নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটে চলছে ১০ দিনব্যাপী বিজয় উৎসব ও বইমেলা ২০১৯। প্রথম বারের মত বাগেরহাটে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে আয়োজিত এই বইমেলা পাঠক-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে।
প্রতিদিনই মেলায় বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। বাড়ছে স্টলগুলোর বিক্রিবাট্টা।
‘এসো বিজয় আনন্দে, বইমেলা প্রাঙ্গণে’ শ্লোগান বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন এই বইমেলার আয়োজন করে। গেল ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বইমেলা চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সকলের জন্য উন্মুক্ত। মধ্য পৌষের হাড়কাপানো শীত উপেক্ষা করে শিশু-কিশোরসহ নানা বয়স ও শ্রেণিপেশার মানুষের আছনে বইমেলা প্রাঙ্গণে।
এদিকে বইমেলা উপলক্ষে স্বাধীনতা উদ্যানের বিজয় মঞ্চে প্রতিদিন থাকছে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তবে শীতের তীব্রতা কম থাকলে বইমেলা আরও বেশি জমজমাট হতো বলে মন্তব্য করেছেন মেলায় আসা বিক্রেতা ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা।
মেলায় অংশ নিয়েছে ঢাকা ২৭টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এসব স্টলে বিভিন্ন লেখকের নানা ধরনের বই পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দুই শিশুসন্তান নুসরাত ইসলাম তৃষা ও তৈয়বা ইসলাম তৃপ্তিকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন শহরের খারদ্বার এলাকার শারমিন সুলতানা। দুই মেয়েকে নিয়ে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখছিলেন তিনি। কেনেন শিশুতোষ বই।
তৈয়বা ইসলাম বলেন, ‘বইমেলা এসে খুব ভালো লাগছে। আম্মু আমাকে তিনটি বই কিনে দিছে। একটি আঁকার বইও কিনছি। এখানে অনেক অনেক বই। আমি আবারও আসবো বই কিনতে।
শারমিন সুলতানা বলেন, শহরে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার মতো জায়গা খুব একটা নেই। কিছু জায়গা থাকলেও তাতে পরিবেশের কারণে বসাও দায় হয়ে পড়ে। ডিসেম্বর মাস ছুটির সময়। বাচ্চারা একটু বেরতে চায়। বইমেলার এখানে এসে স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে। বাচ্চারা মনের আনন্দে বইয়ের স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে। বই পছন্দ করছে। প্রতিবছর এমন আয়োজন, আর বইমেলার পরিশর আরও বাড়বে এটাই প্রত্যাশা।
প্রথম ছেণির ছাত্রী নিশাত তাসলিম এসেছিল চাচার সঙ্গে। তারও পছন্দ ছবি আঁকা আর কার্টুনের বই। মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে বলে জানায় নিশাত।
এদিকে মেলায় শিশুতোষ বইয়ের যেমন কাটতি রয়েছে, তেমনি উপন্যাস, গল্প, কবিতা ও ইতিহাসনির্ভর বইগুলোরও চাহিদা রয়েছে।
বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক রবিউল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমাদের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই অনেকটা ফেসবুক আর ইন্টারনেট নিয়েই বেশি সময় কাটায়। আসলে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। বই মানুষকে সমৃদ্ধ করে, আত্মিক বোধ জাগ্রত করে। হাতে বই নিয়ে পড়ার মজাই আলাদা। এ জন্য আমি নিয়মিত বই পড়ার চেষ্টা করি। আর নতুন নতুন বই পড়ার জন্য বিভিন্ন সময় বইমেলায় ছুটে যাই। সবাইকে মেলায় এসে বই দেখা ও পড়া এবং নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকার অনিন্দ্য প্রকাশনীর মার্কেটিং কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেণ, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বইমেলায় অংশ গ্রহণ করে। বাগেরহাটে বিজয় উৎসব ও বইমেলায় তাদের প্রকাশনার এটাই প্রথম আসা। প্রায় ৫০০ লেখকের বিভিন্ন ধরনের দেড় হাজার বই রয়েছে তাদের স্টলে। দর্শনার্থী আর ক্রেতাদের মাঝেও ভালো সাড়া, বিক্রিও হচ্ছে। ক্রেতাদের আগ্রহী করতে সবধরণের বইয়ে ২৫% ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
ভাষাচিত্র প্রকাশনার আফরাজ জান্নাত অনন্য জানান, বইমেলায় বিভিন্ন বয়সের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকরা আসছেন। তারা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বই পড়ছেন এবং ক্রয় করছেন। আশার চেয়েও বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন।
এদিকে বইমেলার শেষ দিনে প্রণোদনা পুরস্কার দেয়া হবে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। শ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক দল, শ্রেষ্ঠ স্টল এবং সর্বোচ্চ বই ক্রেতা ও প্রতিষ্ঠান এই পুরস্কার পাবেন।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ বলেন, সমৃদ্ধ দেশ গঠনে আলোকিত চেতনার বিকল্প নেই। বই পড়া, বই পড়ার অভ্যাস করা এবং সৃনজনশীলতা চর্চা করার জন্য বিজয় উৎসব ও বইমেলার এই আয়োজন। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলা তাদের লক্ষ্য।
বই তাদের চেতনা শানিত করবে, তারা মেধা মননের সত্যকারের চর্চা করতে পারবে। প্রকৃতি মানুষ হিসেবে বিকাশে বইয়ের বিকল্প হতে পারেনা। তাই সকল অভিভাবকে তাদের সন্তানদের নিয়ে বইমেলায় আসার আহ্বান জানান তিনি।