নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
ব্যবসার কথা বলে কৌশলে ডেকে এনে সুনামগঞ্জের দুই কয়লা ব্যবসায়ীকে অপরহণ ও মুক্তিপণের দাবিতে আটকে রাখার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া দুই ব্যবসায়ী হলেন- সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলার টেকেরঘাট গ্রামের আলিমুদ্দিনের ছেলে নুরুল আলম (৩৭) ও একই উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের মৃত আবু মিয়ার ছেলে মুসলিম মিয়া (৩৫)।
শুক্রবার (২ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ আফজাল সদর মডেল থানায় প্রেস ব্রিফিং করে এই তথ্য জানান।
ইটভাটার জন্য কয়লা কিনতে চুক্তি কথা বলে সুনামগঞ্জ থেকে পিরোজপুর ডেকে এনে তাঁদের অপহরণ করে একটি চক্র। এরপর মুক্তিপণ হিসেবে অবহৃতদের পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে অপহরণকারী চক্রটি।
বৃহস্পতিবার রাতে বাগেরহাট শহরের একটি বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসে মুক্তিপণের টাকা নিতে এসে পুলিশের পাতা ফাঁদে ধরা পরে ওই চক্রের তিনজন।
এরা হলেন- পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার দক্ষিণ ভিটাবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. তুহিন শিকদার (২২), পিরোজপুর সদর উপজেলার উত্তর পূর্ব মাছিমপুর গ্রামের রফিক হাওলাদারের ছেলে পারভেজ হাওলাদার (২৫) এবং কোমারখালী গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে মো. আজগর আলী (৩৫)।
দুদিন ধরে অপহৃত থাকার পর বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দিবাগত রাতে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর সীমান্তবর্তী পানগুছি নদীর পাড়ে তাদের ফেলে যায় অপহরণকারীরা। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।
উদ্ধারের পর ওই দুই ব্যবসায়ীকে প্রাথমিক চিৎকিসা দিয়ে তাদের বাগেরহাটে আনা হয়।
উদ্ধার হওয়া ব্যবসায়ী নুরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ইটভাটায় কয়লা কেনার জন্য চুক্তির কথা বললে তারা সুনামগঞ্জ থেকে পিরোজপুর যান। গত ৩০ জুলাই ভোর ৫টার দিকে পিরোজপুর পৌঁছালে অপহরণকারীরা আমাদের সেখানের একটি নদী পাড়ে নিয়ে গিয়ে যায়। পরে একটা নৌকায় তুলে দু’দিন আটকে রাখে।
এসময় তারা আমাদের মারপিট করে ও মুক্তিপণ দাবি করে। পরে তাদের কাছ থেকে ছাড়া পেতে মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি হয়ে অপহরণকারীদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
অপহ্নত ব্যবসায়িদের পরিবার ঘটনাটি পুলিশকে জানালে পুলিশ মুক্তিপণের পাঁচ লাখ টাকা এস এ পরিবহণে মাধ্যমে ওই অপহরণকারীদের দিতে বলে ফাঁদ পাতে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ আফজাল বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুরের কয়লা ব্যাবসায়ী নুরুল আলম এবং মুসলিম মিয়ার সাথে পিরোজপুর জেলার জনৈক তুহিন ওরফে সৈকত শিকদার নামের এক ব্যক্তির সাথে মুঠোফোনে পরিচয় হয়। তুহিন নিজেকে ইটভাটা মালিক পরিচয় দিয়ে তাদের কাছ থেকে কয়লা কেনাবেচা করতে আগ্রহ দেখালে গত ৩০ জুলাই তারা পূর্ব যোগাযোগের ভিত্তিতে পিরোজপুর যান। সেখানে বাসস্ট্যান্ডে নামার পর সৈকতের ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে রাজু নামে এক যুবক ওই দুই ব্যবসায়িকে বাসস্ট্যান্ড থেকে লঞ্চঘাটে নিয়ে যায়।
সেখানে যাবার পর ভাটা দেখানোর কথা বলে একটি ট্রলারে তুলে। ট্রলারটি নদীর মাঝে গেলে অস্ত্রের মূখে তাদের হাত-পা বেঁধে মারধর করে এবং কাছে থাকা ব্যাংকের চারটি চেক ও নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে অপহরণকারীরা তাদের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে তারা পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে রাজি হয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, ওই ব্যবসায়ীদের পরিবার বিয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ মুক্তিপণের পাঁচ লাখ টাকা এস এ পরিবহণে মাধ্যমে ওই অপহরণকারীদের দিতে বলে ফাঁদ পাতে এবং অপহরণকারীদের গতিবিধি মনিটরিং করতে থাকে।
‘মুক্তিপণের টাকা নিতে আসলে তিন যুবককে পুলিশ হাতে নাতে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অনুযায়ী ওই চক্রের বাকি সদস্যদের ধরতে রাতে মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে। পুলিশি তৎপরতায় বাকি অপহরণকারীরা ওই দুই ব্যবসায়ীকে নদী পাড়ে ফেলে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় সুনামগঞ্জের তাহেরপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার ও উদ্ধারকৃতদের শুক্রবার সুনামগঞ্জে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
এজি//এসআই/বিআই/০২ আগস্ট, ২০১৯