কালের কণ্ঠ
জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটিতে সোমবার প্রকাশ্য হামলায় নিহত হন দুই আওয়ামী লীগ নেতা। গুরুতর আহত হন আরও দুজন। এসব ঘটনায় অভিযোগের তীর আওয়ামী লীগ দলীয় স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
তার নাম মো. শহীদুল ইসলাম ফকির। তিনি দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা।
ওই ঘটনার পর মোরেলগঞ্জসহ জেলার সাধারণ মানুষের প্রশ্ন কে এই শহীদুল ফকির?
স্থানীয়রা বলছেন, দৈবজ্ঞহাটি ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুলের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। গেল বছর (২০১৭) বাগেরহাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়নের মৃত আব্দুর রশিদ খানের স্ত্রী রোকেয়া বেগম চেয়ারম্যান শহীদুল ফকিরের অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকির এক সময়ে ছিলেন জাতীয় পার্টির ক্যাডার, বিএনপির আমলে ছিলেন ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি। ওই সময় বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ খান হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন শহিদুল ফকির। পরে নিজেকে রক্ষা করতে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। সর্বশেষ এখন সে আওয়ামী লীগের কথিত নেতা ও দলীয় নমিনেশনে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরআগেও তিনি এখান থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দুই মেয়াদে চেয়ারম্যান থাকার সময় ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মাছের ঘের, জায়গা দখল ও চাঁদাবাজিসহ অসংক্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
তার বিরুদ্ধে পাশ্ববর্তী রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রশিদ খানকে হত্যা অভিযোগ রয়েছে। ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি শহীদুল ফকির।
সবশেষ (২০১৬ সালে) ইউপি নির্বাচনের আগে মোরেলগঞ্জ এলাকায় তার বিরুদ্ধে একটি পোস্টারিং হয়। যাতে শহীদুলের বিরুদ্ধে ৬৭টি মামলা আছে বলে উল্লেখ করা হয়। সেই পোস্টারে ১৯৮১ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের ফিরিস্থি তুলে ধরা হয়। জানায়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দন্দ্ব ও নির্বাচনে তাকে যেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া না হয় এজন্য দলের স্থানীয় নেতাদের একটি অংশ প্রথম থেকেই বিরোধীতা করতো।
চেয়ারম্যান শহীদুল ফকিরের বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা মান্নান খাঁ, মুক্তিযোদ্ধা হারেজ আলী শেখকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে দেওয়া অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়নি বলাইবুনিয়া ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর, আলতিবুরুজবাড়িয়া গ্রামের রোমান হাওলাদার, তেলিগাতি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর, একই ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি রনি খান ও শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. আছাদ। এদের সবাইকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
এলাকায় আতঙ্ক:
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরের টর্চার সেলে দুই আওয়ামী নেতা হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বাগেরহাট শহর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘটনার একদিন পরেও এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সবার মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা বলছেন, শহীদুল ফকির মূলত একজন সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কয়েকশ’ বিঘা মৎস্য ঘের দখলে অভিযোগ রয়েছে। শত অভিযোগ থাকার পরও সব সময় সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিন দিন বেড়েছে।
কেকে/এইচ//এসআই/বিআই/০২ অক্টোবর, ২০১৮
** দলীয় কোন্দল: হামলায় দুই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু