• মোছাদ্দিক উজ্জ্বল
আমার মায়ের সহোদর ভাই মানে আমার ছোট মামা খানিক আগে ফোন দিয়েছিলেন। ভীষণ উৎফুল্ল কন্ঠে তিনি বললেন, বাপ, চেয়ারম্যান হয়েই গেলাম। বললাম, ভো
ছোট মামা বললেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়! আমি বললাম, আচ্ছা তাহলে এই অবস্থা।
মামা এইবার খুশিতে গদগদ করে বললেন, দেখ মানুষের ভালোবাসা এমনই। আমি বললাম, সে আবার কি?
মামা বললেন, আমি প্রথমবারের মতো দাঁড়িয়েছি তাই আমার প্রতি সন্মান দেখিয়ে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চায়নি।
আমি ছোট মামাকে বললাম, আচ্ছা মামা, বড় মামা দীর্ঘ ২৫ বছর টানা চেয়ারম্যান ছিলেন। এখন শারীরিক অক্ষমতার কারণে তিনি নির্বাচন করছেন না। তো আমার বড় মামা কি আপনার চেয়ে কম জনপ্রিয় ছিলেন?
ছোট মামা এইবার বললেন, আরে না; বড় দার আশীর্বাদ নিয়েই আমি চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছিলাম।
বল
ছোট মামা বললেন, হ্যাঁ।
বললাম, বড় মামা টানা ৫ বারের চেয়ারম্যান নির্বাচন করার সময় প্রতিটিবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাথে ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং ৫ বারই জিতেছেন।
ছোট মামা এইবার বললেন, তো কি হয়েছে একটু ক্লিয়ার করে বল।
বললাম, ক্লিয়ারের কিছু নাই। আপনি প্রথমবারের মতো নির্বাচনে এসেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া নির্বাচনে জিতে গেছেন। অন্যদিকে আপনার থেকে কয়েক হাজার গুণে জনপ্রিয় আমার বড় মামা ৫ বার নির্বাচন করেই জিতেছেন! আমার বড় মামা ভীষন জনপ্রিয় ছিলেন বলেই তার বিপক্ষের প্রার্থীরা তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে সাহস পেয়েছিলেন অন্যদিকে আপনার নিজের ইমেজ বলে কিছুই নাই তাই আপনার রক্ত চক্ষু সবাই ভয় পায়। এই কারণে আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই!
আমার কথায় ছোট মামা খানিক ক্ষেপে গেলেন বোঝা গেলেও ফোনে কিছুই বলতে পারেননি। শুধু বললেন, তুই আসলেই বাপের চাইতে বেশী বুঝিস। আমি বললাম, হ্যাঁ আপনার কথা বার্তা এমন হবে স্বাভাবিক!
পত্রিকায় দেখেছেন, বাংলাদেশের বাগেরহাট নামক একটি যায়গাতে ১৯ জন ইউ পি চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। ১৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে আমার মামা একজন ভীষণ হেবী ওয়েট প্রার্থী ছিলেন। আমি এই আপন ছোট মামার জন্য গর্বীত নই, লজ্জিত।
কেউ জানুক আর নাইবা জানুক আমরা তো জানি কেন এই ১৯ আসনে বিরোধী প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায়নি! আমার শুধু ভয় একটি যায়গাতে। যেই প্র্যাকটিস এবং প্রাক্টিকাল এরা দেখিয়ে দিয়ে গেলো, শিখিয়ে দিয়ে গেলো তাতে আগামী কোনো এক সময় যখন সুদীন থাকবে না, তখন এদের অবস্থা কী হবে?
আমার এই কথিত জয় বাংলার সন্তানদের জন্য ভীষণ ঘৃণা আর করুণা হয়। শ্রেফ বঙ্গবন্ধু এদের কাছে একটি প্রোডাক্ট এবং আওয়ামীলীগ এদের কাছে একটি বাজার, যেখানে সদাই করা হয়! আফসোস্ আর আফসোস।
বলেছিলাম পলিটিকাল পোস্ট আর দেবো না। কথা রাখতে পারলাম কই!