বিশেষ প্রতিনিধি, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট জেলায় এখনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে সীমান্তবর্তী তিন জেলাতে এরই মধ্যে করোনা রোগী পাওয়া গেছে।
ফলে মানুষ থেকে মানুষের শরীরে ছড়ানো অত্যান্ত ছোঁয়াচে এই ভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে এই মুহূর্তে বাগেরহাট।
বাগেরহাটের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর; উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমে যথাক্রমে ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর এবং খুলনা বিভাগের খুলনা জেলার অবস্থান। বাগেরহাটকে ঘিরে থাকা এই তিন জেলার মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গোপালগঞ্জ। গত বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় প্রথম দু’জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
আর খুলনা ও পিরোজপুরে সোমবার (১৩ এপ্রিল) দুজনের করোনা শনাক্তের কথা নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। খুলনায় আক্রান্ত ব্যক্তি নগরীর ছোট বয়রা করিমনগর এলাকার বাসিন্দা। পিরোজপুরে আক্রান্ত যুবকের বাড়ি মঠবাড়িয়া উপজেলার ধনিসাফা ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামে।
খুলনায় নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি (৬২) অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। তিনি তাবলিগ জামায়াতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ৪ এপ্রিল খুলনা ফিরেন। খুলনা সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ জানান, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরের তাবলিগ জামায়াতে বের হন ওই ব্যক্তি। প্রথম ৪০ দিন কয়রা উপজেলায় থাকার পর ৭০ দিন ছিলেন নরসিংদী জেলার মনোহরপুর ও শিবপুর উপজেলায়। আর ফেরার আগে শেষ ১০ দিন ছিলেন ঢাকায়। তবে তার শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ নেই।
পিরোজপুরে আক্রান্ত যুবক নারায়ণগঞ্জ ফেরত। ১০ এপ্রিল করোনার উপসর্গ নিয়ে বাড়ি ফেরার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এরআগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমডাঙ্গা মল্লিকের মাঠ এলাকায় করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত প্রথম দু’জন স্বামী-স্ত্রী। পাঁচ দিন আগে তারা মাদারীপুর জেলার শিবচর থেকে বেড়িয়ে বাড়ি ফেরার পর পরীক্ষায় তাদের করোনা ধরা পড়ে। এর দুদিন পর ১১ এপ্রিল, শনিবার টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আরও এক ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়।
এই তিন জেলায় আক্রান্ত সবাই দেশের অন্যতম করোনা ক্লাস্টার নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও মাদারীপুরের শিবপুর ফেরত।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ এখন ক্লাস্টারের চেয়ে বেশি কিছু। এটি এখন বাংলাদেশে সংক্রমণের এপিসেন্টারে পরিণত হয়েছে।’
‘ঢাকার মধ্যে টোলারবাগসহ পুরো মিরপুরেই আমরা রোগী পাচ্ছি, এছাড়া ওয়ারি, বাসাবো এলাকায় সংক্রমণ পাচ্ছি বেশি। তবে ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে গাইবান্ধায় সংক্রমণ বাড়েনি। কিন্তু মাদারীপুরে কয়েকজন রোগী সেরে ওঠার পর আবার সংক্রমিত হওয়াটা চিন্তার বিষয়।’
বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শুরু থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন জাতিসংঘের বৈশ্বিক সমন্বয়ক ডা. মনিকা বেগ। বর্তমান সংক্রমণের অবস্থা বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন খুব তাড়াতাড়ি উপরে উঠছি। মনে হয়না এটা আর এখন ক্লাস্টারের মধ্যে আছে।’
এরই মধ্যে খুলনা বিভাগের দুই জেলাসহ দেশের প্রায় ৪০ জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। বাগেরহাটের পার্শবর্তী তিন জেলার মত ওই সব অঞ্চলেও করোনা এসেছে ক্লাস্টার এলাকাগুলো থেকে।
করোনার সংকট স্পষ্ট হওয়ার পর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে দলে দলে মানুষ এসেছে বাগেরহাটেও। তাই এখনো কেউ সনাক্ত না হলেও করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে আছে জেলার মানুষ।
বাগেরহাটে এখন পর্যন্ত পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তির করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির। তারা কেউ আক্রান্ত নয়। তবে বর্তমান অবস্থায় অবহেলা না করে সবাইকে ‘ঘরে থাকার’ আহ্বান তার।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা না মেনে রাস্তায় ঘোরাফেরা ও সামাজিক দূরত্ব না মানায় বাগেরহাট জেলায় গেল পাঁচ দিনে ৩৬৬ জনকে অর্থদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এসআই/আইএইচ/বিআই/১৪ এপ্রিল, ২০২০