টানা অবরোধ-হরতালে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্প। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ লোকসানে ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
আর পর্যটক না থাকায় প্রতিদিন বিপুর পরিমাণের বাজস্ব হারাচ্ছে বন বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বন বিভাগ কর্তাদের আশঙ্কা, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে না এলে চলতি শীত মৌসুমে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়বে সুন্দরবন।
পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শীতের শুরু থেকেই মংলাসহ সুন্দরবন ঘুরতে আসেন দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক ও দর্শনাথী। এ সময় সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, হিরণ পয়েন্ট, কটকা ও কচিখালী এলাকা প্রতিদিন অগণিত পর্যটককের আগমনে উৎসবমুখর থাকে। কিন্তু চলতি পর্যটন মৌসুমের (নভেম্বর থেকে মার্চ) শুরু থেকেই রাজনৈতিক টানাপোড়েন আর দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধে থমকে গেছে এই শিল্প। এতে বন বিভাগ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রব বাগেরহাট ইনফোকে জানান, গত বছরের নভেম্বরে এই কেন্দ্রে চার লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছিল। ডিসেম্বরে রাজস্ব আয় ছিল আট লাখ টাকা।
কিন্তু চলতি বছরের নভেম্বরে মাত্র এক লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে রাজস্ব আয় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বরে আসংকা তার।
তিনি আরও বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে দেশি কিছু পর্যটক সুন্দরবনে এলেও বিদেশি পর্যটক একেবারেই নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত।
সুন্দরবন লাইভ টুরসের স্বত্বাধিকারী ও মংলা লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রহমান বলেন, গত বছরের নভেম্বরে তাঁর লঞ্চে সুন্দরবন ভ্রমণের আটটি টুর হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের নভেম্বরে হয়েছে মাত্র দু’টি টুর। তিনি জানান, শুধু গত মাসে তাঁর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। একই অবস্থা সুন্দরবন-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য লঞ্চ মালিকেরও। রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা না এলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
মংলা টুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মোহাম্মদ দুলাল বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, ‘মংলায় ৫৫টি টুরিস্ট বোট রয়েছে। গত এক মাস ধরে কোনো পর্যটকই নেই সুন্দরবনে। তাই আমাদেরও কোনো আয় নেই। আমরা বোটের কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছি না। তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আর আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
মংলার পর্যটন হোটেল পশুরের ব্যবস্থাপক মো. আবদুল মালেক বলেন, ‘গত বছরের নভেম্বরে আমাদের হোটেলের ১৯টি কক্ষ মাসজুড়েই পর্যটকে ভরপুর ছিল। কক্ষ খালি না থাকায় প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন পর্যটককে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। কিন্তু এবার কোনো পর্যটকই পাচ্ছি না। দু-একজন যাঁরা আসছেন, তাঁরা ব্যবসায়িক কাজে আসছেন। এতে করে গত মাসে আমাদের ছয়-সাত লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
শুধু এখাতের সাথে সরাসরি যুক্ত এসব ব্যাবসায়িই নয় মারাত্মাক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে এখান কার ক্ষুদ্র ব্যাবসায়িরা। পর্যটন মৌসুমে পর্যটক না থাকায় সার্বিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে এখানকার অর্থনীতি।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।