আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খুব শীঘ্রই পিসি কিনবেন অথবা নিকট ভবিষ্যতে পিসি কিনতে পারেন এই সম্ভাবনা রয়েছে। পিসি কেনার ব্যাপারে আপনার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই বা এ ব্যাপারে আপনাকে গাইডলাইন দিতে পারে আশেপাশে এমন কেউ নেই।
দুশ্চিন্তার তেমন কিছুই নেই!! পিসি কেনাটা আপাত দৃষ্টিতে অনেকের কাছে মারাত্মক ভীতিকর মনে হলেও আসলে এটা তেমন জটিল কোন কাজ না। মনে হালকা একটু সাহস আর আত্মবিশ্বাস থাকলেই যে কেউ নিজের পিসির কনফিগারেশন নিজেই ঠিক করে একা একাই পিসি কেনার জন্য বের হতে পারে। তারপরও যাদের মনে এখনো কিছুটা ভীতি কাজ করছে, হয়তোবা আমার এই লেখাটা তাদের মনের ভীতি কাটিয়ে দিয়ে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিতে পারে।
আমার এই লেখায় আমি চেষ্টা করব খুবই সহজবোধ্য ভাষায় আপনাকে পিসি কেনার আগের পূর্ণাঙ্গ গাইড লাইন দিতে। এখানে যেসব কথা থাকবে তার বেশীরভাই আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া আর কিছু সহজ টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো নেট থেকে নেওয়া। সেই সাথে আমি চেষ্টা করেছি এই লেখায় এমন কোন জটিল শব্দের ব্যবহার না করতে, যাতে নতুনদের বুঝতে সমস্যা হয়!!
আর এই কারণে অনেক জটিল টেকনিক্যাল টার্মকে আমি এড়িয়ে গিয়েছি ইচ্ছে করেই!! যারা এসব ব্যাপারে অভিজ্ঞ, তারাও চাইলে আমার এই লেখাটা পড়তে পারেন এবং আমার লেখার ভুলত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিতে পারেন। আশা করছি আপনাদের তথ্যগুলো আমার পোষ্টে সংযুক্ত করে পোষ্টকে আরো সমৃদ্ধ করতে আপনাদের সাহায্য পাব!!
এই লেখায় পরামর্শদানের ব্যাপার পিসি ব্যবহার কারীদের আমি ৩ লেভেলে ভাগ করেছি। তাহলে আসুন জেনে নিই কোন লেভেলের ব্যবহারকারী কেমন হতে পারে!!
- লেভেল-১: এরা সাধারণ পিসি ইউজার। পিসিতে গান শোনা, মুভি দেখা, সখের বশে গেম খেলা এবং হালকা টাইপের কাজ করাই এদের প্রধান উদ্দেশ্য। মোটামুটি মানের পিসি হলেই এদের জন্য যথেষ্ট।
- লেভেল-২: এই লেভেলের ব্যবহারকারীরা কিছুটা লেভেল-১ এর মত হলেও এরা কিছুটা সৌখিন টাইপের। এবং এদের কাজের পরিধি বেশী না হলেও এরা তাদের খুতখুতে স্বভাবের ও দূরদর্শী মনোভাবের কারনে একটু ভালো কিছু আশা করে।
- লেভেল-৩: আমি এদেরকে বলি প্রো-লেভেল। অর্থ্যাৎ এরা তো সৌখিন বটেই সেই সাথে এদের কাজের পরিধি বিশাল। যেমন হার্ডকোর গেমিং, ভিডিও এডিটিং, মাল্টিটাস্কিং ইত্যাদি।
তাহলে আসুন দেখি আপনার ভয় কতটা কাটাতে সাহায্য করতে পারি……!!
প্রসেসর:
এটা কি জিনিস, মনে হয় বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। বছর খানেক আগেও PROCESSOR এর ব্রান্ড সিলেকশন নিয়ে তেমন কোন সমস্যা ছিলনা। মার্কেটে ইন্টেলের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়ে গেছে। যারা প্রসেসর বলতে ইন্টেলকেই বোঝেন তাদের দ্বিধা দ্বন্দে ফেলার জন্য বর্তমানে বাংলাদেশের মার্কেটে এএমডি এর প্রসেসর চলে এসেছে। যদিও মার্কেটে এখনো ইন্টেলের মত এএমডি অতটা শক্ত অবস্থান গাড়তে পারেনি। তারপরও এটা কোন অংশেই ইন্টেলের চাইতে পিছিয়ে নেই। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে এটা ইন্টেলকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। অনেকের মাঝেই এখনো ভুল ধারনা আছে যে, এএমডির প্রসেসর মনে হয় খুব গরম হয়!!! আর এই ধারনাকে ভুল প্রমাণিত করতে বলি, প্রসেসর তো গরম হবেই। আর সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য এএমডির প্রসেসরগুলো সাথে এখন যে হিটসিংক দেওয়া হচ্ছে সেগুলো খুবই কার্যকরী। অতএব এএমডির প্রসেসর অতিরিক্ত গরম হওয়া নিয়ে আর কোন টেনশন রইলনা।
যাইহোক, কোন ব্রান্ডের প্রসেসর কিনবেন এটা সম্পূর্ন আপনার নিজের ব্যাপার। কারণ ইন্টেল ও এএমডি এর মধ্যের যুদ্ধে কেউ কারো কাছে হার মানেনি। যেমন: ইন্টেলের রয়েছে হাইপার থ্রেডিং টেকনোলজি। যেটা সিঙ্গেল কোরের প্রসেসরকে মাল্টিটাস্কিং এর সময় বিভাজন করে ফেলে কাজের গতিকে ত্বরাণ্বিত করে। অপর দিকে এএমডির রয়েছে “হাইপার ট্রান্সপোর্ট” টেকনোলজি। প্রসেসর কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে স্পেসিফিকেশন দেখে নিয়ে সেটার FSB (Front Side Bus) কত, ক্যাশ মেমরী কত? কোন লেভেলের ক্যাশ মেমরী? ক্লক স্পিড কত?- জেনে নিবেন আশা করছি।
FSB (Front Side Bus) বেশী হলে আপনার পিসির পারফর্মেন্স বাড়বে। সেই সাথে ক্যাশ মেমরী বেশী নেবার চেষ্টা করুন। বর্তমানে প্রসেসর গুলোতে L-1 (Level-1), L-2 (Level-2), L-3 (Level-3) ক্যাশ মেমরী দেওয়া আছে। এখানে উল্লেখ্য L-3 (Level-3) ক্যাশ মেমরী নতুন টেকনোলজি। এর পরিধি বড় হলেও এর স্পিড কম। এই তুলানায় L-2 (Level-2) অনেক স্পিডি এবং দামী। তবে সবচেয়ে দামী ও স্পিডি হচ্ছে L-1 (Level-1) ক্যাশ মেমরী। তবে প্রসেসরে এদের পরিমাণ কম। তাই বেশী পরিমাণে L-1 (Level-1) ও L-2 (Level-2) ক্যাশ মেমরী নেবার চেষ্টা করুন। তবে এই কারনে প্রসেসরের দাম কিন্তু একটু বেশীই পড়তে পারে। আর বর্তমানের বেশী L-3 (Level-3) ক্যাশ মেমরী কিন্তু এক ধরনের আইওয়াশ!! নতুন টেকনোলজি বলে অনেকেই এটাকে অতিরিক্ত গুরত্ব দেন। এটা কিন্তু একধরনের বিজনেস স্ট্রাটেজি!! প্রসেসরের ক্লক স্পিড মানে হচ্ছে প্রসেসর কত স্পিডে কাজ করবে, সেটার পরিমাপ।
যেমন: একটি প্রসেসর যদি হয় Core 2 Duo 2.67 Ghz. তবে এখানে 2.67 Ghz হচ্ছে প্রসেসরের ক্লক স্পিড!! আপনি যদি লেভেল-১ ইউজার হন তো আপনার জন্য এই মুহূর্তে ডুয়েল কোর-ই যথেষ্ট। তবে বাজেটে কুলালে চাইলে কোর-টু ডুয়ো (যদি মার্কেটে পাওয়া যায়) ও নিতে পারেন। আর লেভেল-২ দের বলব এই মুহূর্তে বাজারে যেহেতু কোর-টু ডুয়ো বা কোর-টু কোয়াড তেমন এভেইলেবল না, তাই আপনি ইন্টেলের কোর-আই থ্রি বা বড়জোর কোর আই ফাইভ নিতে পারেন (যদি আপনার বাজেটে কুলায়)। তবে আপনি চাইলে এএমডিএর ফেনম সিনিজের ৪ কোরের প্রসেসরও নিতে পারেন। দামের তুলনায় পারফর্মেন্স অনেক বেটার পাবেন। এবার আসি লেভেল-৩ ব্যবহারকারীদের দিকে!!
আপনাদের যেহেতু কাজের পরিধি বিশাল এবং আপনারা অনেকেই প্রো লেভেলের, তাই আপনাদের এই মুহূর্তে ইন্টেলের সেকেন্ড জেনারেশনের কোর-আই সেভেন প্রসেসর নিতে বলব বা এএমডির ফেনম সিরিজের ৬ বা ৮ কোরের প্রসেসর। তবে আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি ভিডিও এডিটিং এর কাজে এএমডির প্রসেসর গুলো ইন্টেলের চাইতে অনেক বেটার পারফর্ম করে। আর সে তুলনায় দামও কিছুটা কম। যেহেতু হার্ডকোর গেমিং, হাই লেভেলের ভিডিও এডিটিং, থ্রি-ডি এনিমেশন এর জন্য বেশ পাওয়াফুল প্রসেসর দরকার, তাই আপনার চাহিদা মেটাতে আপনি বাজারের এই মুহূর্তের শক্তিশালী কোন প্রসেসর কিনতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে এএমডি ৮ কোরের প্রসেসর বাজারে ছেড়েছে, যার কোডনেম “বুলডোজার”। সাধ থাকার পরে সাধ্যে কুলালে এটার দিকে যেতে পারেন।
মাদারবোর্ড:
আপনি যতই আনাড়ি পিসি ইউজার হোন না কেন, এটা কি জিনিস, তা আশা করছি বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। মাদারবোর্ড সিলেকশনের ব্যাপারে আপনার প্রসেসর এর দিকে খেয়াল রাখুন। প্রসেসর যে ধরনের সকেট সাপোর্ট করে অর্থ্যাৎ প্রসেসরের কানেক্টর যেমন, সেটার সাথে ম্যাচ করে মাদারবোর্ড কিনুন। যদিও কথাটা কিছুটা বোকার মত শোনালো। কারন প্রসেসরের সকেটে সিলেকশনের ব্যাপার সত্যিই চিন্তা করার কিছুই নেই। কারন আপনার ভেন্ডর (দোকানদার) অবশ্যই আপনাকে প্রসেসরের সাথে ম্যাচিং করেই মাদারবোর্ড রেকমেন্ড করবে। তারপরও কিছু কথা থেকেই যায়। আপনি যে লেভেলেরই ইউজার হোন না কেন, আপনার প্রসেসরের সাথে ম্যাচিং করে ভালো ব্রান্ডের মাদারবোর্ড কিনুন।
লেভেল-১ ও লেভেল-২ ব্যবহারকারীরা মোটামুটি মানের মাদারবোর্ড কিনলেই যথেষ্ট। তবে লেভেল-৩ দের পরামর্শ দিব দাম বেশী হলেও কোয়ালিটি ফুল মাদারবোর্ড কেনার জন্য। বাজারে যে ব্রান্ড গুলো বেশ সুনামের সাথে চলে আসছে, সেরকমই কিছু কিনুন। সেই সাথে মাদারবোর্ডে বিভিন্ন রকম কানেক্টর গুলো সম্পর্কে একটু খোজ খবর নিন। যেমন: RAM এর স্লট কয়টা, কি টাইপের, কত বাস স্পিডের RAM সাপোর্ট করে, গ্রাফিক্স কার্ডের জন্য স্লট কয়টা, মাদারবোর্ডে আলাদা ভাবে কি কি হার্ডওয়ার সাপোর্ট করবে, পরবর্তী সময়ে আপগ্রেড করতে গেলে কোন লেভেল পর্যন্ত আপগ্রেড করা যাবে, হার্ডডিস্ক কতটুকু সাপোর্ট করবে, মাদারবোর্ডে পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য কয়টা এক্সপ্যানশন স্লট ফাঁকা আছে ইত্যাদি ইত্যাদি!!!
সহজ কথায়, বাজার থেকে যথেষ্ট পরিমান তথ্য সংগ্রহ করে মাদারবোর্ড কেনার জন্য সিদ্ধান্ত নিন। মাদারবোর্ড কোন ব্রান্ড ভালো হবে, এ ব্যাপারে মন্তব্য করাটা যদিও বোকামী তারপরও বলতে পারি, আমার ব্যাক্তিগত পছন্দ হিসেবে মাদারবোর্ডের ব্রান্ড হিসেবে আমি ASUS এবং Gigabyte কে সবার উপরে রাখি।
RAM (Random Access Memory):
এইটা কি জিনিস? খায় না মাথায় দ্যায়- আশা করছি এই টাইপের কোন প্রশ্ন শুনতে হবেনা। কারন আমার জানা মতে ব্লগাররা এখন অনেক স্মার্ট আর সচেতন। বর্তমানে বাজারে ডিডিআর-৩ RAM দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও কোন কোন দোকানে ডিডিআর-২ RAM ও দেখা যাচ্ছে। যদিও আশা করা যায়, এই ডিডিআর-২ RAM কিছুদিনের মধ্যেই জাদুঘরে চলে যাবে। আপনি যদি এখন RAM কিনতে যান তো অবশ্যই মাদারবোর্ড কি টাইপের RAM সাপোর্ট করবে, সেটা বিবেচনা করেই আশা করছি কিনতে যাবেন। তবে এখনকার সব মাদারবোর্ডেই লেটেষ্ট ডিডিআর-৩ RAM এর সাপোর্ট রয়েছে। আবার কোন কোন মাদাবোর্ডে ডিডিআর-৩ RAM এর পাশাপাশি ডিডিআর-২ এর সাপোর্টও রয়েছে। সহজ কথায় আপনার মাদাবোর্ড যে ধরনের RAM সাপোর্ট করবে আপনি সেই ধরনেরই RAM কিনবেন। এবার আসি RAM কেনার ব্যাপারে হালকা গাইড লাইনে!!
আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বেশীর ভাগ ক্রেতাই দোকানে গিয়ে RAM এর ব্রান্ড বা কোয়ালিটির ব্যাপারে যথেষ্ট বেখেয়ালী তাকে। তারা শুধুমাত্র কতটুকু RAM মাদারবোর্ডে ব্যবহার করবে সেই পরিমাণটা বিক্রেতাকে বলে দিয়েই খালাস!! কোন ব্রান্ডের, কত বাস স্পিডের RAM দিতে হবে সেটা বিক্রেতা কর্তৃক নির্ধারিত করা হয়ে থাকে এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখেছি বিক্রেতা বেশী লাভের আশায় অনেক অখ্যাত ব্রান্ডের RAM ক্রেতাকে গছিয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, RAM সিলেকশনও একটা গ্রেট ম্যাটার। যেটা অনেক ক্রেতাই গুরত্ব দেয়না। একটা RAM এর পারফর্মেন্স সেটার চিপের উপর নির্ভর করে। আর নামী দামী ব্রান্ডগুলো সাধারনতঃ ভালো মানের চিপ ব্যবহার করে থাকে। যে কারনে মেমরী একই রকম হলেও তাদের RAM এর দাম অন্য গুলোর চাইতে একটু বেশীই হয়ে থাকে। তাই, আজকে আমার এই লেখা যারা পড়ছেন, তাদের বলব পিসির প্রতিটা হার্ডওয়ার সিলেকশনের ব্যাপারে যথেষ্ট স্মার্টনেসের পরিচয় দিন। কারণ অনেক গুলো হার্ডওয়ারের সম্বন্বয়েই একটা পিসি তৈরী হয়।
যারা লেভেল-১ এবং লেভেল-২ ব্যবহারকারী, তাদের বলব আপনার মাদারবোর্ড যে টাইপের, যতটুকু ক্যাপাসিটির RAM সাপোর্ট করে, তার উপর নির্ভর করে বাজেট অনুযায়ী ভালো ব্রান্ডের RAM কিনুন। আর এক্ষেত্রে আমার মনে হয় এই মুহুর্তে ৪ গিগার নীচে RAM ব্যবহার করাটা চরম বোকামী। সাধ্যে কুলালে আরো বেশী ব্যবহার করতে পারেন। কারণ RAM ই একটা হার্ডওয়ার, যেটা কম দামের মধ্যে পিসির পারফর্মেন্স অনেকাংশে বাড়াতে সাহায্য করে। আর যারা লেভেল-৩ ব্যবহারকারী, তাদের বলব এই মুহূর্তে আপনার সাধ্যে যতটুকু কুলাবে, তার থেকে বেশী পরিমানে RAM কিনুন। এক্ষেত্রে আপনি এই মুহূর্তে ৮ গিগা ডিডিআর-৩ RAM ব্যবহার করতে পারেন। সেই সাথে আপনার মাদারবোর্ড সর্বোচ্চ যে বাস স্পিডের RAM সাপোর্ট করে, সম্ভব হলে সেটাই কেনার চেষ্টা করুন। আপনি যদি মাদারবোর্ডে ৪ গিগা RAM ব্যবহার করতে চান তবে ২ গিগা করে ২ টা RAM ব্যবহার করে ৪ গিগা করার চাইতে একটাই ৪ গিগা ব্যবহার করুন।
এতে করে মাদাবোর্ডের RAM এর স্লট ফাঁকা থাকবে এবং পরবর্তীতে পিসি আপগ্রেড এর সময় ঐ ফাঁকা স্লট গুলোতে আরো RAM লাগিয়ে পিসির পারফর্মেন্স আরো বাড়িয়ে নিতে পারবেন। RAM এর ক্ষেত্রে ডুয়েল চ্যানেল, ট্রিপল চ্যানেল ও কোয়াড চ্যানেল- নামে কিছু টার্ম আছে। ব্যাপার গুলো না বুঝলে বিক্রেতার সাথে কথা বলে জেনে নিন। যদিও বাজারে এখন চায়না RAM দিয়ে ছড়াছড়ি। তারপরও আপনাকে পরামর্শ দিব চায়না RAM কে এভয়েড করে তাইওয়ান এর RAM ব্যবহার করতে। কারন বাজারে এই মুহূর্তে জাপানী RAM গুলো নাই বললেই চলে। RAM এর ব্রান্ড এর ক্ষেত্রে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে A-Data কে প্রেফার করি। তবে বর্তমানে কোন কোন মাদাবোর্ডের ম্যানুয়ালে বেটার সাপোর্টিং RAM এর ব্রান্ড এর ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে। RAM কেনার আগে আশা করছি ব্যাপারটা খেয়াল করবেন।
হার্ডডিস্ক ড্রাইভ:
পিসি রিলেটেড আমাদের যাবতীয় কাজকর্ম সব হার্ডডিস্কে সংরক্ষন করে রাখি। বর্তমানে কাজের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে হার্ডডিস্কের পরিধিও বাড়ছে। যেমন: এখন একটা উইন্ডোজকে জায়গা দিতে গেলে মিনিমাম ২০ গিগা জায়গা দিতে হয়। সেই সাথে আরো অনেক প্রোগ্রাম, মুভি, অডিও-ভিডিও গান ও গেম বর্তমানে বিশাল জায়গা দখল করে নেয়। বর্তমানে হার্ডডিস্ক ড্রাইভ পছন্দের জন্য অনেকেই স্পেসকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আর তাই পিসি কিনতে গিয়ে অনেকেই শুধু হার্ডডিস্ক ড্রাইভ এর স্পেসটা সিলেক্ট করে দিয়েই তারা তাদের দায়িত্ব শেষ বলে মনে করে। আসলে ব্যাপারটা যতটা সহজভাবে নেওয়া হয়, অতটা সহজ না। হার্ডডিস্কেরও কিছু ইন্টারনাল ব্যাপার স্যাপার আছে।
