• সুব্রত কুমার মুখার্জী
সেদিন ছিল রবিবার, বাধাল হাট। কলবুনিয়ার সামছু বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছে, তারপরও হাটে যেতে হয়। বাড়িতে বিক্রি করার কিছুই নাই তারপরও বৌয়ের তাড়নায় উঠতে হয়।
কয়েকদিন আগের বাতাসে পড়া কলা নিয়ে হাটে যায়। যাওয়ার পথে বকুলতলায় হৃদয় দাম বললেও তাতে দিলে চাল কেনার টাকা হয় না। মাথায় কলার ঝাকা নিয়ে রওনা হয় বাধাল।
ভ্যান ভাড়া না থাকায় হাটতে হাটতেই বাধাল পৌঁছায়। হাটে বসার আগেই খাজনার জন্য আসে। বলে কয়ে কলা বিক্রি করে টাকা দেবে বলে সময় নেয়। কয়েকজন খদ্দের আসলেও কেউই কেনে না। কলা গুলোর চেহারাও হয়েছে খারাপ।
ভতি হওয়ার আগেই গাছ ভেঙ্গে পড়ায়, বউ তুতে দিয়ে কলা গুলোকে পাক ধরালেও কলায় একটা কালচে চেহারা নেয়। খানিক্ষনের মধ্যে হাটে হইচই চেক হচ্ছে। সামছু বুঝতে পারছে না কি করবে? অনেকেই ধামা মাথায় নিয়ে মাঠের পাশ দিয়ে বাগানের দিকে। সামছু উঠে না। চাল না নিয়ে গেলে মা মরা নাতনিটা তো না খেয়ে থাকবে।
বউ মেরে আরেকটা মেয়ে নিয়ে চিটাগাঙ গেছে বড় ছেলে। আর এক মেয়ে এখন তার সঙ্গী। লেখাপড়া করাতে না পারলেও ঘরের কাজ ভালই করে রহিমা। সামছু এখন একটাই আশা মরার আগে রহিমাকে কারও হাতে দেওয়া।
বয়সের থেকে রহিমার শরীরটা বেড়ে যাওয়ায় সাংদের দোকান ধারেও পাঠাতে ভয় করে। কয়েকদিন আগে কাশিটা বাড়লে সুশান্ত ডাক্তারকে ডাকার জন্য রহিমা যায়। চেয়ারম্যানের বাগানের ধারে কয়টা ছেলে তাকে কি যেন বলেছে। দাদির কাছে কি কান্না।
খানিক্ষনের মধ্যে কয়েকজন লোক এসে দাড়ায় সামছুর কলার সামনে। সবাই প্যান্ট জামা পড়া। সামছু ভাবে এবার বুঝি তার সব কলাই কিনবে। লোকগুলোর মাঝে একজন লোক বলে উঠল ফরমালিন কলায় দেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা জরিমানা। সামছু বুঝতে পারে না। ইজারদারের দিকে তাকায়। ইজারদার লোকটিকে অনেক করে বুঝায় গরিব মানুষ খাজনাও দিতে পারে না। কোন কথায়ই কাজ হবে না। শেষ পর্যন্ত সামছুর হয়ে ইজারদার ৫০০ টাকা দেয়।
আজকে কলা নিয়ে আসার সময় সামছু যে কার মুখ দেখেছিল। কলা বিক্রিতো দূরে থাক কিছুক্ষনের মধ্যে শিবপুরের মেলার হাতি হাটে আসে।
বউ কয়েকদিন ধরে বলছিল টিকিট কেনার কথা। লটারির টিকিট কিনে এরই মধ্যে পাশের বাড়ির মতলব মটর বাইক পেয়েছে। সামছুর মন দিয়ে সায় দেয় না। ভাবে এটাও তো জুয়ো খেলা। জানে না কিভাবে চলে তারপরেও ভাবে শুধু ভাবে ২০ টাকায় অনেকগুলো টাকা। আর সারাদিন কাজ করলেও তো সেই তিনশ’ টাকা। গতবার মেম্বর ভোটের সময কইছিল, ভোট দিলে বয়স্ক কার্ড দেবে। ভোটও দিয়েছিল। কিন্তু কার্ড আর পায় না।
মেলার হাতির পায়ের চাপে কখন কলা যে কাদায় মিশে যায় সামছু বুঝতে পারে না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। আস্তে আস্তে বাড়ির পথে রওনা হয়। হাটতে হাটতে ভাবতে থাকে আজকেও মা মরা মেয়েটাকে না খেয়ে থাকতে হবে। তারপর আছে ইজারদারের ৫০০ টাকা। সামছুর কান্না দেখে ইজারদার খাজনা মাপ করে দেয়।
সামছুর সাথে সাংদের অরুন। তালের গুড় নিয়ে গেছিল। দুই হাতির লন্ড ভন্ড করার আগেই সে গুড় বিক্রি করেছিল। অরুনের ছেলেটার নাকি ক্যান্সার বাঁচবে না। আর বেচেই কি করবে? অরুন বটতলায় গিয়ে তার ধামা থেকে দুই কেজির মত চাল একটা ব্যাগে সামছুকে দিয়ে বলল আজ মা মরা মেয়েটাকে নিয়ে দুটো মুখে দিও।
এসআইএইচ/বিআই/২০ আগস্ট, ২০১৬