সুন্দরবনে র্যাবের বিশেষ অভিজানের অংশ হয়েছিলেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমের হেড অফ নিউজ আরিফ সাওন। সুন্দরবন থেকে ফিরে শ্বাসরুদ্ধকর সে অভিজানের অভিজ্ঞতা, সুন্দরবনের জেলে পল্লীর জেলেদের জীবন চিত্র, দস্যুতা এবং র্যাবের ভূমিকা তুলে ধরেছেন তিনি বাগেরহাট ইনফোর পাতায়…
২৩ জানুয়ারি র্যাব -৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আনোয়ারুল কবীরের ফোন। বলেন সার্চ অপারেশনে সুন্দরবনের নারিকেল বাড়িয়া এলাকায় যাবেন?
র্যাব সদর দপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অপারেশনে সঙ্গে দুই জন সাংবাদিক নিয়ে যাবেন। তিনি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অলীপ ঘটককে বলেছেন । সে যাবে। এছাড়া আমি যাব কি-না জানতে চাইলেন। আমি আধা ঘন্টা পরে জানানোর কথা বললাম। এরমধ্যে আমি আরটিভির ডেক্স ইনচার্জ রাজীব ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিলাম। সেখানে গিয়ে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিলেন তিনি। এরপর ফোন করে মেজর আনোয়ারুল কবীরকে আমার যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলাম।
ভোর ৪ টার দিকে কাউকে না জানিয়ে রওনা হলাম। মংলা যাওয়ার পর আমাদের সাথে যুক্ত হল কোস্টগার্ড। সকাল সাতটায় কোস্টগার্ডে স্প্রিট বোট ছাড়ল। এর আগে কাটাখালি সকালের নাস্তা খেলাম।
দুই ঘন্টার নদী পথ অতিক্রম করার পর মোবাইলের নেটওয়ার্ক চলে গেল। এরপর থেকে নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেলাম। বন্ধ হয়ে গেল সবার সাথে যোগাযোগ। স্প্রীট বোটের পিছনের দিকে এগিয়ে মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় কি-না দেখছিলাম। অলীপ দাও আমার কাছে আসলেন। আমাকে আকাশের দিকে তাকাতে ইঙ্গিত দিলেন। তাকিয়ে দেখলাম বোটের পিছন পিছন একটি পাখি উড়ে আসছে। অলীপ দা বললেন হয়তো পথ হারিয়েছে। আমি দ্রুত ক্যামেরা নিয়ে পাখিটির ছবি ধরলাম। এভাবে কমপক্ষে ২০ মিনিট বোটের পিছনে ছুটতে ছুটতে পাখিটি চোখের আড়ালে চলে গেল।
চোখে পড়ল নদীর দুই পাশের সুন্দরবন। এতো সুন্দর সুন্দরবন যা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। হারিয়ে গেলাম অন্য জগতে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌছে গেলাম কোস্টগার্ডের কোকিলমনি স্টেশনে। নদীর পাশে বনের মধ্যে এর অবস্থান। এক পাশে নদী অন্য পাশে বন। উপরে উঠে ভাবলাম এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে যদি সারা জীবন থাকতে পারতাম। এখানে এসে সবার সাথে পরিচিত হয়ে নিলাম।
কোকিলমনির পর গন্তব্য এখন নাড়িকেলবাড়িয়া জেলে পল্লী। শুনলাম যেতে হয়তো ৪০ মিনিটের মত লাগবে। কিছুদূর যাওয়ার পর আমাদের দুই জনকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে দেয়া হল। পরার পর বেশ ভালই লাগছিল। সে এক অন্য রকম অনুভূতি।
