শহর প্রতিনিধি, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় শহরের পুরতন বাজার এলাকার পলি ক্লিনিকে ওই ঘটনা ঘটে।
নিহত শাহানাজ পারভিন (৩০) জেলার শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা এলাকার রাজু পাইকের স্ত্রী। তারা দু’জনেই চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
স্বজনদের অভিযোগ, মৃত্যুর পরও ওই নারীকে স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসার জন্য খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ক্লিনিকের সত্বাধিকারী ও পরিচালক ডা. সুনীল কুমার দাস।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা ওই ক্লিনিক ঘিরে ভিড় করে এবং হইচই শুরু হয়। তারা ক্লিনিক ওই চিকিৎসকের বিচার দাবি করে।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ক্লিনিকে পুলিশ অবস্থান নেয়। ঘটনার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নিহত ওই নারীর মরদেহ ওই ক্লিনিকেই ছিল।
নিহতের বোন নার্গিস আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ডেলিভারির জন্য সোমবার তাঁর বোনকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। দুপুর ৩টার দিকে ডাক্তার সিজার করতে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নেয়। প্রায় এক ঘন্টা পর একটি ছেলে শিশু হয়।
‘সিজার শেষে পৌনে ৬টার দিকে আমার বোনকে ওটি থেকে বের করে বেডে দেয়। এরপর বেশ কিছুক্ষণ সে সুস্থই ছিল। ৬টার দিন থেকে তার ব্যথা উঠতে থাকে, খিচুনি শুরু হয়। সে সময় ডাক্তার ও নার্সদের ডাকা হলেও আসেনি। কিছুক্ষণ পর অবস্থা আরও খারাপ হলে ডাক্তার ও নার্সরা আসে। তখন ডাক্তার জানতে চায় তার পেশার বেশি নাকি।’
নার্গিস আক্তারের অভিযোগ, তাঁর বোনের অবস্থা যখন অনেক খারাপ, মুখ দিয়ে লালা বেরিয়ে আসছে তখন তখন ডাক্তার-সেবিকারা এসে অক্সিজেন দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর বোন মারা গেছে।
‘মৃত্যুর খবর গোপন করে ওই চিকিৎসক সে সময় রোগীকে স্যালাইন পুশ করে খুলনায় নিয়ে যেতে বলেন।’
ওই প্রসূতির ফুফু সুফিয়া আক্তারের ভাষ্য, অসুস্থ হওয়া পর থেকে শাহানাজ বাগেরহাট শহরের পুরতন বাজারে তাঁর বোনের বাসায় থাকতো। ৮ হাজার টাকায় সিজার করা হবে কর্তৃপক্ষের সাথে এমন কথা বলে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এরপর সিজার হয়। কিন্তু মেয়েডারে মাইরে ফ্যালাইয়ে পর তারা খুলনায় নিয়ে যাতি আমাদের চাপ দেয়।
জানতে চাইলে পলি ক্লিনিকের স্বত্তধিকারী ডা. সুনীল কুমার দাস অবহেলার কারণে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের দিক দিয়ে কোন ধরণের অবহেলা ছিলনা। ‘একলামসিয়া’ আক্রান্ত হয়ে ওই প্রসূতি মারা গেছেন। আমরা স্বজনদের সাথে কথা বলছি। তাদের বুঝিয়ে বলেছি। তারাও এখন বিষয়টি বুঝতে পারছেন।
এ বিষয়ে জানতে রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. জি কে এম শামসুজ্জামানের সাথে। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ এবং ঘটনার বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাতাব উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। স্থানীয় জনতার উত্তেজিত মনভাব ছিল। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএইচ//এসআই/বিআই/২৬ আগস্ট ২০১৯