নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
করোনা–পরিস্থিতিতে শ্রমিকসংকটে মাঠের পাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। এমন অবস্থায় বাগেরহাটের গরিব চাষিদের পাশে দাঁড়াতে তাদের মাঠের ধান কেটে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
এর মাধ্যমে স্বেচ্ছাশ্রমে গরিব, হতদরিদ্র ও বর্গাচাষিদের ধান কেটে তাদের ঘরে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে সিপিবি, কৃষক সমিতি, ক্ষেত মজুর সমিতি, ছাত্র ইউনিয়ন ও যুব ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।
রোববার (১৯ এপ্রিল) সকালে বাগেরহাট শহরতলির হাড়িখালী–পুটিমারির বিলের দুজন কৃষকের ধান কাটার মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু করেছে সিপিবি বাগেরহাট জেলা শাখা।
এদিন তারা বিলের বর্গাচাষি অনিক হাসান ও শাহানারা বেগমের ৬ বিঘা জমির ধান কেটে দেয়। প্রথম দিনে ধান কাটায় সিপিবির বাগেরহাট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল, সদস্য জাহিদুল ইসলাম যাদু, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেলাল হোসাইন বিদ্যা, জেলা শাখার সদস্য দেবব্রত দাস পলাশ, শুভজিৎ দেসহ ১০ নেতা-কর্মী অংশ নেন। পর্যায়ক্রমে জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক চাষিদের ধান কেটে দেওয়া হবে বলে জানান তাঁরা।
করোনার এই সময়ে বিনা পারিশ্রমিকে ধান কেটে দেওয়ার এমন উদ্যোগে খুশি কৃষক ও এলাকাবাসী। কৃষক অনিক হাসান বলেন, ‘সাধারণ সময়েও ধান কাটার মৌসুমে কৃষিশ্রমিকের মজুরি বেশি থাকে। একজন শ্রমিকের জন্য ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক দিতে হয়। করোনা–পরিস্থিতিতে আরও বেশি টাকায়ও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এমন সময় কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা আমার ধান কেটে দেওয়ার কথা বলেন। সকালে এসেই ধান কাটা শুরু করেন। আমি কী বলব ভাষা নেই, খুবই খুশি।’
করোনা–পরিস্থিতিতে এভাবে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোয় কমিউনিস্ট পার্টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
সিপিবির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়েই কৃষকেরা ধান কাটার জন্য শ্রমিকসংকটে থাকেন। করোনার কারণে এবার এই সংকট আরও বাড়বে। আবার অন্য এলাকা থেকে শ্রমিক আনাটাও ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য বোরো মৌসুমে কৃষকের ধান তোলায় রাজনৈতিক, সামাজিক উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।’
সেই বিবেচনায় কৃষকের পাশে দাঁড়াতে আমাদের এই উদ্যোগ। এর মাধ্যমে আমরা তরুণদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গড়ে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র কৃষকের ধান কাটার মাধ্যমে সহায়তার বার্তা দিতে চাই। পাশাপাশি যাঁদের ধান হয় না, তাঁদের প্রতিবেশীদের ধান কাটায় সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।
সবাইকে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লাভজনক দামে সরকারকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে এখন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার করুন। করোনা–পরিস্থিতিতে জাতি এক ধরনের ক্রান্তিকাল পার করছে। আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে গরিব, হতদরিদ্র ও বর্গাচাষিদের পাকা ধান কেটে দিচ্ছি। এটা চলমান থাকবে।’
সরকারিভাবেও কৃষকের ধান কাটতে শ্রমিক ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাগেরহাট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর। বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, জেলায় এবার ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর ৮০ শতাংশই হাইব্রিড। জেলায় মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিকটন ধান।
তিনি আরও বলেন, ২৫ এপ্রিল নাগাদ এই ধান পুরোদমে কাটা শুরু হবে। চলবে ১৫ মে পর্যন্ত।
এজি- এসআই/আইএইচ/বিআই/১৯ এপ্রিল, ২০২০