যেমন: বাফার, ঘূর্নন গতি (যেটাকে আরপিএম দিয়ে প্রকাশ করা হয়), ল্যাটেন্সি, ডাটা ট্রান্সফার রেট, ইন্টারফেস ইত্যাদি। যারা এডভান্স ইউজার, তারা আশা করছি এসব ব্যাপারে নেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে হার্ডডিস্ক ড্রাইভ কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবে আমার মত যারা কিছুটা আনাড়ি টাইপের, তারা এসব ব্যাপারে বিশ্বস্ত বিক্রেতার স্মরণাপন্ন হতে পারেন। তবে আপনারা অন্যান্ন ব্যবহারকারীদের মতামতের উপর নির্ভর করেও কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বর্তমানে হার্ডডিস্ক ড্রাইভ এর দাম তুলনামূলক অনেক বেশী। তারপরও আমি লেভেল-১ ব্যবহারকারীদের পরামর্শ দিব এই মূহূর্তে ৫০০ গিগার নীচে হার্ডডিস্ক না নিতে। আর সাধ্যে কুলালে ১ টেরা নিতে পারেন। লেভেল-২ ও লেভেল-৩ ব্যবহারকারীদের জন্য ১ টেরা স্পেসের হার্ডডিস্ক ড্রাইভ নেওয়াটা মাষ্ট। তবে লেভেল-৩ ব্যবহারকারীদের বলব স্পেসের পাশাপাশি হার্ডডিস্ক ড্রাইভ এর ইন্টারনাল স্পেসিফিকেশন দেখে হার্ডডিস্ক কেনার চেষ্টা করুন। যেমন বর্তমানে বাজারে সাটা-২ ইন্টারফেসের ৭২০০ আরপিএম এর হার্ডডিস্ক ড্রাইভ বেশ এভেইলেবল। তবে সাটা-৩ হার্ডডিস্কও বাজারে খুব শীঘ্রই চলে আসবে। লেভেল-৩ ব্যবহারকারীদের মধ্যে যারা মাল্টিমিডিয়া ও এইচডি ভিডিও নিয়ে যারা প্রো লেভেলে কাজ করবেন তারা সম্ভব হলে ১০০০০ আরপিএম এর হার্ডডিস্ক ড্রাইভ কেনার চেষ্টা করুন। যদিও স্পেসের তুলনায় দাম অনেক অনেক বেশী। হার্ডডিস্ক এর ব্রান্ড ও মডেল হিসেবে এই মুহূর্তে Western Digital Caviar Black টা আমার মোষ্ট ফেবারিট। যদিও দামটা তুলনামূলক একটু বেশীই বলা চলে।
আর যারা অতি উৎসাহী, তারা সলিড স্টেট ড্রাইভের কথা স্বপ্নের মধ্যে রাখতে পারেন। কারন এটার ২৫০ গিগার যে দাম, সেটা দিয়ে ১ টেরা সাইজের আরো দশটা হার্ডডিস্ক কিনতে পারবেন।
গ্রাফিক্স কার্ড (পিসিআই এক্সপ্রেস কার্ড):
অনেক ব্লগারই বেশ নড়েচড়ে বসেছেন মনে হয়!! গ্রাফিক্স কার্ড এর ব্যাপারে বর্তমানে বাজারে রাজত্ব করে আসছে মাত্র দুইটা কোম্পানী। এএমডি আর এনভিডিয়া। যদিও এরা মূলত গ্রাফিক্স কার্ডের জন্য চিপসেট বানায়। আর সেই চিপসেট গুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন কোম্পানী তাদের গ্রাফিক্স কার্ডগুলো বানায়। বছরখানেক আগে হলে দুইটা আলাদা কোম্পানীর চিপসেট নিয়ে কমপেয়ার করে একটাকে বিজয়ী ঘোষনা করতে পারতাম। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূন্ন ভিন্ন। এখন কেউ কারো চাইতে কম না। তবে আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা ও নেটের কিছু ফোরাম সাইট থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যতটুকু ধারনা করতে পেরেছি, তাতে মনে হয়েছে কম বাজেটের গ্রাফিক্স কার্ডগুলোর মধ্যে এনভিডিয়ার চিপ দ্বারা প্রস্তুতকৃত কার্ডগুলোর পারফর্মেন্স তুলনামূলক ভালো। আর যদি বাজেট বেশী হয় তো সে ক্ষেত্রে রেডিওন চিপসেটের কার্ডগুলো তুলনামূলক ভালো।
গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে চাইলে পুরো একটা পোষ্ট লিখে ফেলা য়ায়, কিন্তু সেগুলোতে এতটাই টেকনিকাল তথ্য থাকত যে অনেকেরই মাথার উপর দিয়ে চলে যেত!! যাইহোক, গ্রাফিক্স কার্ড সিলেকশনে আমি কোন লেভেল অনুসারে পরামর্শ দিবনা। কিন্তু কোন কাজের জন্য গ্রাফিক্স কার্ডের কি কি বৈশিষ্ঠ্য থাকা উচিত সেটা নিয়ে আলোচনা করব।
অনেকেই গ্রাফিক্স কার্ডে থাকা মেমরী নিয়ে তাদের কার্ডের পারফর্মেন্স পরিমাপ করে থাকে। যেটা একেবারেই ভুল। একটা কার্ড কতটা ভালো পারফর্ম করবে সেটা যে কয়টা বিষয়ের উপর নির্ভর করে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন হচ্ছে- চিপসেট!! কার্ডের প্রাণ হচ্ছে এইটা!! এটা কতটা শক্তিশালী, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই: রেডিওন ৪৬৭০ চিপসেটের ১ গিগা একটা কার্ডের চাইতে অবশ্যই একটা রেডিওন ৪৮৫০ চিপসেটের ৫১২ মেগাবাইট কার্ড অনেক ভালো পারফর্ম করবে।
তবে আপনি যদি বড় মনিটরে বেশী রেজুলেশনে গেম খেলেন তো তখন কার্ডের মেমরী খুবই গুরত্বপূর্ন। সেই সাথে কার্ডে থাকা বিভিন্ন পোর্ট সম্পর্কেও খেয়াল রাখতে হবে, যেমন- ডিভিআই বা এইচডিএমআই পোর্ট, ডিসপ্লে পোর্ট, ভিজিএ, টিভি আউটপুট ইত্যাদি। আরো কিছু প্রো লেভেলের ব্যাপার গুলো নিয়ে আলোচনা করা দরকার ছিল কিন্তু ব্যাপারগুলো অনেকেরই কাছে জটিল মনে হতে পারে, তাই আপাতত এড়িয়ে যাচ্ছি। গ্রাফিক্স কার্ডের ব্রান্ড হিসেবে আমার পছন্দের একেবারেই প্রথম অবস্থানে রয়েছে- ASUS, Gigabyte, Sapphire.
সাউন্ড কার্ড:
যারা মুভি বেশী দেখেন, গেম খেলেন, সর্বোপরি ভালো সাউন্ড কোয়ালিটি আশা করেন, তাদের বলব মাদারবোর্ডের বিল্টইন সাউন্ড কার্ডের মায়া ত্যাগ করে মোটামুটি দামের মধ্যে প্রায় ২৫০০-৩০০০ টাকার মধ্যে সাউন্ড কার্ড কিনে নিতে পারেন। তবে যারা আরো একটু আশা করেন তাদের বলব ৭০০০-৮০০০ টাকার মধ্যে ক্রিয়েটিভের এক্স-ফাই সিরিজের একটা সাউন্ড কার্ড কিনে নিতে পারেন।
আমার দৃষ্টিতে এটা এমন একটা ইনভেষ্টমেন্ট, যেটার আউটপুট আপনার কাছে কখনোই পুরাতন মনে হবেনা। অর্থ্যাৎ আপনাকে যেমন বিভিন্ন গেমের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়ত গ্রাফিক্স কার্ড আপগ্রেড এর চিন্তা করতে হয় কিন্তু এই সাউন্ড কার্ডের ক্ষেত্রে তা হবেনা আশা করছি।
অপটিকাল ড্রাইভ:
বুঝলেন না এটা জিনিস?? আপনারা কেসিং এ সাথে যে ডিস্ক ড্রাইভ ব্যবহার করেন, সেটাকে সার্বিক ভাবে অপটিকাল ড্রাইভ বলে। আপনি যে লেভেলেরই হোন না কেন, আপনার জন্য এই মুহূর্তে একটা ডিভিডি রাইটার কেনা মাষ্ট!!
কারন এগুলোর দামও তেমন বেশী না। তবে যারা লেভেল-৩ এ আছেন, তাদের মধ্যে যারা সৌখিন এবং খরচ করার মত যথেষ্ট সামর্থ্য আছে, তারা চাইলে ব্লু-রে ড্রাইভ কিনতে পারেন। দাম প্রায় ১২০০০ টাকা হতে পারে। অপটিকাল ড্রাইভ এর ব্রান্ড হিসেবে অনেকেই অনেক নামই সাজেষ্ট করতে পারেন। তবে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ASUS, LITEON পছন্দ করি।
সিপিইউ কুলার:
নামটা কি একটু বিদঘুটে মনে হচ্ছে?? একটু বুঝিয়ে বললে আশা করি বুঝতে পারবেন। আপনার প্রসেসর এর মাথা ঠান্ডা রাখতে এটার উপর যে কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, সেটাকেই সিপিইউ কুলার বলা হয়। এখন হয়তোবা ভাবতে শুরু করে দিলেন যে, আরে!! এটা তো প্রসেসর কেনার সময় সাথে থাকেই। নতুন করে কেনার আর কি দরকার!! হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন। তবে প্রসেসরের সাথে যে কুলারটা পাওয়া যায়, সেটা কতটা কার্যকর এটা আশা করছি অনেকেই ধারনা করতে পারবেন। আপনার সখের পিসি কতটা ভালো পারফর্ম করবে সেটা নির্ভর করবে আপনার পিসির হার্ডওয়ার গুলো কতটা ঠান্ডা থাকবে!! আর একটা ব্যাপার জেনে রাখুন, আপনার পিসির হার্ডওয়্যারের অত্যাধিক তাপমাত্রা সেগুলোর স্থায়িত্ত্ব দিন দিন কমিয়ে দেয়।
লেভেল-১ ও ২ কে বলব আপনাদের জন্য আলাদা কোন সিপিইউ কুলার এর দরকার নেই। প্রসেসর এর সাথে যেটা পেয়েছেন, সেটাই আপনার জন্য যথেষ্ঠ। তবে সখ করে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন। তাতে লাভ ছাড়া ক্ষতি হবেনা। তবে যারা লেভেল-৩ এ আছেন, তাদের বলব- প্রসেসর এর সাথে দেওয়া সিপিইউ কুলার টা ব্যবহার না করে বাজেটে কুলালে আপনারা ন্যুনতম ৪৫০০-৫০০০ টাকার মধ্যে আলাদা একটা সিপিইউ কুলার কিনে নিন। বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে Thermaltake ব্রান্ডের কিছু সিপিইউ কুলার পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
পাওয়ার সাপ্লাই:
অনেকেই বলতে পারেন, এটা নিয়ে আলাদা ভাবে বলার কি দরকার!! কেসিং কিনলে সাথে তো পাওয়া যাবেই!! যারা এরকম ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন তাদের বলছি, একটু আপডেট হোন!! আপনি কেসিং এর সাথে যে পাওয়ার সাপ্লাই টা পেয়েছেন সেটার উপর বিশ্বাস পুরোপুরি না রাখাই ভালো। কারন পাওয়ার সাপ্লাই এর গায়ে ৪৫০ ওয়াট লেখা থাকলেও আসলে এগুলো ২৫০ ওয়াটের বেশী হবার কথা নয়। আর কোয়ালিটি তেমন ভালো নয়।