আমাদের আগে রওনা দেয়া আরেকটি টিমের সাথে ইতোমধ্যে দেখা হল। যাইহোক পৌছে গেলাম নারিকেলবাড়িয়া জেলে পল্লীর কাছে। দূর থেকে দেখলাম কেউ শুটকি নিয়ে ব্যস্ত, কেউ জালে জ্বালানো গাব দিচ্ছে। আবার কেউ রান্না করছে। পল্লীর পাশে নৌযান ভিড়ানোর পর র্যাব দেখে জেলে পল্লীর লোকেরা ঈদের চাঁদ দেখার মত খুশিতে যেন উজ্জীবিত হল। এগিয়ে এলো সবাই।
এখানে দেখলাম জেলেদের জীবন চিত্র। শিরা উপশিরার মত সুন্দবনের রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খাল ও নদী। এসব খাল ও নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা ও সাতক্ষীরার প্রায় সত্তর হাজার জেলে। ইলিশ মৌসুমের পর কার্তিক মাস থেকে শুরু হয় শুটকির মৌসুম। চলে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। এই ৫ মাস দুবলার চর ও নারিকেলবাড়িয়া চর সহ বিভিন্ন চরে জেলেদের বসতি গড়ে ওঠে। ছোট ছোট ঘর করে তারা। দিন-রাত মাছ ধরা আর শুকানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। রোদে পুড়তে পুড়তে তাদের চেহারা নিগ্রোদের মত হয়ে যায়। এছাড়া লবণ পানির প্রভাব তো রয়েছেই। দু বেলা দু মুঠো ভাতের জন্য তারা পরিবার পরিজন ছেড়ে বনে-জঙ্গলে সাগরে কত-ই-না কষ্ট করে।
চরে বসতি করে থাকার কারণে দস্যুদের চাদাবাজি করতে তেমন বেগ পেতে হয় না। তারা জেলে পল্লীতে এসে জেলেদের মাছ-বাজার সহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যায়। এছাড়া চাদা তো রয়েছেই। চাদা না দিলে জেলেদের উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। এমনকি জেলেদের হাত-পা বেধে সাগরেও নিক্ষেপ করে। বাধ্য হয়ে দিতে হয় চাদা। এই পল্লী জেলেদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী।
জেলে পল্লী তার প্রবেশ করার স্টাইলটা অন্যরকম। ঠিক ফিল্ম স্টাইল। তার সোর্স যখন নিশ্চিত করে যে, আসা নিরাপদ ,তখনই সে তার বাহিনীর সদস্যদের সাথে করে আত্যাধুনিক নৌযান নিয়ে গুলি করতে করেত জেলে পল্লীতে প্রবেশ করেন। জেলে পল্লীর জেলেরাও বুঝতে পারেন কে আসছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন জেলেরা। এরপর শুরু হয় মারধর।
নারিকেলবাড়িয়া জেলে পল্লীর জেলে স্বপন বিশ্বাস জানান, জলদস্যুরা জেলে পল্লীতে এসে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাদের ধরে নিয়ে যায়। তাদের বাড়ির দিকে কান্নাকাটির রোল পড়ে যায়। পরে বাড়ি থেকে টাকা এনে জলদস্যুদের দিয়ে তাদের লোক ছাড়িয়ে আনতে হয়।তবু তারা থাকেন। কারণ অন্যকিছু করার সুযোগ নেই বলে।
এই পল্লীর জেলে আজিজুল দস্যুদের অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরে জানান, বেশ কিছুদিন আগে রেজাউল বাহিনী এক জেলেকে ধরে নিয়ে বরফ চাপা দেয়। এরপর তাকে টাকা পয়সা দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়।
