নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটে হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।
সোমবার (১৩ জুলাই) পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত রোগী ৩২৩ জন। গেল ৫ জুলাই এই সংখ্যা ছিল ২০০ জন। অর্থাৎ এক সপ্তাহে বাগেরহাট কোভিড রোগী বেড়েছে ১২৩ জন।
জেলায় করোনা সংক্রামণ বৃদ্ধির এই হারকে উদ্বেগজনক বলছে স্বাস্থ্য বিভাগও।
বাগেরহাট জেলায় প্রথম করোনা শনাক্ত হয় গত ১৪ এপ্রিল। এর ১৬ দিন পর শনাক্ত হয় দ্বিতীয় আক্রান্ত রোগী। জেলায় করোনা শনাক্তের প্রথম মাসে ১৪ মে পর্যন্ত আক্রান্ত ছিল মাত্র ৭ জন। তাদের সকলেই ছিল ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা।
রোজার ঈদের আগে পর্যন্ত জেলা কোভিড আক্রান্ত রোগী ছিল ১০ জনেরও কম। তবে ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই আক্রান্ত বাড়ছে। শুরু হয়েছে স্থানীয় সংক্রমণও। ফলে শেষ সপ্তাহে আক্রান্তের হার এখন পর্যন্ত সর্বচ্চে পৌঁছেছে। বাগেরহাটের ৯ উপজেলার মধ্যে সর্বচ্চ শনাক্ত করোনা রোগী ফকিরহাটে। সেখানে আক্রান্ত একশ ছুইছুই।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘মূলত রোজার ঈদের পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক দিনে আমরা সর্বচ্চ ৩৪ জন কোভিড পজেটিভ পেয়েছি। আর শেষ দুই সপ্তাহে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।
এই অনিয়ন্ত্রিত সংক্রামণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, ঈদে বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুল সংখক মানুষের বাগেরহাটে আসা এবং বর্তমান অবাধ যাতায়াত।
ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, বর্তমানে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে দেরি হচ্ছে। বাগেরহাটে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় সংগৃহীত নমুনা খুলনায় পাঠাতে হয়। দেখা যাচ্ছে কয়েকদিন কোন রিপোর্টই আসছেনা। আবার হুট করে তিন চারদিনের রিপোর্ট এক সাথে আসছে। তখন সংখ্যাটা বেশি দেখা যায়।
প্রথম দিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ব্যাক্তিদের করোনা শনাক্ত হচ্ছিল। এখন পাশের জেলা খুলনাতেই প্রচুর সংক্রামণ। জেলায় সর্বচ্চ আক্রান্ত ফকিরহাটের সাথে খুলনার সীমানা। সেখানে অবাধ যাতাযাতে সংক্রামণ বেড়েছে।
আগে কেউ বাইরে থেকে এলে আমরা জানাত, তাকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে স্যাম্পল নিতাম। কিন্তু এখন তা করা সম্ভব হচ্ছেনা। গণপরিবহণ খুলে দেওয়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত বেড়েছে। প্রচুর মানুষ আসা যাওয়া করছে। ফলে অতি ছোঁয়াচে করোনার সংক্রামণও দ্রত বাড়ছে।
প্রথম থেকেই কম শনাক্তের কারণে করোনা সংক্রমিত জেলার তালিকায় শেষের সারিতে থাকা বাগেরহাটে সংক্রামণ যে হারে বাড়ছে তা যেকোন সময় নিয়ন্ত্রণহীন পর্যায়ে যাবার আশঙ্কা করছেণ অনেকে।
বাগেরহাট সদর হাসপাতাল এবং ফকিরহাট ও রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক চিকিৎসকের বিশ্লেষণ, পরীক্ষায় কোভিড শনাক্ত ৩২৩ জন হলেও পরীক্ষার বাইরে থাকা রোগী এর কয়েকগুন। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে শতকারা ৮০ ভাগের উপসর্গ থাকেনা। তাদের পরীক্ষাই হচ্ছে না। অথচ তাদের মাধ্যমেও সংক্রমণ হচ্ছে। ফলে জেলা আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার বলে ধারাণা ওই চিকিৎসকদের।
ডা. কে এম হুমায়ুন কবিরও বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, অনেকেই হয়তো আত্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন তিনি টেরও পাননি। তবে দিন দিনন আক্রান্ত বাড়ছে। সংক্রামণ রোধে অনেক চেষ্টাই সফল হচ্ছেনা অবাধ যাতাযাতের কারণে।
তার মতে, বর্তমানে ঢাকার চেয়েও বাগেরহাটের জন্য বড় ঝুকি খুলনা। সেখানে সংক্রামনের হার যেমন বেশি। তেমনি বাগেরহাটের মানুষের সাথে নিয়মিত যাতায়াত। অবাধ যাতায়াত বর্তমান সংক্রামণের অন্যতম কারণ। পাশাপাশি রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হওয়াও সংক্রামণ ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, একজন নমুনা দিয়ে হয় তো একদিন, দুদিন বা পাঁচদিন অপেক্ষা করছে। এর পরও রিপোর্ট না পেলে তারা ধরে নিচ্ছেন নেগেটিভ। তখন বের হচ্ছেন, সবার সাথে চলছেন। কিন্তু ১০ দিন, ১৪ দিন পরে রিপোর্ট আসছে পজেটিভ, সেক্ষেতে তাদের মাধ্যমে সংক্রামণ হচ্ছে।
আবার অনেকেরই উপসর্গ নেই। তবে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের মাধ্যমেও সংক্রামণ বাড়ছে। আর কোয়ারেন্টাইন করাও সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, রোজার ঈদে আগেই আমরা বলেছিলাম, কতটা সংক্রামণ হবে এটা ঈদের ১৫ দিন পর বোঝা যাবে। তার ফলাফলটা আমরা এখন দেখছি। একই ভাবে সামনের রোজার ঈদটাও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম মেনে না চললে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
এখন পর্যন্ত বাগেরহাটে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত ৩২৩ জনের মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ১৯০ জন। মারা গেছেন ৭ জন, বাকিরা চিকিৎসাধীন।
এসআই/আইএইচ/বিআই/১৩ জুলাই, ২০২০