স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
‘আমার নাম ডালিম। বাবার নাম মোহন। বাড়ি কচুয়ার সাইনবোর্ডে।’ পরিচয় বা ঠিকানা বলতে এর বেশি কিছু বলতে পারেননি ষাটোর্ধ এই প্রবীন নারী।
গেল চার মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি আছেন বাগেরহাট সদর হাসপাতালে। এরই মাঝে অসুস্থ্য ডালিমের একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে।
প্রায় চার মাস আগে কে বা কারা, তাকে ফেলে যায় বাগেরহাট সদর হাসপাতালের সামনে। অজ্ঞাত হিসেবে পড়ে থানা বৃদ্ধা এই নারী ছিলেন অসুস্থ্য। ডান পায়ের গোড়ালির কাছে ছিল পাঁচন। তা দেখে কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করে হাসপাতালে।
পরবর্তিতে চিকিৎসকরা তার ডান পায়ে অস্ত্রোপচার করে গোড়ালির কিছুটা উপর থেকে কেটে ফেলে। এখন প্রায় সুস্থ্য তিনি। তবে আছেন হাসপাতালেই। কারণ গেল চার মাসেও হাসপাতালে কেউ আসেনি তার খোঁজে। নিজেও বলতে পারছেন না পরিবার বা স্বজনদের ঠিকানা।
চিকিৎসা, ওষুধপত্র এবং হাসপাতাল কর্তিপক্ষের দেওয়া খাবার এখন তার বেঁচে থাকার ভরসা। চিকিৎসক, নার্সদের পাশাপাশি হাসপাতালে আসা অন্য রোগীর স্বজনেরা মাঝে মধ্যে কিছু সহযোগীতা করেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও পরিবারের সন্ধান মিলছেনা এই বৃদ্ধার।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের নিচতলার অর্থোপেডিক বিভাগের ২ নাম্বার বেডে ভর্তি রোগী হিসেবে আছেন তিনি। সোমবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে হাসপাতালের বেডে বসে বাগেরহাট ইনফো ডটকমের প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার। তিনি বলেন, ‘আমার নাম ডালিম। বাবার নাম মোহন। আমরা নয় ভাইবোন। আমার বাড়ি কচুয়ার সাইনবোর্ড এলাকায়।’
পরিচয় জানতে চাইলে বারবার এই কথাগুলোই বলছিলেন ষাটোর্ধ এই নারী। হাসপাতাল কর্তিপক্ষও ‘ডালিম’ নামেই তার নাম অন্তরভূক্ত করেছে রেজিস্টারে।
তার দেওয়া ওই ঠিকানা অনুয়ায়ী বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকায় ডালিমকে নিয়ে গিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেবার সেই চেষ্টা ব্যার্থ হয়েছে। কারণ সেখানে গিয়ে তার পরিবার বা কোন আত্মীয়-স্বজনের সন্ধান মেলেনি।
ফলে এই হাসপাতালই এখন তার একমাত্র আশ্রয়, ঠিকানা।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের জুনিয়র কনস্যালটেন্ট ডা. এস এম শাহনেওয়াজ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রায় চার মাস আগে হাসপাতালের সামনে অজ্ঞাত এক নারীকে পড়ে থাকতে দেখে কর্তৃপক্ষ ভর্তি নেয়। ওই নারীর ডান পায়ে পচন ধরায় তার গোড়ালির একটু উপর থেকে অস্ত্রোপচার করে কেটে ফেলি আমরা। তাকে স্বাস্থ্যসেবাসহ পরণের কাপড়, হাঁটার জন্য ক্রাস দেই আমরা। চিকিৎসার পর এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ্য। কিন্তু কোন স্বজন না পাওয়ায় হাসপাতালেই পড়ে রয়েছেন।
ডা. শাহনেওয়াজ জানান, প্রথম থেকেই তিনি তার বাড়িঘর কোথায় ঠিকমত বলতে পারছিলেন না। তার দেওয়া ঠিকানা অনুয়ায়ি আমরা তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে কচুয়ার সাইনবোর্ড এলাকায় সারাদিন ঘুরেও তার কোন স্বজনের সন্ধান পাইনি।
‘বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় স্মরণশক্তি কমে গিয়ে থাকতে পারে ওই নারীর। অথবা মানষিক সমস্যার কারণেও তিনি তার ঠিকানা ঠিকমত বলতে পারছেন না’, এমন হতে পারে বলে ধারণা তার।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মশিউর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রায় চার মাস ধরে ওই বৃদ্ধা আমাদের এখানে ভর্তি আছেন। ভর্তির পর থেকে আমাদের স্টাফরা তাকে খাবার খাইয়ে দেওয়াসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাকে সুচিকিৎসা দিয়ে পুরোপুরি সুস্থ্য করে তুলেছি। তবে এই চার মাসে কেউ তার খোঁজখবর নিতে আসেনি।
তার পরিবারের সদস্যরা কি তাকে বোঝা মনে করে ফিরিয়ে নিতে চাইছে, তাও হতে পারে, কিন্তু আমরা তার স্বজনদের কোন সন্ধান পাচ্ছিনা। আমরা তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে নানা চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখনো কাউকে পাইনি।
‘এভাবে তাকে আর কতদিন আমরা তাকে হাসপাতালে রাখতে পারব তা বুঝে উঠতে পারছি না। আমরা আরও কিছুদিন দেখব। যদি তার স্বজনদের নাই পাওয়া যায় তবে পরবর্তি করণীয় নিয়ে ভাবতে হবে।’
এইচ//এসআই/বিআই/২৭ আগস্ট ২০১৮