আর তাই আপনারা যারা পিসি কিনবেন, তারা তাদের হার্ডওয়ারের রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ী অর্থ্যাৎ আপনার পিসির হার্ডওয়ার গুলোর যতটুকু পাওয়ার লাগবে তার সাথে আরো ৫০ ওয়াট এক্সট্রা হিসেব করে নিয়ে আলাদা ভালো একটা পাওয়ার সাপ্লাই কিনুন। তবে যারা পাওয়ারফুল প্রসেসর, গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করবেন, তারা তাদের হার্ডওয়ারের রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ী পাওয়ার সাপ্লাই কেনার চেষ্টা করুন। এখনকার মোটামুটি দামের মধ্যে যে গ্রাফিক্স কার্ডগুলো আছে সেগুলোর বেশীর ভাগের জন্যই আলাদা পাওয়ার কানেক্টরের দরকার হয়। আর তাই পাওয়ার সাপ্লাই কেনার সময় সেগুলোর কানেক্টরের ব্যাপারের একটু খেয়াল রাখুন।
যারা লেভেল-১ এ আছেন, ধরেই নিলাম তাদের কাজের পরিধি তেমন বিশাল নয় এবং বাজেটও তেমন নয়, তারা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ভালো ব্রান্ডের কেসিং কিনুন। আশা করছি এ ব্যাপারে নীচের দিকে আলোচনা করব।
বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে Thermaltake, Gigabyte এর মত কিছু ভালো ব্রান্ডের পাওয়ার সাপ্লাই পাওয়া যাচ্ছে। আপনার হার্ডওয়ারের চাহিদা অনুযায়ী খোঁজ খবর নিয়ে বাজেটে যেটা কুলায় সেরকম একটা পাওয়ার সাপ্লাই কিনে নিতে পারেন। এ ব্যাপারে আরো একটু টেকনিক্যাল তথ্য দেবার ছিল। কিন্তু এমেচার অনেকের কাছেই ব্যাপারটা জটিল মনে হতে পারে, তাই আপাতত দিলাম না।
কেসিং:
আমার তো মনে হয় অনেক মানুষই শুধু এটার ডিজাইন দেখে পছন্দ করে থাকেন। কেউ কেউ তো এটার ব্যাপারেচরম উদাসীন। এ ব্যাপারে আমার পরামর্শ হচ্ছে, কারো কথায় কান না দিয়ে যতটা বড় পারা যায় ততটা বড় সাইজের কেসিং কিনুন।
যাতে কেসিং এর ভেতরে আপনার সেটআপ করা হার্ডওয়ারগুলো একটু হলেও দম ফেলার সুযোগ পায়। অনেককেই দেখি ব্রিফকেস আকারের কেসিং কিনতে। যেটা একেবারেই ভুল। আপনার কেসিং এর মধ্যে যদি বাতাস চলাচলের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে তো হার্ডওয়ারগুলো খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যেতে বাধ্য!! এমন একটা কেসিং পছন্দ করুন যেটাতে যথেষ্ট স্পেস ও কুলিং সিস্টেম রয়েছে, সেই সাথে আলাদা ভাবে কয়েকটা কুলিং ফ্যান লাগানোর মত সুব্যবস্থা রয়েছে- এরকম ধরনের কেসিং কেনার চেষ্টা করুন।
যারা লেভেল-৩ এ আছেন তাদের বলব ভালো মানের বড়সড় একটা কেসিং কিনুন, যেটাতে লিকুইড কুলিং এর পাশাপাশি উপরে বর্ণিত অন্য সব ব্যবস্থা আছে। দাম হয়তোবা বেশী পড়ে যেতে পারে। পিসির হার্ডওয়ারের কুলিং এর কথা চিন্তা করলে এটাই বেষ্ট অপশন। বাংলাদেশের বাজারে Thermaltake ব্রান্ডের বেশ কিছু কেসিং পাওয়া যাচ্ছে যেগুলোর মধ্যে কয়েকটা বেশ বাজেট ফ্রেন্ডলী। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
যারা লেভেল-১ এ আছেন তাদের বলব ২৫০০-৩০০০ টাকার মধ্যে ভালো কোন ব্রান্ডের কেসিং কিনে ফেলুন। যেটাতে মোটামুটি ভালো মানের ২৫০ ওয়াটের পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়া থাকে। এক্ষেত্রে আপনি ব্রান্ড হিসেবে Space বা Fox edge কে বেছে নিতে পারেন।
অনেক তো হল। এবার আসি পিসি কেনার আগের কিছু প্রস্তুতির ব্যাপারে!! কিছু টিপস্ আছে, যেগুলো পিসি কেনার আগে মাথায় রাখলে ভবিষ্যতে অনেক ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়….।
তাহলে আসুন জানি কি সেই টিপস্ গুলো………..
