ছেলে বা পুরুষ পরিচয় নিয়ে মাত্র ১৩/১৪ বছরের একটি মেয়ের সামনে দাড়াতে বেশ লজ্জা পাচ্ছিলাম আজ। গতকাল ২১ ডিসেম্বর সকালে মেয়েটি সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি আমি। নাম প্রজাপ্রতি (ছদ্দ নাম)। শুক্রবার (২০ডিসেম্বর)দিবা গত রাতে পুরুষ নামের নর পশুদের পাশবিক নির্যাতনের স্বিকার মেয়েটি।
সে দিন রাত শোয়া দুইটার দিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আনা হয় মেয়েটি কে। জ্ঞান শুন্য অবস্থায় বাড়ির পাসের একটি স্থান থেকে উদ্ধারের পর ধর্ষনের বিষয় টি নিশ্চিত হয়ে পরিবারের সদস্যরা নিয়ে আসে বাগেরহাট সদর হাসপাতলে। এখনও এখানেই চিকিৎসাধীন মেয়েটি।
মেয়েটির সম্পার্কে গতকাল প্রথম জানতে পারি বগেরহাট ইনফোর হাসপাতাল করেসপন্ডেন্ট রতন দাদার কাছ থেকে। তিনিই আজ সন্ধায় অনুরোধ করেন মেয়েটিকে দেখতে যাবার জন্য। এর মাঝে তার বাবার সাথেও কথা হয়েছে বেশ কয়েক বার। গতকালই কথা হয় স্থানীয় থানার ওসির সাথেও। গতকাল সারা দিন কম বেশি চেষ্টা করেও কোন কি ছুই পুরো পুরি জানতে পারি না। এক পর্যায় মেয়েটির বাবার সাথে কথা বলতে বলতে মনে হয়েছে তিনিই বোধ হয় প্রভাবিত। কিন্তু আমর কাছে বিষয়টির পরিস্কার হয় আজ সন্ধায়।
হঠাৎ একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন। পরিচয় দিলেন গতকাল ভাই আপনার সাথে কথা হয়েছিল। আপনি ফোন দিয়ে ছিলেন চিনছেন। … স্থান থেকে। চিনতে পারলাম প্রজাপ্রতির বাবা। জানতে চাইলাম থানায় মামলা করছেন কি না। কান্না ভেজা কন্ঠে জবার না। কি বরবো ভাই বলেন। আসতে আসতে বললেন অনেক কথা। জানালেন অসহায়ত্বের কথা। জানালেন অভাবের কথা। প্রভাব আর টাকার কথা। বললেন মামলা করলে ভিটে-মাটি ছাড়া হতে পারি। মামলা চালাব কি করে। আর মামলা করলে পুলিশ টাকা খেয়ে ছেড়ে দিবে।
আপনারা কি সাহায্য করবেন!
নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছিল তখন। একটিু পরে জানাব বলে ফোন রেখে কয়েক জনের সাথে কথা বলি। কথা হয় এটি এনজিও চাকুরিরত এক আইন জীবির সাথেও। এর পর একটু সহস নিয়ে জেলা সদরে চলে আসতে বলি প্রজাপ্রতির বাবাকে। বলি মামলা করতে হবে। এর পর জনতে পরি তাদের বাসায় স্থানীয় চেয়ারম্যান চলে এসেছে। আর কথা বলতে পরিনা। তার পর ফোন ধরা বন্ধ তার।
এর মাঝে রতন দার ফোনে হাসপাতালগামী। পুর পথ ধরে পুরুষ বা ছেলে হবার লজ্জা নিয়ে হাসপাতালের দিকে …। গেট থেকে দাদাকে নিয়ে সোজা মেয়েটির কাছে। হাসপাতালের বেডে প্রজাপ্রতির সামনে দাড়াতেই কেমন যেন লাগছিল। তাই মাথার পেছনে দাড়াই। খানিক খন পর দেখি মেয়টি লজ্জা আর ভয় নিয়ে আমার দিকে তাকাল। সত্যি নিজের পুরুষ পরিচয় নিয়ে লজ্জা লাগছিল তখন।
কথা হয় মেয়েটির সাথে, কথা হয় তার দাদির সাথে। তিনি জানান পুর ঘটনা। এক পর্যায় কেঁদে ফেলার উপক্রম।
গতকালই জেনে ছিলাম ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। তাই চেষ্টা করলাম সে দিকটা খোঁজ নেবার। একটু আগাম জানার সুযোগ হয় সে রিপোর্ট সম্পর্কে। জানতে পারি রিপোর্ট পজেটিভ না হবার সম্ভাবনার কথা। বুঝলাম মেয়ের পিতার ধারনাই ঠিক। আরও একটু নিশ্চিত হবার জন্য একান্তে কথা বলতে চাই মেয়েটির সাথে। এবং পরে দাদির সাথে।
কথা বলে নিজের মতোন নিশ্চত হই ধর্ষনের ব্যাপারে। তবে রিপোর্ট। ফোন দিতে থাকি তার পিতাকে । কিন্তু আর ফোন রিসিভ করে না তিনি।
অনেক পরে ফোন ধরেন, জানান তিনি এখন থানায়, মামলা করছেন, সাথে আছেন চেয়ারম্যান। জানিনা কি মামলা করছেন?
তবে আগামী কাল দেখা করবেন বলে জানান। জানি না কি করতে পারব। কিন্তু এটা মানা যায় না। এভাবে ধর্ষিত হবে একটি মেয়ে কিন্তু বিচার হবে না।
সুযোগ থাকলে দয়া করে মেয়েটি পাসে দাড়ান…..
স্বত্ব ও দায় লেখকের…