নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সুন্দরবনের কটকা টহল ফাঁড়ির ছাপড়াখালী এলাকা থেকে একটি বেঙ্গল টাইগারের (বাঘিনীর) মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বনবিভাগ।
মঙ্গলবার সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা এলাকার ছাপড়াখালী খালে টহলের সময় বনরক্ষীরা মৃত বাঘিনীটিকে পড়ে থাকতে দেখে।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে মৃত বাঘিনীটিকে বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকেরা এর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেন। পরে বিকেলে বাঘিনীটির চামড়া সংরক্ষণ করে দেহাবশেষ শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয় চত্বরে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
বন বিভাগ বলছে, পূর্ণ বয়স্ক বাঘিনীটি লম্বায় প্রায় ৭ ফুট এবং উচ্চতা ৩ ফুট। বয়স
আনুমানিক ২০ বছর।
শরীরে বাহ্যিক কোন আঘাত না থাকায় বার্ধক্য জনিত কারণে বাঘটির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে বনবিভাগ।
বাঘের মৃতদেহটি যে এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে শরণখোলা রেঞ্জ এই দিকটায়; বিশেষ করে কটকা-কচিখালীর অংশে বাঘের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি বলছেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন কর্মকর্তারা।
বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, নিয়মিত টহলের সময় বনরক্ষীরা বেঙ্গল টাইগারটিকে বনের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে কাছে গিয়ে মৃত দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। এখানে বাঘটির ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর এটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
খবর পেয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মদিনুল আহসান, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ডিএফও মাহমুদুল হাসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শরণখোলা গেছেন।
বাঘটি বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে ডিএফও মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বাঘটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ঢাকায় আমাদের ফরেনসিক ল্যাবে কেমিক্যাল টেস্টের জন্য বাঘের শরীরের লিভার, কিডনি, পাকস্থলির অংশ ও মাংসের টিস্যু পাঠানো হচ্ছে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর বাঘটি কী কারণে মারা গেছে – বিষটোপে না সাধারণ মৃত্যু তা জানা যাবে।
বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও মো. মদিনুল আহসান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘সুন্দরবন এলাকার বাঘের গড় আয়ু ১৪ থেকে ১৬ বছর। এই বাঘিনী বার্ধক্যজনিত কারণেই মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এর শরীরে আমরা বাহ্যিক কোনো আঘাতের চিহ্ন পাইনি।’
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সমন্বয়ে বাঘটির ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এ ছাড়া মৃত্যুর কারণ জানতে বাঘটির শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঢাকায় বন বিভাগের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠাব।
মো. মদিনুল আহসান বলেন, ‘গোটা বিশ্বে বাঘের সংখ্যা হাতে গোনা। একটি বাঘের মৃত্যু দুঃখজনক ঘটনা। সাধারণভাবে চোরা শিকারির দ্বারা বা কোনোভাবে হত্যা করা হলে বাঘটির শরীরে কোনো চিহ্ন থাকার কথা। তেমনটা নেই। এর বাইরে অনেক সময় বনের মধ্যে বাঘের টেরিটোরিয়াল (এলাকা নিয়ে) সংঘাতের কারণেও বাঘের মৃত্যু হতে পারে। ময়নাতদন্ত এবং ফরেনসিক পরীক্ষার পর বাঘের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে বাঘটি খুব বেশি আগে মারা যায়নি। হয়তো ওই দিনই (মঙ্গলবার) মারা যেতে পারে।’
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সবচেয়ে বেশি ঘনত্ব শরণখোলা রেঞ্জে। এই রেঞ্জের কটকা ও কচিখালীতে বাঘের বিচরণ সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি কটকা-কচিখালী এলাকার বনের পরিবেশও সুন্দরবনের বাঘের জন্য প্রজনন সহায়ক বলেন মদিনুল আহসান।
এসএইচ//এসআই/বিআই/২১ আগস্ট ২০১৯