• নিশাত তাসমিন টুম্পা
পুষ্পে-বৃক্ষে, তৃষিত হৃদয়ে, পত্র-পল্লবে নতুন প্রাণের নতুন গানের সুর নিয়ে এসেছে বর্ষা। গ্রীষ্মের আগুনঝরা দিন পেরিয়ে, বর্ষা এসেছে রিমঝিম শব্দে। বৃষ্টির নিক্বণে এবার প্রকৃতি হবে সজীব-সতেজ। প্রখর জ্যৈষ্ঠ মাসের পর বর্ষার মুষলধারার বৃষ্টিতে ভেজার জন্য তাই তৃষিত অপেক্ষাতুর প্রকৃতি আছে উন্মুখ। আজ পহেলা আষাঢ়, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ, রূপময় ঋতু বর্ষার প্রথম দিন।
কবিগুরুর বর্ণনায়,
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়!
এমন দিনে মন খোলা যায়–
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়॥
এ বছর আষাঢ় আসার আগেই বর্ষা এসে গেছে। গ্রীষ্মের তাপদাহ যেমন ছিল তেমনি ছিল বর্ষার ঘনঘটাও। কথা ছিল বর্ষা মুষলধারে ঝরে আষাঢ়ের আগমনি বার্তা নিয়ে আসবে আজ। আষাঢ়ের প্রথম দিনে রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি নামবে ধরণী জুড়ে। শান্ত করবে ধরণীতল। কিন্তু আজকের আকাশ দেখে তা মনে হল না। তাতে কি!
বর্ষা এলে প্রকৃতিতে যেমন আলোড়ন সৃষ্টি হয় তেমনি মানুষের হৃদয়ও বেজে ওঠে। বর্ষা মানুষের মনটাকে উদাস করে, প্রকৃতির মাঝে ঝমঝম বৃষ্টিতে সবকিছু হয়ে আসে ঝাপসা-অস্পষ্ট। বর্ষা যেমন হৃদয়কে আন্দোলিত করে তেমনি সামাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনকেও প্রভাবিত করে প্রবলভাবে।
নানা দিক দিয়েই বর্ষা শ্রেষ্ঠ ঋতু। অন্য কোনো ঋতু তার বৈশিষ্ট্য নিয়ে এত তীব্রভাবে অনুভূত হয়না। সারাদিন একটানা বৃষ্টি হয় অজস্র ধারায়। বৃষ্টি হলে ধানের ওপর দিয়ে দুরন্ত বাতাসের সবুজ ঢেউ, ডোবা নালা থেকে ব্যাঙের ডাক, দীর্ঘ কর্মহীন জীবন, নানা রকম রসে পরিপূর্ণ ফলের ঘ্রাণ এই সব কিছুই বাংলাদেশকে এক লাবণ্যশ্রী দান করে। আমাদের এই চোখ ধাঁধানো আলোর দেশে বর্ষার আকাশ আমাদের চোখে কি যে অসাধারণ স্নিগ্ধ প্রলেপ মাখিয়ে দেয় তা আমরা বাঙালিরাই জানি।আষাঢ় মাসে বাংলার দিগন্ত বিস্তৃত শস্যক্ষেত্র সবার মাঝেই একটা নতুন প্রাণ এনে দেয়। বৃষ্টির সময়ের বাতাস কয়েক মিনিটের জন্য প্রকৃতির সব গাছপালাকে মনে দোলা দিয়ে তাকে ছুঁয়ে আবার কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। এ এক আশ্চর্য অনুভূতি। তারপর, বৃষ্টির সময় বাংলাদেশের সব নদ-নদী থাকে পরিপূর্ণ। কানায় কানায় পানি খেলা করে। শুকনো নদীও তখন যেন তার যৌবন ফিরে পেল।
কলকল শব্দে সে পাড় ভাঙ্গে সকল বাঁধা বিপত্তি দূরে সরিয়ে দিয়ে সাগরের সাথে মিলন ঘটানোর জন্য সে ছুটে চলে স্বপ্ন নিয়ে। বৃষ্টির টিপটিপ শব্দ কিছু দুরন্ত ছেলে মেয়েদের মন কেড়ে নেয়। তারা তখর চলে যায় নদীর বুকে খেলা করতে। নদীতে ঝাঁপ দিয়ে বর্ষাকে আলিঙ্গন জানায়। আসলেই বর্ষাকাল একটি চমৎকার ঋতু। এক পশলা বৃষ্টি মানুষের অনুভূতি পাল্টে দিয়ে যায়।
আষাঢ়ের প্রথম দিবসে বিরহীর মনেও দূরাগত এক আকাঙ্ক্ষার প্রেরণা জাগায় বর্ষা। আষাঢ় মাসে কদম ফুল যখন ফোটে তখন চারিদিকে কদম ফুলের তীব্র ঘ্রাণ মনে করিয়ে দেয় বর্ষার কথা। কোন এক পড়ন্ত বিকালে এমন ফুলের গন্ধ ছড়ানো সময় যদি বর্ষা এসে হাজির হয় তাহলে তো বর্ষা প্রেমী মানুষগুলো এর কিছুতেই ঘরে থাকতে চাইবে না। ছুটে চলে যাবে বর্ষার বুকে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে। কি অপরূপ মনোরম দৃশ্য!!
ভাবতেই মনে অনেক দোলা দেয়। বর্ষা তুমি এভাবেই মানুষের মনে সবসময় তোমার জন্য প্রেম জাগিয়ে রেখো।আর তোমার এই পানি দিয়ে মানুষের জীবনের দুঃখ কষ্ট গুলো সব ধুয়ে মুছে নিতে পারলে নিয়ে যেয়েও।
লেখক: শিক্ষার্থী।