- ইউনিয়ন পরিষদ ছিল চেয়ারম্যানের অঘোষিত ‘টর্চার সেল’। পরিষদ ছাড়াও মোরেলগঞ্জ উপজেলার হাসেমখার হাট বাজারের ক্লাব ও সংলগ্ন মৎস্য ঘেরের ঘর এবং পোলেরহাট বাজারের একটি ভবনে চেয়ারম্যানের টর্চার সেল ছিল। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে এসব স্থানে ধরে এনে নির্যাতন করতো চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।
- চেয়ারম্যানসহ আটক ৪, তিনটি আগ্নেঅস্ত্র উদ্ধার
- কে এই শহীদুল ফকির
নিউজ এডিটর । বাগেরহাট ইনফো ডটকম
দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতার দৃঢ়তা প্রদর্শনে গত সোমবার বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহতদের পরিবার, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রতক্ষদর্শীরা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে তাদের উপর হামলা করা হয়। প্রকাশে গুলি করেন ইউপি চেয়ারম্যান। উত্তেজনা ছড়াতে চেয়ারম্যানের উপর হামলা হয়েছে বলে মসজিদের মাইকে মিথ্যা ঘোষণাও দেওয়া হয়।
ওই হামলার ঘটনায় আহত দুজনের অবস্থাও গুরুতর। ঘটনার পর থেকে দৈবজ্ঞহাটি বাজার এবং আশপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে হামলা ও হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবিতে সোমবার বেলা ১১টার দৈবজ্ঞহাটি বাজারে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
নিহতরা হলেন- উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের দৈবজ্ঞহাটি গ্রামের আনসার আলী দিহিদার ও জোকা গ্রামের শেখ শুকুর। আনসার ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শুকুর সাবেক যুবলীগ নেতা ও জেলা আওয়ামী তরুণলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিহত আনসার আলী এবং শেখ শুকুরের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড নিহত শুকুরের ময়না তদন্ত করেন। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, নিহতের পিঠে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। যার মধ্যে তিনটি পিঠ দিয়ে ঢুকে পেট দিয়ে বের হয়ে গেছে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের একাধিক কোপের চিহ্ন রয়েছে।
সোমবারের দুই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৭টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
।। জানাযায় এমপিকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ
সোমবারের হামলায় গুরুতর আহত দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন তাঁতীলীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক বাবলু শেখ এবং নিহত আনসার আলী দিহিদারের স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৪৫) এখনো খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্ত চেয়ারম্যানসহ ৪ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে। তারা হলেন দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম ফকির, গ্রাম পুলিশ সদস্য মো. আবুয়াল হোসেন ফকির ও আবুল শেখ এবং গ্রামবাসী জুলহাস ডাকুয়া। তবে হামলা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যরা এখনও সনাক্ত বা গ্রেপ্তার হয়নি।
তাদের কাছ থেকে তিনটি অস্ত্র ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি দেশি তৈরি রিভলবার, একটি বিদেশি সর্টগান, একটি দেশি তৈরি ওয়ান স্যুটারগান ও তিনটি সর্টগানের গুলি এবং একটি কুড়াল। এরমধ্যে সর্টগানটি চেয়ারম্যান ফকির শহীদুল ইসলামের লাইসেন্সকৃত।
হামলার পূর্বপর:
সোমবার দুপুরে একটি ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ শুকুর। ভ্যান যোগে দৈবজ্ঞহাটি বাজারে যাবার পথে তাঁতী লীগ নেতা বাবলু শেখকে ডেকে সাথে নেন তিনি। বাজার সংলগ্ন সরকারি পুকুর পার হয়ে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তায় ডোকার পর সেলিমাবাদ ডিগ্রি কলেজের আগে ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ফকিরের কয়েক সমর্থক তাদের পথ রোধ করে। এসময় ভ্যান থেকে নেমে কলেজ মাঠের ভেতর দিয়ে দৈড়ে পালাতে চেষ্টা করেন শুকুর। ওই অবস্থা দেখে পালাতে চেষ্টা করেন বাবলু শেখও। দৈড়ে পালানোর সময় মাঠে পুকুরের কাছে একটি খেঁজুর গাছের গোড়ায় পড়ে যান শুকুর। এসময় চেয়ারম্যানের সমর্থকরা তাকে ও বাবুলকে লাঠিশোটা, হাতুড়ি, লোহার রড ও চাপাতি দয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে হাত-পা থেতলে দেয়। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান শহীদুল ফকির তার নিজে ব্যবহৃত সর্টগান দিয়ে শুকুরের মাজার কাছে কয়েকটি গুলি করে।
