স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাজরা ইশতিয়াক হোসেন বাহাদুরের (৩২) উপর সশস্ত্র হামলার দুদিনেও কোন মামলা হয়নি। তবে ওই হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাতে কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার ভোরে ভ্যানযোগে বাড়ি ফেরার পথে সাইনবোর্ড-কচুয়া সড়কের রাঢ়িপাড়া কাটা বটতলা এলাকায় সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াককে উপর হামলা চালায়। দুর্বৃত্তরা তার দুই হাত ও পায়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথম কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই খবরে মঙ্গলবার সকাল থেকে স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কচুয়া বাজারের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। উপজেলার বিভিন্ন সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করা হয়।
হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার দুজন হলেন, কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের সহবাতকাঠি গ্রামের প্রয়াত আফছার উদ্দিন শেখের ছেলে আব্দুল আলীম শেখ (৫০) এবং একই উপজেলার কচুয়া সদরের হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে মো. নাজমুল হোসেন সুমন (২৮)। তারা দুজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে স্থানীয় ভাবে পরিচিত। তবে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার ওই দু’জনের দলীয় বা সাংগঠনিক পদ নিশ্চিত করেনি।
এদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হামলায় শিকার ছাত্রলীগ নেতা হাজরা ইশতিয়াক হোসেন বাহাদুরের শরীরে মঙ্গলবার সফল অস্ত্রপোচার সম্পন্ন হয়েছে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে পরিবার ও দলীয় নেতারা জানাচ্ছেন বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।
মঙ্গলবার হামলার পর স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ এবং বাজার ব্যবসায়ী বণিক সমিতি’র ডাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অভ্যন্তরীণ সড়কের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে তাদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অব্যাহত থাকবে। হামলার প্রতিবাদে স্থানীয় সংগঠনগুলো যৌথভাবে কচুয়া বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ও সড়ক অবরোধের তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।
কচুয়া বাজার বণিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল ইসলাম সুমন বলেন, কচুয়া বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্থানীয় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছিল। তাদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে আমাদের সংগঠন জরুরী সভা করে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বাজারের সব দোকানপাট খোলা হয়েছে। তবে ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াকের উপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা আবারও কর্মসূচি দেব।
কচুয়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ঝুমুর বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নের্তৃবৃন্দ যৌথভাবে ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াকের উপর হামলার ঘটনায় জরুরী সভা করে। সভায় হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবী জানানো হয়।
তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পুলিশ প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসে আপাতত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এবং অভ্যন্তরীণ সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে প্রতিদিন বিকেলে কচুয়া বাজারের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করবে দলের নেতাকর্মীরা।
আহত ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াক হোসেন বাহাদুরের চাচী ও কচুয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা সরোয়ার বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইশতিয়াকের দুই হাত ও পায়ে দুটি অস্ত্রপোচার করা হয়েছে। সে এখন শঙ্কামুক্ত। তবে পুরোপুরি সুস্থ্য হতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল কবির বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াক হোসেনের উপর হামলায় ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ওই দুজনের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় মারামারি, জমি দখলসহ একাধিক মামলা রয়েছে। থানায় রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঘটনার পর দুদিনেও কেন মামলা না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আহত ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াক বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাই এখনো কোন মামলা হয়নি। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে বা পরিবারের কাউকে লিখিত এজাহার জমা দিলেই আমরা মামলা নথিভূক্ত করব।
এজি//এসআই/বিআই/১১ জুলাই ২০১৮