নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার কারণে সুন্দরবনের দুবলার চরের আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসরের এবারের আয়োজন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা শেষে এই তথ্য জানানো হয়।
সুন্দরবনের গভীরের দুবলার চরের আলোরকোলে শত বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এই লোক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করা হয়। তিথি অনুযায়ী আগামী ১০ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত এই উৎসব আয়োজনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।
রাস উৎসব ও পুণ্যস্নান ঘিরে প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার তীর্থযাত্রী, দর্শনার্থী ও পর্যটক সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী দুবলার চরের আলোরকোলে জড় হন।
দুবলার চর রাস উৎসব জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে জনমালের নিরাপত্তার বিবেচনায় পুর্ণার্থী, পুজারী ও দর্শনার্থীদের এবার দুবলার রাস উৎসবে যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে বড় ধরণের দুর্যোগের আশঙ্কায় এবারের রাস উৎসব বন্ধ ঘোষনা কর হয়েছে। তবে উৎসব না হলেও সংক্ষিপ্ত পরিসরে মন্দিরে পূজা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালিত হবে।
আলোরকোলে সাগর তীরের ওই উৎসবকে ঘিরে মেলা ও উৎসবের আয়োজন হয়ে আসছে প্রায় দেড়শ বছর ধরে। এলাকাটি সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্চের অন্তরগত এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল। উৎসবে যেতে তাই বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়।
দুর্যোগময় আবহাওয়ার কারণে সুন্দরবন বন বিভাগও উৎসবে যেতে পাশ (অনুমতি) বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সুন্দরবন ও উপকূলে জেলেদেরও নিরাপদে ফিরে আসতে বলছে বন বিভাগ ও আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ, চট্টগ্রাম, পায়রা ও কক্সবাজারকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
দুবলার চর রাশ উৎসবা জাতীয় কমিটি সহ-সহভাপতি বাবুল সরদার বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবের এবারের আয়োজন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে পূজাসহ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান চলবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির ওই সভায় পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, জেলার নয়টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপিসব বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সুন্দরবনের দুবলার চরের রাস উৎসব ছাড়াও দুবলার বিভিন্ন চরে শুটকি মৌসুমকে ঘিরে কয়েক হাজার জেলে অবস্থান করছেন। সেখানে জেলেদের জন্য ৩টি সাইক্লোন শেল্টার আছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই দুবলার চরের শুকটি পল্লীর জেলেদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া চেষ্টা চলছে। এজন্য কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সহযোগীতা নেওয়া হবে।
‘সতর্ক সংকেত বাড়লে উপকূলীয় লোকজনকে দ্রুত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
পিআ/এসআই/বিআই/৮ নভেম্বর, ২০১৯