ধৈর্য ধরে তথ্য সংগ্রহ করুন: আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি পিসি কেনার সিদ্ধান্ত নেবার পরে কেমন জানি আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারেনা। যেটা একেবারেই বোকামীর লক্ষন। আমি পরামর্শ দিব আপনি যে কনফিগারেশনেরই পিসি কিনতে চান না কেন, তা কেনার আগে বাজারে গিয়ে হার্ডওয়ারগুলোর ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করুন। এমনও হতে পারে আপনার কনফিগারেশন যদি ফিক্সড করা না থাকে তো বাজারে যাওয়ার পরে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আপনি নিজেই নিজের পিসি কনফিগারেশন ঠিক করে নিতে পারবেন।
নিকট ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পিসির কনফিগারেশন ঠিক করুন: অনেকেই পরামর্শ দিবে যে, আপনার বর্তমানের কাজের চাহিদার উপর নির্ভর করে পিসি কনফিগারেশন ঠিক করুন। কথাটার সাথে আমি পুরোপুরি একমত নই। আমার দৃষ্টিতে আপনি আজকে কি কাজে পিসি ব্যবহার করবেন, সেই চিন্তার পাশাপাশি নিকট ভবিষ্যতে পিসি দিয়ে কি কাজ করতে পারেন, সেই ব্যাপারেও আগাম চিন্তা করে পিসির কনফিগারেশন ঠিক করুন। তবে এক্ষেত্রে বাজেটের দিকেও খেয়াল রাখুন।
সঠিক বিক্রেতা বা প্রতিষ্ঠান সিলেকশনে সতর্ক হোন: আপনি কোথায় থেকে অর্থ্যাৎ কোন বিক্রেতার কাছ থেকে পিসি কিনবেন, এটা সিলেকশনে একটু সর্ত হোন। কারন আমার দৃষ্টিতে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার। যে বিক্রেতা বা প্রতিষ্টান অনেকদিন ধরে সুনামের সাথে ব্যবসা করছে, যাদের আফটার সেলস সার্ভিস ভালো, ওয়ারেন্টি সাপোর্ট অনেক বেটার- তাদের কাছ থেকে পিসি কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর এসব তথ্য আপনি অন্য পিসি ব্যবহারকারীদের ফিডব্যাক থেকেই পেতে পারেন। এসব কথা এজন্যই বললাম যে, ভুল বিক্রেতা সিলেকশন করে পরে কোন সমস্যায় পড়ে সাপোর্ট চাইতে গেলে যেন বিক্রেতার গোমড়া মুখ দেখতে না হয়।
ওয়ারেন্টির ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বলুন: পিসি কেনার আগে তার হার্ডওয়ার গুলোর ওয়ারেন্টির ব্যাপারে খোলাখুলি ভাবে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করে এর সাথে সম্পর্কিত সব কিছু জেনে নিন। যেমন: কোন হার্ডওয়ারের ওয়ারেন্টি কত দিনের? ওয়ারেন্টি পাওয়ার টার্মস এন্ড কন্ডিশন কি? ওয়ারেন্টি সাপোর্ট পেতে কতদিন সময় লাগবে? ওয়ারেন্টিতে কোন হার্ডওয়ার পুরোপুরি চেন্জ করে দিবে নাকি রিপেয়ার করে দিবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। যদি কোন প্রোডাক্টের সাথে ওয়ারেন্টি কার্ড থাকে তো সেগুলোও সংগ্রহ করে সংরক্ষন করুন।
হার্ডওয়ারের ড্রাইভার সিডি ও ম্যানুয়াল গুলো বুঝে নিন: পিসি কেনার সময় হার্ডওয়ারে সাথে দেওয়া বিভিন্ন রকম সিডি ও ম্যানুয়াল গুলো বুঝে নিন। কারন এগুলো ভবিষ্যতে যে কোন সময় কাজে লাগতে পারে। সেই সাথে যে দোকান থেকে পিসি কিনছেন তাদের কাছ কাছ থেকে ক্রয়ের ক্যাশ মেমো এবং এর সাথে রিলেটেড যাবতীয় ডকুমেন্ট সঠিক ভাবে বুঝে নিন।
প্রোডাক্টের দামের চাইতে কোয়ালিটির দিকে বেশী গুরুত্ব দিন: আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি একই মডেলের বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রোডাক্টের মধ্যে দামের পার্থক্য দেখা যায়। দাম একটু বেশী হলেও কোয়ালিটি দেখে প্রোডাক্ট কিনুন। আর এক্ষেত্রে খুবই সহজ সমীকরন হচ্ছে যে, বাজারের অখ্যাত বা অল্প পরিচিত ব্রান্ডকে এভয়েড করার চেষ্টা করুন।
মোটামুটি অভিজ্ঞ কাউকে সাথে নিন: আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আপনি পিসি কিনতে যাবার সময় এক্সপার্ট কাউকে খুঁজে না পেলে মোটামুটি পিসির হার্ডওয়ার সম্পর্কে জানে বা ধারনা রাখে, এমন কাউকে সাথে নিন।
উপরের টিপস্ গুলো আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে সংগ্রহ করেছি। তাই ভাবলাম যারা পিসি কিনতে যাবেন বা এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে তাদের সাথে শেয়ার করতে করি। পরিশেষে, সবাইকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন আশা করছি।