স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষক শিল্পী সমাদ্দারকে (৬৫) স্মরণে বাগেরহাটে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় শহরের সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের এসি লাহা মিলনায়তনে এ শোকসভার আয়োজন করা হয়। সভায় বক্তারা সড়কে মৃত্যুর মিছিলের কথা তুলে ধরে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চান রাষ্ট্রের কাছে।
গেল ২৭ ফেব্রুয়ারি টিআইবি’র একটি জাতীয় সম্মেলন থেকে ফেরার পথে গোপালগঞ্জে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বিশিষ্ট নারীনেত্রী, মানবাধিকার কর্মী, বাগেরহাট জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী শিল্পী সমাদ্দার। তিনি বাগেরহাট সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও কমিউনিস্ট পার্টির জেলা শাখার সদস্য ছিলেন।
বাগেরহাট শহরের আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এই শিক্ষকের বিচরণ ছিল বাগেরহাটে শিক্ষা, সৃংস্কৃতি, রাজনীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে। সবার কাছে পরিচিত ছিলেন ‘শিল্পী দি’ নামে।
ব্যক্তি জীবনে ছিলেন অবিবাহিত। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ৩ ফেব্রুয়ারি শহরের আমলাপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ তিনি। ৭ ভাই-বোনের মধ্যে শিল্পী সমাদ্দার ছিলেন সবার বড়।
বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি পিসি কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করে তিনি যুক্ত হন শিক্ষকতায়। সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পেয়েছেন ‘জয়িতা’ পুরস্কার ও ‘মমতাময়ী’ পুরস্কার।
শোকসভায় বক্তারা বলেন, শিল্পী সমাদ্দার ছিলেন বাগেরহাটের নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ। তার হাত ধরে মফস্বলের এই শহরে গড়ে ওঠে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন। ছিলেন যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি কন্ঠস্বর। যেখানেই নারী নির্যাতনের ঘটনা শুনতে নিজেই ছুটে যেতেন, পাশে দাড়াতেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ প্রফেসর চৌধুরী আব্দুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নাগরিক শোকসভায় বক্তব্য দেন বাগেরহাট ২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মীর শওকাত আলী বাদশা, জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর ফজলে সাঈদ ডাবলু, আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিচাঁদ বিশ্বাস, সাবেক প্রধান শিক্ষক মুখার্জ্জী রবীন্দ্রনাথ, মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি অ্যাড. সীতারাণী দেবনাথ, নাগরিক শোকসভা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ফররুখ হাসান জুয়েলসহ অনেকে।
বক্তারা শিল্পী সমাদ্দারের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন, তার মনন, ত্যাগের কথা স্মরণ ও শোক প্রকাশের পাশাপাশি প্রত্যেকের কন্ঠে ছিল দুর্ঘটনার নামে হত্যাকে সাভাবিক ভাবে মেনে নেওয়ার প্রতিবাদ। শোকসভায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে কথা বলেন ভাইয়ের মেয়ে স্বপ্নীলা সমাদ্দার। শিল্পী সমাদ্দারের কাছেই যার বেড়ে ওঠা, পড়াশুনা।
প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে স্বপ্নীলা সমাদ্দারের আবেগঘন উচ্চারণগুলিতে বার বার কেঁদে ওঠে হলভর্তি শোকস্তব্দ হৃদয়। কেঁদে ফেলেন অনেকেই।
বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক উন্নয়ন কর্মী শাহাদাত হোসেন বাচ্চু বলেন, কিছু মানুষের মৃত্যু কেবল একটি পরিবার নয়, একটি সমাজের জন্য বিষাদ, এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা তেমন একজনকে হারালাম। এটা হত্যার সমান। যখন একজন অদক্ষ চালক দ্বারা বেপরোয়া গাড়ি চালোনার ফলে মৃত্যু হচ্ছে, তখন তা কেন দুর্ঘটনা? এটি নিঃসন্দেহে হত্যা।
এই হত্যা কে থামাবে? অনেকেই নানা ভাবে প্রশাসনকে এই দুর্ঘটনা রোধ ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বললেন। আমি বলবো এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই। রাজনীতিকভাবে এর বিরুদ্ধে অবস্থান না নিলে শিল্পী সমাদ্দারদের এভাবে হারাতে হবে। এমন হত্যার বিচার এবং দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এইচ//এসআই/বিআই/১২ মার্চ, ২০১৮
** না ফেরার দেশে শিল্পী সমাদ্দারের