এরপর তাদের দুজনকে বোরকা পরানো হয়। মাঠের মধ্যেই তাদের বোরখা পরানোর পর দুই হাত ধরে টেনেহিচড়ে চেয়ারম্যানের সমর্থকরা তাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের উপর আরও মারধর ও নির্যাতন চলে। এরমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় মুঠোফোনে খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় চেয়ারম্যানকে হত্যা করতে এসে ‘বোরকা পরা’ দুজন ধরা পড়েছে।
চেয়ারম্যানের নিজের গ্রাম আলতিবুরুজবাড়িয়া ও পোলেরহাট এলাকার মসজিদের মাইকে ওই খবরের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরমধ্যেই চেয়ারম্যানের কয়েশ সমর্থক চলে আসে পরিষদে। অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎসুক জনতা জড়ো হতে থাকে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। সেখানে সবাইকে বলা হয়, দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার দিহিদারের নির্দেশে বোরকা পরে ওই দুজন চেয়ারম্যানকে হত্যা করতে এসে ধরা পড়ে।
এরপরই আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে অর্ধশতাধিক চেয়ারম্যানের অনুসারী দা, সাবলম, হাতুড়ি ও হ্যামার নিয়ে পরিষদ থেকে প্রায় দুইশ গজ দূরে দৈবজ্ঞহাটি গ্রামের আনসার আলীর বাড়ি ঘিরে হামলা করে। হামলা থেকে রক্ষা পেতে ঘরে ঢোকার সব দরজা ও লোহার গেটে তালা দিয়ে ওই আওয়ামী লীগ নেতা ঘরের পাটাতনে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা দরজা খুলতে না পেরে চালের টিনের কেটে ও ভেঙে ঘরে ঢোকে এবং প্রতিটি কক্ষে তল্লশি শুরু করে।
এসময় হামলাকারীরা তার স্ত্রী মঞ্জু বেগমকে হাতুড়ি ও হ্যামার দিয়ে পিটিয়ে তাকে রক্তাক্ত করে। এক পর্যায় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। ঘরে ঢুকে সব কিছু ভাংচুর করে পাটাতনের উপর আনসার আলীকে পেয়ে হাতুড়ি ও হ্যামার দিয়ে পেটাতে পেটাতে তাকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। পরে সেখানে চেয়ারম্যান নিজে হত্যামর দিয়ে পিটিয়ে তার পা ও মাথা থেথলে দেয়। এরপর দীর্ঘ সময় পরিষদের সামনের বারান্দায় ফেলে রাখা হয় ওই তিন জনকে। পরে পুলিশের গাড়িতে করে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরিবারের লোকজন এসে শহিদুলের স্ত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেলে ভর্তি করে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজন।
প্রতক্ষদর্শী দুই তরুণ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সোমবার দুপুরের পর তারা তিনজন সেলিমাবাদ ডিগ্রী কলেজ মাঠে ক্রিকেটের প্রাকটিজ করছিলেন। শুকুর ও বাবলুকে ধরে আনা ও মাঠের পাশে পুকুর পাড়ে মারধর, কোপানো ও গুলি করতে দেখেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে দাড়িয়ে তারা পুরো ঘটনার বর্ণনা করেন। তারা বলেন, ‘গুলি করার পর শুকুর কাকু ও বাবুলকে বোরকা এনে পরানো হয়। তার পর তাদের টানতে টানতে পরিষদে নিয়ে যান চেয়ারম্যানের লোকজন।’
কৈতুলহ বসত দূর থেকে পরিষদের তাদের মারধর করা দৃশ্য দেখেছে ওই তরুণেরা। তারা বলেন, ‘পরিষদে নিয়ে মারধরের এক পর্যায়ে শুকুরের পুরুষ অঙ্গ কেটে দেয় চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। পরিষদের সামনে শতশত লোক ছিল। ভয়ে কেউ কোন কথা করেনি।’
বর্তমান পরিস্থিতি:
ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে এলাকার সকল দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার দিনভর এলাকায় ছিল পুলিশ ও র্যাবের পাহারায়। পরিষদে ঢুকতে চেয়ারম্যানের কক্ষের ডান পাশে ইট দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে মারধরের পর সেখানে ফেলে রাখা হয় ওই তিনজনকে।
এদিন পরিষদের ছিল বন্ধ। দুই তিনজন চৌকিদার ছাড়া কেউ পরিষদের আসেছি। সবকটি কক্ষও ছিল তালা বন্ধ। জানতে চাইলে একজন চৌকিদার বলেন, রাজনৈতিক মার্ডার। কিভাবে কি হলো তো শুনছেন। আমি আর কী বলব?
