জন্ম যেন পাপ। সুমন্ত যত বড় হতে লাগল ততই যেন মনে হয় জন্মই পাপ। এক হিন্দু ঘরের ছেলে সুমন্ত। ধর্মে হিন্দু হলেও তার চিন্তা চেতনায় সম্পূর্ণ বাংলাদেশী।
সুমন্তর মেসোর ইন্ডিয়ায় জন্ম, যে ফোন দিয়েই জানতে চায় তোমাদের দেশের কি অবস্থা? কোন সমস্যা হচ্ছে কি? তার কথায় সুমন্তর মনে হয় সারাক্ষণই বাংলাদেশে হিন্দুদের মুসলমানরা হত্যা করছে। সুমন্তর ছোট কাকা খুবই সম্মানীয় ব্যাক্তি। এলাকার বিশেষ ব্যাক্তিদের সাথে সম্পর্ক। তার কথা ক্ষমতাসীন দলের বড় বড় নেতারা শোনে। সে যখন বাড়িতে একাকি বলে বাংলাদেশ আমাদের নয় তখন খুবই কষ্ট লাগে। এমনকি বাড়িটা করতে চায় না আর কয়দিন এদেশে থাকা যাবে।
আমাদের সব জায়গায়ই সমস্যা। সুমন্ত তখন চিন্তা করে তাহলে প্রাইমারি স্কুল গুলোয় এত হিন্দু শিক্ষক চাকুরী করে কি করে? সুমন্তর ভায়রা বাংলাদেশের সকল জমি বিক্রি করে ইন্ডিয়ায় চলে গেছে। ইন্ডিয়ায় গিয়ে ফোন দিয়ে বলে তুমিও চলে আস। নাগরিকত্ব দেওয়া যাবে। আর তোমার কাজের অভাব হবে না।
পাশের বাড়ির নব দা তার ঘেরে ছাগল আসায় প্রতিবেশী লতিকে যার পর নাই গালিগালাজ করেছিল। এমনকি লতির বউকে বলেছিল ছাগল তোর ইয়ের মধ্যে দেব। বিএনপি ক্ষমতায় নবদাকে মারল। সেদিন সুমন্তর অন্য সবার মত মনে হল না এখানে থাকবে কি করে?
যখন শুনতে পেল তাদের সম্প্রদায়ের এক বাড়িতে রাতের অন্ধকারে বেশ কিছু চোর ঢোকে, এক সময় বাড়ির বউকে ধর্ষণ করে। কয়েকদিন মধ্যে রাজনীতির কথা চলে আসে। এদেশ নাকি হিন্দুদের নয়। সেই যে রায়েটের সময় গিয়েছিল না ফিরলেই ভাল হত। পাশের বাড়ির কাকা কখনই স্বীকার করেনা মুক্তিযুদ্ধ। এদেশে ফিরেই নাকি ভূল করেছিল।
সুমন্ত বুঝতে পারে না যারা উদ্বাস্তু হয়ে ঘুরে বেরিয়েছে তারা কি সুখ খুঁজে পেয়েছিল। বুঝতে পারে না এতই সুখ যদি ওপারে থাকে তাহলে তার বড় বোন কেন বিনা চিকিৎসায় মারা গেল।
গ্রামের শুভেন্দু একদিন রাতের অন্ধকারে বাড়ি বিক্রি চলে গেল। কেউ বলে শুভেন্দুর বউ নাকি ভাল ছিল না আবার কেউ বলে ওদের চাপে চলে গেছে। কাদের চাপ?
সুমন্তকে তো কেউ বলে না তুই হিন্দু। সুমন্তর এক বন্ধু ছিল হেলাল। তাদের বাড়িতে গেলে একদিন হেলালের নানি বলেছিল মালাউনের পোলাকে বাড়ি এনেছিস ওর তো জাত যাবে।
গ্রামের আর এক দাদা শঙ্খু অনেক টাকা দেনা করে ইন্ডিয়ায় চলে গেল। তাতে তো তার জাত ভাইয়েরাও গালাগালি করল। সুমন্তর খুব কাছের বন্ধু রিপন। ওদের এদেশে যেমন বাসের ব্যাবসা তেমনি নাকি ওদেশেও বাসের ব্যাবসা রয়েছে।
মাখনের দুই ছেলে বউ তো ওদেশেই থাকে তারা নাকি ওদেশেরও ভোটার। সারা বছর আয় করে মাখন ব্যাগ ভরে টাকা নিয়ে চলে যায় ইন্ডিয়ায়। মাখনের আবার হুন্ডির ব্যাবসা আছে।
দুলাল দালালের কাছ থেকে মাঝে মাঝেই ইন্ডিয়ায় পাসপোর্ট বিহিন যাওয়ার কথা শোনে। ইন্ডিয়ায় যাওয়া নাকি একবারেই সহজ। বর্ডারে গিয়ে কয়েকটা টাকা ধরিয়ে দিলেই ওপার। তারপর স্বর্গসুখ। ওখানে নাকি এদেশের আলুর টাকায় ব্যাগ ভরে বাজার করা যায়। কাটা মাছ কিনতে পাওয়া যায়। কোন বাড়িতে বেড়াতে গেলে বলে এর পরের দিন আসলে কিন্তু থাকতে হবে।
কিছুদিন আগে সুমন্তর মামা শ্বশুর এসেছিল তাকে মশারি কিনে দিল, বদনাও একটা। সুমন্ত বুছতে পারে না বদনাও যদি ওই দেশে পাওয়া না যায় তাহলে তারা কি করে?
ভারত বাংলাদেশের খেলা। ধ্বনি নাকি ভাল খেলে। পাশের বাড়ির কাকার নাতি ভারতের সাপোর্টার। বাংলাদেশ কোন টিমই নয়। সুমন্ত রোজই চিন্তা করে এরা তো কোকিল পাখি। নিজের ঘরে কোনদিন ডিম পারবে না। এভাবে আর কতদিন পরবাসে থাকবি। নিজের দেশে গেলে কাজ করে খেতে কষ্ট হবে তাই যায় না। এটা তো চাষের ভিটা।
সব জায়গায় নাকি হিন্দুরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাহলে ক্রিকেট টিমে ২ টি খেলোয়াড় কি করে খেলে?