তিনি আরো জানান,তাকে ধরে নিয়েও দস্যুরা মারধর করে। তিনি একপর্যায়ে পানি ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে আসেন।
রেজাউল নামের আরেক জেলে জানান, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি বনদস্যু রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী এই চরের জেলেদের উপর হামলা চালায়। এসময় বনদস্যুদের ধরতে ওঁৎ পেতে থাকা র্যাবের সাথে বনদস্যুদের বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে এক র্যাব সদস্য ও এক জেলে গুলিবৃদ্ধ হন।
র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ বাহিনীর প্রধান রেজাউল ওরফে শীর্ষ সহ ৮-১০ জন গুলিবৃদ্ধ হয় ।
র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধের সময় দস্যুদের শীর্ষবাহিনীর নৌযানে অপহৃত দুই জেলে ছিল।তারা হলেন বেল্লাল মাঝি ও নুরুলমাঝি। এরা জানান, বন্দুকযুদ্ধের সময় দস্যুদের নৌযানে ১৯ জন দস্যু ছিল।এদের মধ্যে বাহিনী প্রধান রেজাউলের বুকে গুলি লেগেছে। এছাড়া আরো ৮-১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাতে রেজাউল মারা গেছে। এরপর একপর্যায়ে গাছের সাথে র্যাবের নৌযান বেধে গেলে দস্যু কিছুর গিয়ে বনের ভিতর গুলিবিদ্ধ রেজাউলকে নিয়ে প্রবেশ করে। যে ভাবে গুলি লেগেছে তাতে রেজাউল সহ অন্তত তিন চারজন মারা গেছে।
আরেক জেলের কাছ থেকে জানা যায়, জেলেদের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, র্যাব কত কষ্ট-ই-না করে। ১৯ জানুয়ারি বন্দুকযুদ্ধের কয়েকদিন আগে থেকে র্যাব এই পল্লীর পাশে অবস্থান করে। জেলে সেজে জেলেদের সাথে মিশে যায়। জেলেরা যে ধরনের খাবার খায়, তা তারা খায়। জেলেরা যে পোশাক পরে (ময়লাওয়ালা লুঙ্গি-ছেড়া জামা) সেই ধবনের পোশাক পরে জাল নৌকা নিয়ে মাছ ধরেন।
র্যাবের এক কর্মকর্তা এখানে এক জেলের ভাগ্নি জামাতা হিসেবে আসেন। জেলেদের মাধ্যমে এখানকার বন কর্মকর্তার সাথে যখন পরিচয় হয় তখন তিনি তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। জানা যায়, তিনি র্যাব -৮ এর উপ অধিনায়ক।
যে কয়দিন র্যাব অভিযানে থাকে সেই কয়দিন তাদের ঠিকমত খাওয়া, গোসল, ঘুম হয় না।
র্যাবের অভিযানের ফলে বিগত ৫ বছরের তুলনা দস্যুতা অনেকটা কমেছে। ২০ টি বাহিনীর মধ্যে এখন ৭ টি বাহিনী রয়েছে।
এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হল বনের আরো গহীনে। ১৯ জানুয়ারি দস্যুদের ধাওয়া করার সময় নৌকার সুকানি (মাঝি) গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর যেখানে র্যাবের নৌকা গাছে লেগে গাছ ভেঙে যায়। এসময় আমাদের সাথে ছিল রেজাউল বাহিনীর হাত থেকে উদ্ধার করা ওই দুই জেলে। বনে প্রবেশ করলাম। তল্লাসি চালিয়ে ৬ টি আগ্নেয়ান্ত্র ও ৫১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব।
