জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের সাংসদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন (৮০) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বৃহষ্পতিবার দিনগত রাত ১২ টা ৪০ মিনিটে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস তাগ করেন তিনি।
মোজাম্মেল হোসেন বেশ কিছু দিন ধরে কিডনীসহ নানা রোগে ভূগছিলেন। পেশায় চিকিৎসক মো. মোজাম্মেল হোসেন আমৃত্যু বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
পাঁচবার এই সাংসদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে, পুত্রবধূ, নাতনিসহ অসংখ্য গুনাগ্রাহী রেখে গেছেন। তার একমাত্র ছেলে অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন খুলনা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি।
শুক্রবার সকালে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। অনেকেই ভিড় করেন বাগেরহাট শহরের রেলরোরে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে।গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রথম নামাজের জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মোজাম্মেল হোসেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে সেখান থেকে হেলিকপ্টার যোগে তার মরদেহ বাগেরহাটে আনা হয়। পরে রেলরোডে আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রয়াত এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বাদ জুমা বাগেরহাট শেখ হেলাল উদ্দীন জেলা স্টেডিয়ামে ডা. মোজাম্মেল হোসেনের দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ নেওয়া হয় মোরেলগঞ্জে।
সেখানকার এসিলাহা স্কুল প্রাঙ্গনে মরহুমের তৃতীয় ও কচুবুনিয়ায় তার গ্রামের বাড়িতে চতুর্থ জানাজার নামাজ শেষে মুক্তিযোদ্ধা ডা. মোজাম্মেল হোসেনকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকু।
বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ মো. মোজাম্মেল হোসেন ১৯৪০ সালের পহেলা আগষ্ট বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার কচুবুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম রহমত আলী হাওলাদার ও মা ময়ফুল বিবি। স্কুল থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। ষাটের দশকে ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। পরে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পাশ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে এমবিবিএস পাশ করে চিকিৎসা পেশায় যোগদেন।
ছাত্রঅবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত মোজাম্মেল হোসেন ১৯৭৯ সালে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই থেকে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ১৯৯১ সালে বাগেরহাট-১ আসন থেকে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর ১৯৯৬ সালে বাগেরহাট-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে শেখ হাসিনার গঠন করা মন্ত্রী সভায় সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মোট পাঁচ বারের সংসদ সদস্য।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকু সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিসিএস পাশ করে ডা. মোজাম্মেল হোসেন তার নির্বাচনী এলাকা শরণথোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার দরিদ্র অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। তার মৃত্যুতে রাজনীতিতে এক শূন্যতার সৃষ্টি হল। তিনি দীর্ঘদিন দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। জেলার আন্দোলন সংগ্রামে মোজাম্মেল হোসেন ছিলেন অগ্রভাগে। দলের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত।
১৯৭৯ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তারপর থেকে একাধারে তিনি দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১ সালে বাগেরহাট-১ আসন থেকে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে বাগেরহাট-৪ আসনে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে শেখ হাসিনার গঠন করা মন্ত্রী সভায় সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৯, ২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
জানাজায় মানুষের ঢল:
বাগেরহাটে শুক্রবার বাদ জুমা জেলা স্টেডিয়ামে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে তাঁকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। জানায় অংশ নেন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকু, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিনসহ দলের কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নেতৃবৃন্দসহ কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ তার জানাজায় অংশ নেন। ডা. মোজাম্মেলের নির্বাচনী এলাকা মোরেলগঞ্জ ও গ্রামের বাড়ির জানাজা গুলোতে হাজারও মানুষের ঢল নামে। তার জানাজায় অংশ নিতে এবং শেষ বারের মত তাকে দেখতে দুপুর থেকে সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন তারা। জানাজায় তার ছেলে মাহমুদ হোসেন কান্ন জড়িত কন্ঠে বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
তার মৃত্যুতে গভির শোক জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগেরসহ বিভিন্ন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। এদিকে তার মৃত্যুতে কোরআন তেলাওয়াত, কালো ব্যাচ ধারণ দোয়া অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।
এজি/আইএইচ/বিআই/১০ জানুয়ারি, ২০২০/আপডেট