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দৈবজ্ঞহাটি বাজারে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যার কিছু আগে স্থানীয় সেলিমাবাদ ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গনে নিহত দুই আওয়ামী লীগ নেতার জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দফন সম্পন্ন হয়েয়ে।
।। জানাযায় এমপিকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ
‘পার্টি করেও রক্ষা নেই’
ইউনিয়ন পরিষদ রেখে ওই পথ ধরে সামনে কিছু দূর আগালে আওয়ামী লীগ নেতা আনসার আলী দিহিদার বাড়ি। বাড়িতে ঢুকতে গেটের উল্টা দিকে এক স্তুপ ছাই। সোমবার বিকালে এখানে পুড়িয়ে দেওয়া হয় আনসার আলীল ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলেটি।
আনসারের মেঝ ভাই মো ইউসুফ আলী দিহিদার বলেন, ৬০ থেকে ৭০ জন লোক এসে হামলা করে। তখন বাড়িতে আনসার ও তার স্ত্রী ছিলেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে, আর ছেলে ঢাকায় পড়াশুনা করে। তারা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। তিনি ও তার অন্য ভাইয়েরা তাদের পৌত্রিক বাড়িতে থাকেন।
‘চেয়ারম্যান শহীদুল এক সময় বিএনপির রাজনীতি করতো। যুবদলের সভাপতি ছিলেন। হামলা, মৎস্য ঘের দখল, চাঁদাবাজিসহ এমন কোন ধরণের অপরাধ নেই, যা সে করেনি। কিন্তু তার ও তার বাহিনীর হত্যাচার নির্যাতনের ভয়ে কেউ মুখ খলতো না। এরআগেও এলাকায় বহু হত্যার সাথে জিড়ত সে। বর্তমান সাংসদ (বাগেরহাট-৪) ডা. মোজাম্মেল হোসেনের ছত্রছায়ায় সব অপকর্ম করেও পার পেয়ে যায় সে। এমপিই তাকে চেয়ারম্যান বানায়ছে।’
ইউসুফ আলী বলেন, ‘এখন আর নিরাপত্তা বলতে কিছু থাকলো না। আওয়ামী লীগ করে দল ক্ষমতায় থাকতে এই ভাবে নেতাদের খুন হতে হবে? কারো কি আর নিরাপত্তা থাকলো? হামলা করে বাড়িতে টাকা পয়সা গহনা যা ছিল সব নিয়ে গেছে। দেখন, কেউ ঘরে ঢোকেনি। এখনও সব ওই ভাবেই পড়ে আছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে নিহত শেখ শুকুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সমনেই কবর খোড়ার কাজ করছেন স্বজন ও গ্রামের কয়েক জন। বাড়িতে ঢুকতে কথা হয় শুকুরের বড় ভাই শেখ ফারুক আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, ‘এলাকার সবার সাথে কথা বলে দেখেন। চেয়ারম্যান ছিল এখনের ত্রাস। পরিষদসহ তার তিনটি টর্চার সেল ছিল। কেউ তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে শালিস-বিচারের নামে তাদের এসব স্থানে নিয়ে নির্যাতন করা হতো।
কথা হয় শুকুরের স্ত্রী কানিজ নাদীয়ার সাথে। তিন বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। তাদের একমাত্র মেয়ের বয়স ২২ মাস। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই। আমার স্বামীর কি অপরাধ ছিল। পার্টি করেও তো রক্ষা নেই। আমার ছোট বাচ্চার কাকে বাবা বলে ঢাকবে। আমার ছোট্ট মেয়েটার ভবিষ্যৎ কি হবে।’
