বেপরোয়া গতিতে ওভারটেক করতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩
বেপরোয়া গতিতে
ওভারটেক করতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা
বাগেরহাটের ফকিরহাটে দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩২ যাত্রী।
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে ফকিরহাট উপজেলার কলমের দোকান এলাকায় খুলনা-মাওয়া মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ, ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করেন। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটির সামনের অংশ সম্পূর্ণ দুমড়ে-মুচড়ে আটকে পড়ে কয়েক জন। এসময় ওই সড়কে প্রায় সোয়া ৩ ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সড়কের উপর থেকে দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও ট্রাক সরিয়ে নেওয়ার পর পুনরায় ওই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
নিহতরা হলেন- ট্রাক চালক সাতক্ষীরার কামার নগর মধ্যপাড়ার আবুল খায়ের সামছুজ্জামানের ছেলে মো. কামরুজ্জামান (৩৫), বাসযাত্রী বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার ভৈরব নগর গ্রামের পরেশ পোদ্দারের ছেলে বিপিন পোদ্দার (৫১) ও খুলনার আঢ়ংঘাটা তেলগাতী এলাকার মাহামুদুল ইসলাম (১৩)।
প্রতক্ষদর্শীদের ভাষ্য, খুলনা থেকে ঢাকাগামী ‘টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসে’র দ্রুতগামী একটি বাস সড়কের ওই এলাকায় একটি মাইক্রোবাসকে ওভারটেক করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে মুখমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুটি গাড়ির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
ঘটনার সময় এই সড়ক দিয়ে ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছিলেন আব্দুল জব্বার ঢালী। বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, ‘বাসটি বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে আমার ভ্যান ক্রোস করে সামনের একটি মাইক্রোবাসকে ওভারটেক করে। এসময় একটি বকট শব্দ হয়। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। পরে আমরা দৌড়ে গিয়ে বাসের ভেতর থেকে আহত যাত্রীদের উদ্ধার করি।’
তিনি বলেন, পর পর তিনটি ট্রাক আসছিল। দুটি ট্রাক এগিয়ে যাবার পর মাইক্রোবাসকে ওভারটেক করার সময় শেষের ট্রাকটির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
তিনি বলেন, বাসে থাকা সবাই আহত হয়েছে। পর পর তিনটি ট্রাক আসছিল। প্রথম দুটি ট্রাক চলে আসে, শেষে থাকা ট্রাকটিকে ওভারটেক করার সময় সামনে থেকে ধাক্কা দেয় বাসটি।
স্থানীয় বাসিন্দা সগির হাওলাদার বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের এই বাসগুলো সব সময় অসাভাবিক গতিতে চলে। প্রায়ই এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। বাসগুলো এখন “সড়ক পথে বিমানের ছোঁয়া” স্লোগান দিয়ে বাতাসের গতিতে চলে। যেন পাশ দিয়ে মানুষও উঠিয়ে নিয়ে যাবে- এমন গতির কারণে সাধারণ মানুষ সড়কের পাশ দিয়ে হেটে চলতেও ভয় পায়।’
বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই এই সড়কে দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে স্থানীয় পিলজংগ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খান শামীম জামান পলাশ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে টুঙ্গিপাড়া এক্সেপ্রেসসহ বেশ কিছু পরিবহণ অসাভাবিক গতিতে চলাচল করে। তাদের বেপরোয়া গতির কথা একাধিক বার জানানো হলেও কর্তিপক্ষ কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে প্রতিদিনই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, দুর্ঘটনার পর বাগেরহাট ও খুলনা ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট উদ্ধার কাছে অংশ নেয়। তারা প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আটকে পড়া ট্রাকচালক ও যাত্রীদের উদ্ধার করে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তার।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফকিরহাট সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় পরিবহনের দুই যাত্রী ও ট্রাকের চালক ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহতের ফকিরহাট ও খুলনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল পৌনে চারটার দিকে উদ্ধার কাজ শেষে বাস ও ট্রাকটিকে সরিয়ে সড়কে আবারও যান চলাচল সাভাবিক হয়েছে।
এইচ//এসআই/বিআই/২২ জানুয়ারি, ২০১৯