স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
এসএসসি পরীক্ষা ২০১৯
পুরোনা সিলেবাসের প্রশ্নপত্রে নিয়মিত শিক্ষার্থীরদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে
বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে।
- ‘নৈবেক্তিক পরীক্ষা ২০১৮ সালের প্রশ্নে, সৃজনশীল (লিখিত) পরীক্ষা ২০১৯ সালের প্রশ্নে’
- শিক্ষকদের জানানো হলেও প্রশ্নপত্র সংশোধন না করার অভিযোগ
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার প্রথম দিনে বাগেরহাটের একটি কেন্দ্র ২০১৯ সালের প্রশ্নপত্রের পরিবর্তে ২০১৮ সালের সিলেবাসে প্রশ্নপত্র দিয়ে কিছু শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষার শুরুতে বিভিন্ন কক্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ২০১৮ সালের সিলেভাস অনুযায়ী বহুনির্বাচনি প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়।
বিষয়টি কক্ষ পরিদর্শকদের নজরেও তাঁরা পাত্তা দেননি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তবে এ জন্য পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেনা বলে তাদের আশ্বাস দিয়েছেন পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা।
পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্রে বহুনির্বাচনি পরীক্ষা দিয়েছেন বাগেরহাট বহুমখী কলেজিয়েট স্কুলের (নিয়মিত) পরীক্ষার্থী ইমরান খলিফা জয়। বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, পরীক্ষার শুরুর পর প্রথম আধাঘন্টা বহুনির্বাচনী পরীক্ষা হয়। তার পর লিখিত পরীক্ষা। বালিকা বিদ্যালয়ের ৩ নং ভবনের ২১০ নম্বর কক্ষে আমার সিট পড়ে। সেখানে আমার মত আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ২০১৯ সালের প্রশ্ন না দিয়ে ২০১৮ সালের সিলেভাসের বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়।
ইমরান বলেন, ‘প্রথমে আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি। পরীক্ষা শুরুর ৬-৭ মিনিট পর খেয়াল করি প্রশ্নের উপরে লেখা ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুযায়ী। বিষয়টি কক্ষ পরিদর্শকে জানালে তিনি ধমক দিয়ে বলেন, “প্রশ্নের সমস্যা নিয়ে কোন কথা বলবা না।” তিনি আমাদের প্রশ্নের ভূল নিয়ে কোন কথাই শুনতে চাননি। পরে আমার পশ্নপত্রের ১৭ নং নৈব্যক্তিক প্রশ্নে দেখি “বৃষ্টি” কবিতা থেকে প্রশ্ন এসেছে। কিন্তু আমাদের বইতে ওই কবিতাই নেই। পুরোনো প্রশ্নেই পরীক্ষা নেওয়া হয়, আমারা বললেও প্রশ্ন পাল্টে দেওয়া হয়নি।
ওই কেন্দ্রের ২০৯ নম্বর কক্ষের পরীক্ষার্থী শাওন শেখ বলেন, আমাদের কক্ষেও চার-পাঁচজন শিক্ষার্থীর এমন সমস্যা হয়। আমরা প্রায় ১০ মিনিট পর পুরোনো প্রশ্ন বুঝতে পরে স্যারদের বলেও তারা আমাদের প্রশ্নপত্র ঠিক করে দেননি।
‘আমাদের নৈবেক্তিক পরীক্ষা ২০১৮ সালের প্রশ্নে, আর সৃজনশীল (লিখিত) পরীক্ষা ২০১৯ সালের প্রশ্নেপত্রে হয়েছে। সৃজনশীল অংশের পরীক্ষা শুরুর পর একের পর এক শিক্ষক এসে আমাদের নৈব্যক্তিকের প্রশ্ন দেখতে চায়, প্রশ্ন নিয়ে যান, আবার ফেরত দেন। এভাবে পরীক্ষা জুড়ে একেক স্যার এসে আমাদের এসব নিয়ে প্রশ্ন করে পরীক্ষার সময় ডিসটার্ব করেছে।’
পরীক্ষার্থী ইমরানের বাবা মো. শহিদুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি এসে ছেলে কান্নাকাটি করেছে। ক্যাজুয়ালদের প্রশ্নে ওদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। কেন ওদের ভিন্ন সিলেভাসের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়াতে হলো! শিক্ষকদের বলা হলেও তারা প্রশ্নপত্র সংশোধন করে দেননি। এখন ওদের কি হবে বুঝতে পারছি না।’ এ বিষয়ে তারা রোববার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করবেন বলে জানান।
জানতে চাইলে বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রসচিব দীপক রঞ্জন বিশ্বাস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমরা বোর্ডকে অবহিত করেছি। ৩০-৩১ জন পরীক্ষার্থীর এমন সমস্যা হয়েছে। তবে এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নির্দেশে ভুল প্রশ্নপত্র পাওয়া শিক্ষার্থীদের খাতাগুলো পৃথকভাবে বোর্ডের পাঠানো হয়েছে।
তবে ভুল প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেন কেন্দ্রসচিব। তার দাবি, বিষয়টি শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে জানায়নি। তারা সঙ্গে সঙ্গে জানালে অন্তত প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব হতো।
তিনি বলেন, ‘বইতে যে ভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে যেই অনুযায়ী প্রশ্নপত্র বন্টন করি। কিন্তু হটাৎ করে আগের রাতে ওই নির্দেশনায় পরিবর্তন আসে। যা খেয়াল করতে পারিনি।’
এ বিষয়ে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাইফুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আজ (শনিবার) বিকালে অভিভাবকদের কাছ থেকে আমরা এ বিষয়ে জানতে পারি। পরীক্ষার বিষয়ে বোর্ড থেকে সরাসরি কেন্দ্রসচিবদের সকল নির্দেশনা দেওয়া থাকে। তার পরও কেন এমন হলো এ বিষয়ে রোববার কেন্দ্র সচিব আমাদের জানাবেন।
৩০-৩১ পরীক্ষার্থীর এমন সমস্যা হয়েছে বলে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রসচিব যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথে কথা বলেছেন। ওই সব পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র আলাদাভাবে বোর্ডে যাবে এবং মূল্যায়ন পৃথকভাবেই হবে। তাই পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না।
এইচ//এসআই/বিআই/০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