স্থানীয়দের ভাষ্য: সকাল থেকে ওই ইউনিয়নের শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত অন্তত ৪০ জনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সবাই বলেছেন, চেয়ারম্যান শহিদুল একজন সন্ত্রাসী। কেউ তার ভঙে মুখ খুলতো না। বিভিন্ন জন তার অপরাধের নানা বর্ণনা তুলে ধরলেও কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। গত তিন চার বছরে ওই এলাকায় চারটি হত্যাকাণ্ডের সাথেও চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন তারা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে।
তারা বলছেন, হতাহতের শিকার সবাই বর্তমান সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু ডা. মোজাম্মেল তাদের না দেখে বিএনপি থেকে আসা সন্ত্রাসী শহীদুল চেয়ারম্যানের পক্ষ নেন। বিভিন্ন সময় শহীদুলের নির্দেশে নানা মিথ্যা মামলায় আনসার আলী ও শেখ শুকুরসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে এমপিকে বার বার বলেও তারা কোন প্রতিকার পায়নি। এর প্রেক্ষিতেই সাম্প্রতি তারা বাগেরহাট-৪ আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের সমর্থনে যান। তাছাড়া আনসার ও শুকুর দুজনই গেল ইউপি নির্বাচনে দৈবজ্ঞহাটি থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এনিয়েও চেয়ারম্যান শহীদুলের ক্ষোভ ছিল তাদের উপর। তাই পথের কটা দূর করতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় তাদের।
তবে এবিষয়ে চেয়ারম্যান বা তার সমর্থকদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার দুপুর তিনটার দিকে ইউনিয়নের আলতিবুরুজবাড়িয়া গ্রামে চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শুনশান নিরবতা। বাড়িতে প্রবেশের গেটে পুলিশের একজন করে এসআই, এএসআই ও কলেস্টেবল বসে ছিলেন চেয়ার নিয়ে। ভেতরে প্রবেশ করে বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর দরজা খোলেন চেয়ারম্যানের বড় মেয়ে। তার সাথে কথা হয়। তবে তিনি নাম বলতে রাজি হননি।
বলেন, আমার বাবার উপর হামলা হয়েছিল। বাবাকে হত্যা করে এসেছিল কয়েকজন। তার পর গ্যঞ্জাম হয়েছি শুনেছি। এখন বাড়িতে আমি, আমর ছোট বোন, মা আর এক আত্মিয় আছে।’ এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
ফেরার পথে কথা হয় গ্রামের কয়েকজনের সাথে। তার চেয়ারম্যানের উপর হামলা হয়েছে বলে মাইকে ঘোষণা দেওয়ার কথা জানান। বলেন, অন্য সময় চেয়ারম্যানের বাড়ি ঘিরে সব সময় জমজমাট থাকতো। নানা লোকের আনা গোনা থাকতো। আজ কারো কোন দেখা নেই। চেয়ারম্যানের সমর্থকরাও আত্মগোপনে।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, হামলার প্রকৃত কারন উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছে। নিহতদের পরিবারের সাথে কথা হয়েছে। তারা মামলা দায়ের করবেন। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ওই এলাকার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
এইচ//এসআই/বিআই/০২ অক্টোবর, ২০১৮
** দলীয় কোন্দল: হামলায় দুই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
** যুবদলের সভাপতি এখন আ.লীগের ইউপি চেয়ারম্যান!