোন করছিলো তো তাই। এটা তো ভুল, ভুল তো হতেই পারে। বিষয়টি কারও সাথে আর শেয়ার করেন না। আপনার ঝামেলা তো মিটে গেল।
ব্যাংক থেকে বের হয়ে ভাবছি, আসলে কি সমস্যার সমাধান হয়েছে?
কিছু প্রশ্ন মাথায় আসছে…
– ১) যে ঐ বান্ডিল করলো সে কি দেখে নি যে, ৫০০ টাকার নোটের মধ্যে ১০০ টাকার নোট ঢুকছে?
– ২) ৫০০ টাকার নোট আর ১০০ টাকার নোটের সাইজ (আকার) তো এক নয়। নিশ্চয় এমন সূক্ষভাবে নোট ভিতরে সাজানো হয়েছিলো যে, মেশিনে গুনলে ১০০টি নোট আছে, এমন দেখা যাবে। তাহলে কি এটা ভুল?
– ৩) যদি ভুলবশত ট্যাগ খুলে ফেলা হতো, তাহলে ঐ ২,০০০ টাকার দায় কে নিতো? ব্যাংক নাকি গ্রাহক?
– ৪) আমি কেন বিষয়টি শেয়ার করবো না? ব্লগারের কাজ তো সমস্যা নিয়ে কথা বলা।
– ৫) যারা স্বল্প শিক্ষিত, ভীত প্রকৃতির, ভাবেন শিক্ষিত মানুষের সাথে বেশি কথা বলা বেয়াদবি – তাদের জন্য কি একই সমাধান হতো?
– ৬) আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা কতটা নিরাপদ? যেখানে এটিএম বুথ থেকে জাল নোট বের হয়।
প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলে হয়তো ব্যাংক নিয়ে জ্ঞানের পরিধিটা বাড়তো এবং এটা বুঝতে সক্ষম হতাম যে- এটা ভুল ছিলো নাকি সূক্ষ কারসাজি। কিন্তু প্রশ্নগুলোর উত্তরগুলো কে দেবে?
** ব্যাংকে এক হাজার টাকার বান্ডিলে ১০০ টাকার নোট