আদালত প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
গ্রাহকের শতকোটি টাকা কোথায়?
জানতে চায় দুদক
দুদিনের জিজ্ঞসাবাদে
সেই মান্নান
দুদকের করা ১১০ কোটি টাকা পাচারের মামলায় বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদারকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত হিসেবে সংগৃহীত শতকোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটি কোথায়, কার কাছে পাচার করেছে, তা জানতে জিজ্ঞাবাদের জন্য আবেদন করে রোববার (২৮ জুলাই) তাঁকে বাগেরহাটের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কর্মকর্তা।
শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আবীর পারভেজ নিউ বসুন্ধরার মান্নান তালুকদারকে জেলগেটে দুদিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন।
গত ৩০ মে দুদকের খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাওন মিয়া বাদী হয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান তালুকদার ও চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় ১১০ কোটি টাকা পাচারের মামলা করেন। ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের অন্তবর্তীকালীন জামিন নেন মান্নান তালুকদার। ওই জামিনের মেয়াদ শেষে ১৫ জুলাই তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে তা নাকচ হয়ে যায়।
একই মামলার অপর আসামি নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মামলার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রোববার (২৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টায় কড়া পুলিশ প্রহরায় প্রতারণা করে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে করা মামলার আসামি আব্দুল মান্নান তালুকদারকে হাতকড়া পরিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে জেলা কারাগার থেকে বাগেরহাট আদালতে নিয়ে আসা হয়।
এরআগে গত ১৫ জুলাই মান্নান তালুকদারের জামিন আবেদন নাকচের পর প্রিজন ভ্যানে না তুলে বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি একে আজাদ ফিরোজ টিপুর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তাঁকে কারাগার ফটকে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেদিন মান্নান তালুকদারের আইনজীবী ও অনুসারীরা এজলাস থেকে আসামি বের হওয়ার পর তাঁকে চারদিক থেকে ঘিরে আদালত থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে তুলে দেন।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে আদালতে দায়িত্বে থাকা পাঁচ পুলিশ সদস্যকে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়।
দুদকের আইনজীবী মিলন কুমার ব্যানার্জী বলেন, আব্দুল মান্নান তালুকদার গত প্রায় নয় বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি (একাউন্ট) হিসাবে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন। গ্রাহকদের কাছ সংগৃহীত এই বিপুল পরিমাণ অর্থ মান্নান তালুকদার ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে কোথায় কার কাছে পাচার করেছেন তা জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে আবেদন করেন।
‘আদালতের বিচারক দীর্ঘ শুনানি শেষে মান্নানকে জেলগেটে দুদিন জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুমতি দিয়েছেন।’
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরপাড়ে। ২০১০ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল মান্নান তালুকদার স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে জমি কেনাবেচার এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চেয়ারম্যান করা হয় বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরপাড় জামে মসজিদের ঈমাম আনিসুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তিকে।
এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর তিনি গ্রাহকদের প্রতিলাখে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার প্রলোভনে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, পিরোজপুরসহ বেশ বিভিন্ন জেলার অন্তত ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ২৯৯ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন। যা ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থি।
গত কয়েক বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি (একাউন্ট) হিসাব থেকে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন। বর্তমানে তার গ্রাহকরা মূলধন বা লভ্যাংশ কোনটাই পাচ্ছেন না। তাদের কাছ থেকে আমানত হিসেবে নেওয়া বিপুল পরিমাণের অর্থ তিনি কোথায় পাচার করেছেন তা জানতে দুদক অনুসন্ধান করছে।
এজি//এসআই/বিআই/২৮ জুলাই, ২০১৯