ওই দুই জেলে জানান, দস্যুরা যখন তাদের ছেড়ে পালিয়ে যায়। তখন বনের মাঝে দেখা মেলে বাঘের সাথে।বাঘ দেখে তারা গাছে উঠে যান। আর নিচ থেকে বাঘ গর্জন করতে থাকে। এসময় ভয়ে তাদের মনে হচ্ছিল দস্যুদের হাত থেকে বাচলেও এবার আর বাচার পথ নেই। তবে বাঘ কিছুক্ষন পরে চলে গেল। নিচে নেমে দেখা হল অজগরের সাথে। আবার গাছে উঠলেন। কিছুক্ষন পরে সেও চলে গেল। এরপর বনের ভিতর থেকে খাল পাশে আসলে র্যাব তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
তিনি আরো জানান,শীর্ষ বাহিনী তাদের দুই জনের পরিবারের নয় লাখ টাকা দাবি করেছিল।
তল্লাসি অভিযানে ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারন সম্পাদক কামাল উদ্দিন সাথে ছিলেন। তিনি দস্যু দমনে র্যাবের ভুমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করে র্যাবকে অভিনন্দন জানান। একই সাথে র্যাবকে আরো বেশি অভিযান প্ররিচালনার অনুরোধ জানান তিনি বলেন,পূর্ব সুন্দরবনে র্যাবের অভিযানের ফলে দস্যুতা অনেকটা কমে এসেছে। তবে পশ্চিম সুন্দরবনে কয়েকটি বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। এরপর ওখানে বনের পাশে দুপুরের খাওয়া শেষে তিনি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেন।
কামাল উদ্দিনের কথা প্রেক্ষিতে র্যাব -৮ এর উপ অধিনায়ক মেজর আনোয়ারুল কবীর বলেন, গত পাঁচ বছরে দফায় দফায় র্যাব-৮ এর অভিযানের ফলে দস্যুতা অনেকটা কমে গেছে। ২০ টি বাহিনীর এখন ফরহাদ,জাহাঙ্গীর বাহিনী সহ ৭ টি বাহিনী রয়েছে। ১৯ জানুয়ারির র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনীও শেষ হয়ে গেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। শিঘ্রই সুন্দরবনের দস্যুদের সমূলে নির্মূল করার আশ্বাস দিলেন এই র্যাব কর্মকর্তা।
এবার আমাদের ফেরার পালা। ভাবলাম অন্ত্র উদ্ধারের সংবাদ পাঠানোর কথা। কোথায় নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে জানতে চাইলাম র্যাব-৮ এর উপ অধিনায়কের কাছে। তখন বেলা সাড়ে ৪টা বাজে।
তিনি জানালেন নারিকেলবাড়িয়া চরে নেটওয়ার্ক পাওয়া যেতে পারে। চরের কাছে এসে মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া গেল। তাও সামান্য। টিভিতে স্ক্রল দিলাম। আর অলীপ দা প্রথম আলোর আহাদ ভাইকে ফোন করে তথ্য দিয়ে সবাইকে জানানোর জন্য বললেন।
এরপর ফুটেজ এডিট করে পাঠানোর জন্য তৈরি হলাম। আমাদের কাছে গ্রামীন ও সিটিসেলের মডেম ছিল। গ্রামীনে সামান্য নেট পাওয়া গেলে স্প্রীড পাওয়া গেলনা। একজনে বললেন জেলেদের কুড়ে ঘরের চালে উঠলে হয়তো নেট পাওয়া যেতে পারে। মই দিয়ে প্রথমে অলীপ দা উঠলেন। এরপর আমি। র্যাবের কয়েকজনে মোবাইলে এই দৃশ্য ধারনের চেষ্টা করলেন। ফুটেজ পাঠানোর চেষ্টা করতে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল। কিন্তু পাঠাতে পারলাম না। শুধু স্ক্রীপ মেইলে এ্যাটাস করলাম।
