• আশা নাজনীন
ফেসবুকের বদৌলত একটা ছেলেকে চিনি। ছেলেটা একটা শিপিং মিলে চাকরি করত। ভালবাসে একটা কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে| একদিন শিপিং মিলে ছাটাই শুরু হয়| ছেলেটার চাকরি চলে যায়| জাতীয় বিশ্যবিদ্যালয় থেকে পাস করা ছেলেটা হন্য হয়ে চাকরি খুঁজতে থাকে। না, চাকরি মেলেনা। ওইদিকে মেয়েটার বিয়ের তোড়জোড় চলতে থাকে।
ছেলেটা ভেঙ্গে পড়ে। আমাকে ইনবক্স করে ‘আপু, আমি কি করব? ইচ্ছে করে বিষ খেয়ে মরে যাই …|’ আমি মানসিক ভাবে সাহস জোগানোর চেষ্টা করি| এপর্যন্ত!!
অনেকদিন ছেলেটার কোন সাড়াশব্দ নেই| চেক করে দেখি একাউন্ত ডি-একটিভেট করা| এভাবে কত কত ছেলেমেয়ে কত-শত দুঃখ নিয়ে খুব গোপনে কেঁদে চলেছে! এতো কষ্টের মাঝেও ওরা জাতীয় সঙ্গীত গায়| গেয়েছে| সারা স্কুল জীবন আমরা পার করেছি-এই সঙ্গীত গেয়ে।
রাজনীতি নিয়ে চরম হতাশ ছেলেটি কিংবা দেশ নিয়ে চরম ত্যক্ত-বিরক্ত মেয়েটি জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গিয়ে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। ‘ও মা, অঘ্রায়নে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ………’ বলতেই আমাদের চোখে পানি চলে আসে।
আমার খুব ভয় হচ্ছে-এই জাতীয় সঙ্গীতকেও আজ আমরা একটা বড় বিভাজনের দিকে ঠেলে দিলাম কিনা! লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত কেন হবে এই ১৬ কোটির দেশে?
আচ্ছা, মানলাম, একটা রেকর্ড তারা [?] করতে চায়| কিন্তু, ৫০ কোটি টাকার এই বিলাসী প্রজেক্ট কি এই দেশে মানায়? কত ছেলেমেয়ে বেকার! কত শিশু রাস্তায় না খেয়ে পড়ে আছে! বিদ্যুতের ওভাবে গ্রামের কত হসপিটালে আজ জরুরী অপারেশন বন্ধ হয়ে আছে! এদের দায়িত্ব সরকারের আগে নাকি রেকর্ড করার দায়িত্ব আগে?
দেশে ৬৪ টি জেলা। প্রতিটি জেলা পর্যায়ে উদ্যোগের মাধ্যমে একটি নির্ধারিত সময়ে স্কুল-কলেজের মাধ্যমে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পারতো সারা দেশ একযোগে| সরকারের নির্দেশ সংবলিত একটি চিঠিই যথেষ্ট ছিল| শুধু একটি সরকারী আদেশ| আর তা না করে এই যে ৫০ কোটি টাকা অপচয় করা হল, এর ফল ভালো হবে না| অনেক বড় একটা ভুল হয়ে গেল…..|