• নাফিজ শাহরিয়ার
বর্তমান সময়ে ন্যানো শব্দটির সাথে কম বেশি সকলেই পরিচিত। ন্যানো গাড়ি, ন্যানো মিটার, ন্যানো সিম কার্ড; এসবই ন্যানো প্রযুক্তির উদ্ভাবন।
বর্তমানে ন্যানো শব্দটি বেশ ট্রেন্ডি (Trendy) হয়ে উঠেছে। আজকাল মোবাইল সিম-এর আকার বোঝানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমারা ‘ন্যানো’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। স্মার্ট ফোনের দুনিয়ায় এখন তো হরহামেশাই বলতে শোনা যায় একটা ন্যানো সিম লাগবে। আমার ওই স্যুটটা (Suits) লাগবে, ওটাতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বলে ওটা অয়াটার প্রুফ (waterproof)কিন্তু আমরা কি জানি আসলে কী এই ন্যানো। এটা কী শুধুই সিম কার্ডের আকার বোঝানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়? নাকি ন্যানো-এর ভিন্ন অর্থ, ব্যপক পরিধি?
বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয় এখন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চোখ মাইক্রো থেকে এখন ন্যানো’র দিকে৷ গোটাবিশ্বকে যেমন নিয়ে আসা হচ্ছে আরো কাছাকাছি, তেমনি প্রযুক্তি আর পণ্যকেও করে তোলা হচ্ছে সূক্ষ্মতর৷
ন্যানো (Nano) হলো আসলে ন্যানো মিটাটের সংক্ষিপ্ত রূপ। এক ন্যানো মিটার হলো এক মিটারের একশ কোটি ভাগের এক ভাগ। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে, একটি চুলের গড়পরতা ব্যাস পঞ্চাশ হাজার ন্যানমিটার। অতএব এক ন্যানো মিটার হলো একটি চুলের ব্যাস-এর ৫০ হাজার ভাগের ১ ভাগের সমান।
আরও একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। আমরা জানি, মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম একক বা কনিকা হচ্ছে পরমাণু। আধুনিক পর্যায় সারণির প্রথম মৌলটি হচ্ছে হাইড্রোজেন। এখন ১০টি হাইড্রোজেন পরমানুকে পর পর সাজালে তা এক ন্যানো মিটারের সমান হয়। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, এক ন্যানো মিটার কতোটা ক্ষুদ্র পরিমান। আর প্রযুক্তি হচ্ছে বিজ্ঞানের প্রায়োগিক দিক বা বিষয়।
অতএব, ন্যানো প্রযুক্তি হচ্ছে পদার্থকে আনবিক পর্যায়ে পরিবর্তণ ও নিয়ন্ত্রন করার বিদ্যা। সংক্ষেপে যাকে বলে ন্যানোটেক (Nanotec)।
ন্যানো টেকনোলজির ক্ষেত্র দু’টি প্রক্রিয়া আছে। একটি হলো উপর থেকে নীচে (টপ টু বট্ম) আর অপরটি নিচ নীচ থেকে উপর (বট্ম টু টপ)। টপডাউন পদ্ধতিতে কোন জিনিসকে কেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেয়া হয়। এই ক্ষেত্র সাধারণত ইটেকিং প্রক্রিয়াটি সর্ম্পকিত। আর ডাউনটুটপ (বট্ম টু টপ) হলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের ছোট জিনিস দিয়ে বড় কোন জিনিস তৈরি করা।
আমাদের বর্তমান ইলেক্ট্রনিক্স হলো, টপডাউন প্রযুক্তি। আর ন্যানো টেকনোলজির হলো, বটমটপ প্রযুক্তি। ন্যানোমিটার স্কেলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তুর উপাদান দিয়ে তৈরি করা হবে এই ন্যানোপ্রযুক্তিতে। সহজে বুঝবার জন্য আরও একটা উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুন, আপনার একটা বিশেষ ধরনের ডিএনএ-এর প্রয়োজন। বটমটপ প্রযুক্তিতে, সেই ছোট ছোট উপাদান গুলিকে মিশ্রন করে সেই কাঙ্খিত ডিএনএ’টি তৈরি করা হবে। তবে নানোপ্রযুক্তিতে শুধু মাত্র বটমটুটপ প্রযুক্তিই নয়, বরং টপটুবটম প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই দুটির সংমিশ্রন করা হবে।
ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে এখন বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়৷ মাইক্রো থেকে এখন ন্যানো’র দিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চোখ৷ গোটাবিশ্বকে যেমন নিয়ে আসা হচ্ছে আরো কাছাকাছি, তেমনি প্রযুক্তি আর পণ্যকেও করে তোলা হচ্ছে সূক্ষ্মতর৷
আমরা আমাদের চারপাশে ন্যানোটেক এর অনেক উদাহরন দেখতে পাই। আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করি তার প্রসেসরে যে ক্ষুদে ক্ষুদে ট্রানজিস্টর আছে তার সংখ্যার উপর নির্ভর করে কম্পিউটরে কাজ করার গতি। দিন দিন দেখা যাচ্ছে যে প্রসেসরের আকার কমলেও আগের থেকে ট্রানজিস্টর এর সংখ্যা অনেক বেশি হয়েছে। ফলে কম্পিউটর হইয়েছে আরো শক্তিশালী। এর সবই ন্যানো প্রযুক্তির অবদানে। ইলেকট্রনিক্স ছাড়াও বিজ্ঞানের অন্য অনেক শাখায়ও রয়েছে ন্যানোটেকের অবদান।
বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় প্রতিনিয়ত আমরা পরিচিত হয়েছি বিভিন্ন বিচিত্র বিষয়ের সাথে। ন্যানো প্রযুক্তি বা ন্যানোটেকও তাদের একটি।
এনএসআর//এসআই/বিআই/২৬ জুন, ২০১৮