অবাক দৃষ্টিতে অভিমানী কন্ঠে মরিয়াম বললো, ‘আপা এই আপনার দুই মাস হলো?’ মরিয়ামের কথা শুনে আমিও কিছুটা হতবাক!!!
২০১২ সালে নভেম্বরের শেষ দিকে কোন এক বিকালে প্রথম এই সরকারি বালিকা পরিবারে এসেছিলাম আমি। সে সময় কিছু সময় ওদের সাথে কাটিয়ে ছিলাম, তা এখনো মনে আছে ওদের।
ওই দিন আমাকে ওরা জিজ্ঞাস করেছিল আপা আবার কবে আসবেন? আমি বলেছিলাম ২মাস পর।কিন্তু তার পর আর যাওয়া হয় নি।
আজ ৩ বছর পর গিয়ে মরিয়ামের প্রশ্নের মুখে পড়তে হলো আমার। আমি তো ভেবে ছিলাম ওরা আমাকে চিনবেই না। কি ভুলটাই না ভেবেছিলাম।
।। ওরা গরীব বলে আপনার সাথে কথা বলতে ভয় পায়…
আম্মুর কাজের শুবাদে আজ আবারো ৩ বছর পর গেলাম বাগেরহাট সরকারি শিশু পরিবারে।
সকাল আনুমানিক ১১:৪০। চতুর্থ শ্রেণীর কয়েক জন ছাত্রীকে দেখছি বিদ্যালয় যাচ্ছে। তখন অফিস রুমে জিজ্ঞাস করলাম, হোস্টেলে কেউ আছে কিনা? বললো আছে ৬৭ জন। আমি ভিতরে যেতে অনুমোতি চাই। অনুমোতি পেলাম, বলা হলো গিয়ে দেখে আসেন।
দু’পা সামনে এগোতে না এগোতেই মরিয়াম বলে – আপা এই আপনার দুই মাস হলো?
আমি– আমি ওকে বললাম তুমি আমাকে চিনো?
মরিয়াম- চিনবোনা কেন? সেই দিন বিকালের কথা আপনার মনে আছে? আপনার সাথে কত মজা করলাম আপনাকে আমি, গানও শুনিয়ে ছিলাম।
আমি– সে দিন বিকালের কথা তো মনে আছে, তোমাদের গান শুনেছিলাম, নাচ দেখেছিলাম, কবিতা শুনেছিলাম।
মরিয়াম- আপনার তো সব মনে আছে দেখছি। কিন্তু আমাকে মনে নাই আপনার। মনে থাকবে কি করে তখন আমি কত্ত ছোট ছিলাম, এখন আমি বড় হোইছি, চেহারা পাল্টাইছে না?
আমি– হ্যা, তাই তো।
মরিয়াম- মিষ্টি হেসে বলে আপনি কই যান?
আমি- তোমাদের সাথে দেখা করতে ভিতরে যাচ্ছি। তুমি স্কুলে যাও নি আজ?
মরিয়াম- চলেন আপা আমি আপনাকে নিয়ে যাই। আজ আমার ডিউটি আছে তো। আপনি এমন সময় আসলেন কেউ নাই। তাও চলেন আমার রুমে নিয়ে যাই। সবাই থাকলে কত্ত মজা হোইতো সেই আগের বারের মত তাই না আপা? যখন ওরা শুনবে যে আপনি আইছিলেন ওরা কত আফসোস করবে।
শুনে একটু খারাপ লাগলো। কথা বলতে বলতে আমাকে ও রান্না ঘরে নিলো, ওদের নামাজের ঘর দেখালো, তারপর ওর রুমে নিল।
রুমে ঢুকতে দেখি welcome লেখা ভিতরে গিয়ে দেখি ওর রুমমেট বলছে আপা আপনি আসছেন? আমরা তো ভাবছি আপনি ভুইল্লাই গেছেন। বসলাম ওদের সাথে গল্প করলাম কিছু ছবি তুল্লাম। সময় কিভাবে কেটে গেল টের পেলাম না। রুম থেকে বের হবার সময় মরিয়াম হাতটা ধরে বলছে আপা একদিন বিকালে অনেকককক সময় নিয়ে আসবেন তো? আমার কাছে ওর কথাটা ছোট্ট আবদার মনে হল। সাথে মনে হল আমি জা ছোট্ট দেখি ওটা ওদের বড় একটা আবদার। আসার সময় দরজায় দেখি “আবার আসবেন” এর একটা আকুতি,,,,,,।
প্রধান দরজা দিয়ে যখন বের হয়ে পিছনে তাকাই দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
জীবনের সঙ্গ আমি জানি না। আমার কাছে মনে হয় জীবনটা অনেক ছোট্ট সময়ের। এই ছোট্ট জীবনে কেউ কেউ অনেক ভালো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, কেউ কেউ অনেক খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হয়। গুছিয়ে লিখতে জানি না আমি।
জীবনের শেষ পর্যন্ত কি সঞ্চয় থাকবে জানি না। কিন্তু আজকের এই দিনের কথাটা ভালো কিছু প্রাপ্তি সরুপ থাকবে আমার মনের ডায়রীতে। স্বর্গীয় সুখ কেমন তা জানি না।
তাও বলছি আমার ছোট্ট সময় যেন ক্ষূদ্র স্বর্গীয় সুখের মত মধুর কাটলো…
স্বত্ব ও দায় লেখকের…