পরীক্ষার জন্য ১৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হওয়া এক শিশু রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে পরিবারের সাথে বাগেরহাটে গ্রামের বাড়ি ফিরেছে। পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়ায় পরই পরিবার ওই কিশোরকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ে।
রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি ১২ বছর বয়সী কিশোরটি গত ২৬ এপ্রিল বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামে ফেরে। তাদের বাড়ি ওই গ্রামে।
করোনা ‘পজেটিভ’ জানার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারটির সাথে যোগাযোগ করলেও তারা তাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ৮ চিকিৎসকসহ ৩০ জনের করোনা শনাক্তের পর ওই কিশোরকে বাগেরহাট ফেরার বিষয়টি জানাজানি হয়।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ২টি বাড়ি লকডাউন করেছে। ওই দুই বাড়িতে মোট ৬টি ঘর রয়েছে।
ঢাকার ওই কিশোরের নমুনা পরীক্ষার ফল গত ২২ এপ্রিল জানা যায়। এতে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পজেটিভ আসে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির।
হার্টে জন্মগত ত্রুটির (টেট্রালজি অব ফেলট) থাকায় ওই কিশোর মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই সমস্যার জন্যই গত ১৭ এপ্রিল পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকার হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে ভর্তি করা হয়।
করোনা ‘পজেটিভ’ কিশোর বাগেরহাটে ফিরেছে!ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গিয়ে চিকিৎসাধী এক কিশোরের করোনা শনাক্ত হয়েছে। স্বজনরা তাকে নিয়ে বাগেরহাটে ফিরে গেছে বলছে ওই হাসপতাল কতৃপক্ষ।
Posted by bagerhatinfo.com on Tuesday, April 28, 2020
ডেমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনি মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, সকালে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জনসহ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন ওই বাড়িতে যায়। তারা ওই কিশোর ও তাঁর স্বজনদের সাথে কথা বলেছেন। পরিবারটির আর্থিক অবস্থাও ভালো না। হয় তো আত্মঙ্ক থেকেই তারা বাড়ি ফিরে এসেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে খাদ্য সামাগ্রী দেওয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস সন্দেহে হৃদরোগ হাসপাতাল গত ১৯ এপ্রিল ওই কিশোরকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিতে বলে। সেখানে নমুনা দিয়ে স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কিছু না জানিয়েই ওই কিশোরকে নিয়ে চলে আসে। আইইডিসিআরে ওই নমুনা পরীক্ষায় ২২ এপ্রিল করোনা ‘পজেটিভ’ বলে রিপোর্ট আসে।
তখন করোনা শনাক্তের বিষয়টি হৃদরোগ হাসপাতালকে জানানো হয়। কিন্তু এর আগেই তারা হাসপাতাল ছাড়ায় কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দেওয়া ওই কিশোরের বাবার নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানিয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থান জানতে চাইলেও পরিবারটি কোন সহযোগীতা করছিল না। বরং তাদের সন্তান সুস্থ আছে বলে জানায়।
‘পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় বুধবার সকালে তাদের সন্ধান পেয়ে আমরা সেখানে যাই। কিশোরের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করা হয়। সে সুস্থ, স্বাভাবিক রয়েছে। বাড়িতে রেখেই তাকে চিকিৎসা দেওয়া হবে’ বলে জানান সিভিল সার্জন।
বুধবার পুনরায় ওই কিশোরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া তার সংস্পর্শে আসা পরিবারের সদস্যসহ ১৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।
ডা. কবির আরও বলেন, তাদের আশপাশে বাড়ি ঘর বেশ দূরে দূরে। সেখানে দুটি বাড়ি বাড়িটি অবরুদ্ধ করে লাল পতাকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) পর্যন্ত জেলায় ১৯২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১৫২টি নমুনা পরীক্ষা ফল পাওয়া গেছে। যার মধ্যে মাত্র একটি মাত্র নমুনা পজেটিভ ছিল। ফরিদপুরের ভাঙা থেকে বাড়ি আসা জেলার চিতলমারী উপজেলার ওই ব্যক্তিরও চিকিৎসা হয় নিজ বাড়িতে থেকেই। তেমন উপসর্গ না থাকা ওই ব্যক্তি শারীরিকভাবেও সুস্থ ছিলেন।
পরে দুই দফা নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা নেগেটিভ এসেছে। তিনি সুস্থ হওয়াতে ৯ দিন আগে বাগেরহাটকে আবারও করোনামুক্ত ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ বিভাগ।
অন্যদিকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকসহ ৩০ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় সেখানের আরও ১৫ জন চিকিৎসক এবং ৩৭ জন নার্সকে সঙ্গনিরোধে (কোয়ারেন্টাইন) পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার এক চিকিৎসকের ‘পজিটিভ’ মিলিয়ে সেখানকার ৮ চিকিৎসকের নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা পড়ার কথা জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক কাজল কুমার কর্মকার।
এটি/আইএইচ/বিআই/২৯ এপ্রিল, ২০২০