সন্ধ্যায় সবাই একসাথে রওনা দিলাম। কিছুদূর এসে আমাদের বোট চরে উঠে যায়। প্রথমে কোস্টগার্ডের একজন নেমে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সরে না। এরপর সবাইকে নিচে নামার জন্য বলল। নিচে নেমে আসলাম। শুধু অলীপ দা ছাড়া সবাই। কারণ তল্লাসী অভিযানে বনে নামার সময় অলীদার পায়ে শ্বাসমূল ঢোকে। পরে তার পয়ে ব্যান্ডেজ করা হয়।
চরে নামার পর ঢেউ এসে আমার হাটুর উপর পর্যন্ত ভিজিয়ে দিলো। পায়ের নিচ থেকে বালি সরে যাচ্ছিল। ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছিল। ঢেউ এর পর ঢেউ এসে চরে আচড়ে পড়ছিল। একদিকে যেমন ভাল লাগছিল অন্যদিকে টেনশনও হচ্ছিণ। এসময় গ্রামীন ফোনে একটু নেট পেলাম। বাড়ি এবং ইনজামকে ফোন করে জানালাম সবকিছু।
ওদিকে বোট সারানোর চেষ্টা চলছে। আমাদের সাড়া শব্দ পেয়ে জেলে পল্লীর লোক এলো। একটি ট্রলারে বেঁধে টানতে শুরু করল। কিন্তু আমাদের বোট নড়ছে না। চরের লোকজন আমাদের চরে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেন। তারা জানালেন তিন ঘন্টা পরে রাত ১০ টার দিকে জোয়ার আসলে তারপর যেতে। এরই মধ্যে আরো কিছু লোক আরেকটি ট্রলার নিয়ে আসল।
দুই ট্রলারে বেঁধে ধাক্কা দিলে বোট নামল। কিছুটা স্বস্তি পেলাম। দেখলাম জেলারা কতটা ভাল। জেলেরাই সত্যিকারের মানুষ। এই সত্যকারের মানুষরা কতই অবহেলিত। যারা একদিন মাছ না ধরলে আমাদের সভ্য সমাজের মানুষ গুলোর সামুদ্রিক মাছ খাওয়া বন্ধ। আমরা যে মাছে ভাতে বাঙালি তা তো এদেরই জন্য। তাই এদের উন্নতির জন্য সকলের এগিয়ে আসা উচিত।
রওনা হলাম কোকিলমনির উদ্দেশে। তিনঘন্টা পরে রাত ১১ টার দিকে পৌঁছালাম। এখানে রাতের খাবার খেয়ে রওনা হলাম। আমরা দুই জন খুব ক্লান্ত তাই ট্রলারের ভিতরে আমাদের শোয়ার ব্যবস্থা করতে বললেন র্যাব -৮ এর উপ-অধিনায়ক। ছোট একটু জায়গায় র্যাবের তিন জন আর আমার দুই জন শুইলাম। অলীপ দা পায়ে ব্যাথা অনুভব করছিলেন। যাতে যন্ত্রণা অনুভূত না হয় তার মন অন্য দিকে ঘোরানোর জন্য ভুত এফএম শুনতে বললাম। এরপর ঘুমিয়ে পড়লাম।
ওঠেন ওঠেন শুনে ঘুম ভাঙ্গল। মংলা পৌঁছে গেছি। এমন সময় মা ফোন করেলন। তার কন্ঠ ভারি মনে হচ্ছিল। মংলা চলে এসেছি শুনে স্বস্তি পেল।
যাবে জিনিস পত্র উঠানোর সময়টুকুতে ফুটেজ পাঠালাম। এরপর রওনা দিয়ে সকাল সাতটার দিকে বাড়ি পোছালাম। বাড়ি এসে শুনলাম আমার দু’চিন্তায় কেউ ঘুমাতে পারেন নি।
সবশেষে বলা যায়, সুন্দরবন দস্যু মুক্ত হলে মৎস সম্পদের উপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর ঘুরে দাড়ানো সম্ভব। ইতোমধ্যে দস্যু দমনে র্যাব যে ভুমিকা রাখছে তা সত্যিই প্রসংশনীয়। তারা দেশের জন্য পরিবার পরিজন ছেড়ে খাওয়া-ঘুম ভুলে সাগরে-বনে-জঙ্গলে কত কষ্ট-ই-না করছেন। যেখানে এক শ্রেনীর মানুষ দেশ ধ্বংসের নেশায় মেতে আছে, সেখানে র্যাব কিসের স্বার্থে এসব করছেন? কেন তারা জীবন বাজী রাখছেন? স্বার্থ একটাই; দেশ প্রেম।
এছাড়া আর কোন স্বার্থ আছে বলে আমার মনে হয় না।