স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
পরিবার বলছে, জনপ্রিয়তাই কাল হয়েছে তাঁর
গ্রেপ্তার নেই, মামলাও হয়নি
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খাজা মঈনুদ্দিন আখতারকে বোমা মেরে হত্যার পেছনে দুই মোটিফ দেখছে পুলিশ।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ও পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষরা তাঁকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক তদন্ত শেষে ধারণা পুলিশের। এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক দল। তবে শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ বা জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
গত বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে রামপাল উপজেলার ভরসাপুর বাজার এলাকায় সন্ত্রাসীদের ছোড়া বোমার আঘাতে নিহত হন বিএনপি নেতা খাজা মঈনুদ্দিন আখতার। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহতের ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার তাঁর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের একদিন পেরিয়ে গেলেও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ঘটনায় রামপাল থানায় কোন মামলা হয়নি।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সোনাতুনিয়া মাঠে জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বিএনপি নেতা মঈনুদ্দিন উজলকুড় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একাধিক বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর বাড়ি রামপালের বামুনডহর গ্রামে।
নিহতের পরিবারের দাবি, জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
খাজা মঈনুদ্দিন আখতারের স্ত্রী চম্পামালা বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘আমার স্বামীর উপর বোমা হামলার কয়েক মিনিট আগেই ভরসাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আমার সাথে তাঁর কথা হয়। তাঁকে বাড়ির জন্য বাজার করার কথা বলে ভ্যানযোগে আমি ফয়লায় চলে আসি। ফয়লায় বসে শুনি তাঁর উপরে কারা হামলা করেছে। আমার সাথে তাঁর আর দেখা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তিনি রাজনীতিতে অনেকটাই নিষ্ক্রীয়। সব ধরনের বিরোধ থেকে নিজে দূরে থাকতেন। তিনি উজলকুড় ইউনিয়ন পরিষদের তিনতিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বাবা খাজা সোবাহান আলীও এখানকার চেয়ারম্যান ছিলেন।সামনে হজ্বে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। এজন্য জন্য টাকা জামাও দিয়েছিলেন বলে জানান চম্পামালা।
ঘটনার সময় ওই বাজারে থাকা স্থানীয় কয়েকজন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ভরসাপুর বাজার এলাকার কমল মার্কেটের সামনে হঠাৎ বিকট শব্দে একটি বিষ্ফোরণ হয়। প্রথমে মনে হয়েছে, কোন দোকানে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার বিষ্ফোরিত হয়েছে। আমরা ওই শব্দ পেয়ে ছুটে এসে দেখি কমলা মার্কেট এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর ধোঁয়া কমলে দেখি সাবেক চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার উপরে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। সবাই তাকে রাস্তা থেকে তুলে গাড়ীতে করে খুলনায় পাঠাই।
তার এমন মৃত্যুতে বিষ্ময় প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলছেন, সাধারণ মানুষের বিপদে আপদে সবার পাশে ছুটে যেতেন তিনি। তার এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায়না। হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিকালে নিহতের জানাজার স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নেন। জানাজায় অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনিসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঘটনায় নিন্দা ও শোক জানিয়ে বিবৃত্তি দিয়েছেন। বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত ওই বিবৃত্তিতে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতির পর সরকার দেশকে বিএনপিশুন্য করতে মাঠে নেমেছে।
শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে ফিরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খাজা মঈনুদ্দিন আখতারকে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ও পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষরা বোমা মেরে হত্যা করেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করে।
পুলিশ খুব শিগগিরই আসামীদের ধরতে পারবে এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে বলে আশা ওই পুলিশ কর্মকর্তার।
এজি//এসআই/বিআই/১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