নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট বিএনপির দুই পক্ষের প্রকাশ্য বিরোধের মাঝে জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
এ টি এম আকরাম হোসেন তালিমকে আহ্বায়ক ও মোজাফফর রহমান আলমকে সদস্য সচিব করে ৩৫ সদস্যের ওই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নতুন এই কমিটিতে সদ্য বিদায়ী জেলা কমিটির সভাপতি এম এ সালামকে এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়েছে। এছাড়াও তার অনুসারিদের অনেককেই সদস্য পদে রাখা হয়েছে। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ২১ ডিসেম্বর বাগেরহাট জেলা বিএনপির এই আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে সদ্য বিলুপ্ত কমিটি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য তুলে ধরেন।
তবে কেন্দ্র বাগেরহাটের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করায় জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি এম এ সালাম তা প্রত্যাখান করেছেন। তার অনুসারী নেতাকর্মীরা ওই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার বিকেলে শহরের সরুই এলাকার বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তাঁর অনুসারিরা।
নতুন আহ্বায়ক কমিটির ফলে ২০১৭ সালে গঠিত জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম এবং সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বাবুর কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে।
নতুন এই কমিটির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম সালাম বিরোধী। তিনি এক সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে মাঝে দীর্ঘ সময় রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় না থাকলেও গেল জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকে আবারও সক্রিয় হন। দলীয় গ্রুপিং এ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্রও কেনেন। আর সদস্য সচিব মোজাফফর রহমান আলম জেলা বিএনপি’র সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি এম এ সালামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
নতুন জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটিতে কামরুল ইসলাম গোরা, শমসের আলী মোহন, খাদেম নিয়ামুল নাসির আলাপ ও ড. ফরিদুল ইসলামকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। বাকিরা সব সদস্য।
এদিকে, কেন্দ্র বাগেরহাটের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করায় জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি এম এ সালাম ও তার সমর্থকেরা তা প্রত্যাখান করে কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। শনিবার বিকেলে তিনি এই কমিটি প্রত্যাখান করে নতুন করে আবার কমিটি দিতে তার অনুসারিদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সমাবেশ থেকে সদ্য ঘোষিত কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দিতে কেন্দ্রকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন সদ্য বিদায়ী সভাপতি এম এ সালাম।
এদিকে, নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণায় বিএনপি’র দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একাধিক নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দিয়ে এম এ সালাম দলের হাল ধরেন। সেই থেকে তিনি দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তিনি দলের হাল ধরায় বিএনপির এক সময়ের ত্যাগী অনেক নেতাকর্মীই তা মেনে নিতে পারেননি। জেলা ছাত্রদলের নতুন গঠন করার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ্যে বিএনপি’র দুটি পক্ষ দাড় হয়।
এরপর থেকে সালাম বিরোধীরা বিএনপির রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম ও এ টি এম আকরাম হোসেন তালিমকে মনোনয়ন দেয়। পরে কেন্দ্র সালামকে চুড়ান্ত প্রার্থী করে। নির্বাচনের পর তাদের মধ্যে আবারও শুরু হয় অভ্যন্তরীণ বিরোধ।
জেলা যুবদলের কমিটি গঠনের পর থেকে দুই পক্ষ আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করতে শুরু করে। শনিবার জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম এবং সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বাবুর নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙে কেন্দ্র নতুন আহ্বায়ক কমিটি দেয়ায় বিরোধ আরও চাঙ্গা হলো বলে মনে করেন ওই নেতারা।
জানতে চাইলে সদ্য বিলুপ্ত হওয়া জেলা কমিটির সভাপতি এম এ সালাম তার প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, দুর্দিনে দলের হাল ধরে ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে এই নেতারা কোথায় ছিলেন। যাকে দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে তিনি এক সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেক নেতা নিষ্ক্রীয় ও প্রবাসী। বিগত দিনে কেন্দ্র কোন কর্মসূচি দিলে সেসময়ে তাদের কাউকে পাশে পাওয়া যায়নি।
‘যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের অনেকেই এলাকায়ও থাকেন না। এই কমিটির অনেকেই অন্তত ২০ বছর আগে দল ত্যাগ করেছেন। আবার মৃত ব্যক্তিকেও কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী এই কমিটিকে মেনে নিতে পারছেন না।’ তারা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।
এই কমিটি বহাল থাকলে আগামীতে বাগেরহাটে সরকার বিরোধী আন্দোলন থমকে যাবে এবং বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে এই কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দিতে আহ্বান জানান বিদায়ী সভাপতি।
সালামের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে নতুন কমিটির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম এই প্রতিবেদককে বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপিকে বাগেরহাটে কুক্ষিগত রেখেছিলেন আগের সভাপতি এম এ সালাম। এই কমিটির মধ্যে দিয়ে বিএনপি তার ভারমুক্ত হলো। সালামের সেচ্ছাচারিতার কারনে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ছিল। তার কারনে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন দলের অধিকাংশ ত্যাগী নেতাকর্মী।
তার মতের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে গেলে তিনি নেতাকর্মীদের সাথে অশোভন আচরণ করতেন। তার অনুগতদের নিয়ে পকেট কমিটি করেছেন তারও অসংখ্য তথ্য প্রমাণ আমার কাছে আছে। দলের দলবিমূখ নেতাকর্মীরা নতুন এই কমিটি পেয়ে দারুণ খুশি। নতুন এই কমিটি আগামীতে দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করবে বলে মনে করেন এই নেতা।
এজি/আইএইচ/বিআই/২২ ডিসেম্বর, ২০১৯