স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটের সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কে যাত্রীবেসে একটি নৈশ কোচে (পরিবহন) ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার গভীর রাতে শরণখোলাগামী মেঘনা পরিবহনে হানা দিয়ে চালক, সুপারভাইজারসহ ৪ জনকে কুপিয়ে যাত্রীদের নগদ টাকা ও মালামাল লুট করেছে একদল ডাকাত।
পুলিশ ডাকাতির কথা স্বীকার করলেও ঘটনাস্থল মোরেলগঞ্জ থানার নাকি কচুয়া থানার অধিনে তা নিয়ে দু’ থানা মধ্যে চলছে ‘ঠেলাঠেলি’।
জানা গেছে, মেঘনা পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-৩৯৪৯) বাসতে ৪৫ জন যাত্রী ছিল। বুধবার (৭ মার্চ) রাত ৮টায় ঢাকার সায়দাবাদ বাস স্টান্ড থেকে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে ওই নৈশ কোচটি। রাত ৩টার দিকে যাত্রীবেশী কয়েকজন ডাকাত হঠাৎ বাসের যাত্রীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা অস্ত্রের মুখে বাসের চালক, হেলপার, সুপারভাইজারসহ সবাইকে জিম্মি করে যাত্রীদের কাছে থাকা মালামাল ও টাকাপয়সা লুট করতে থাকে।
এ সময় ডাকাত দল চারজনকে কুপিয়ে জখম করে। এরা হলেন- যাত্রী রাহাত হোসেন (২২), ইমরান হাওলাদার (১৫), বাস চালক রাজু মল্লিক (২৬) ও সুপারভাইজার কামরুল ইসলাম তালুকদার (৩৮)। কমবেশি আহত হন বাসের আরও কয়েকজন যাত্রী।
হামলায় গুরুতর আহত কামরুল ইসলামকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার বাড়ি মোরেলগঞ্জ উপজেলার ধানসাগর গ্রামে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেঘনা পরিবহনের সুপারভাইজার কামরুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাইবোর্ড এলাকায় পৌঁছাতে ৫জনের একটি সশস্ত্র ডাকাত দল আমাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে। পরে তারা বাসের চালক রাজু মল্লিককে অস্ত্রের মূখে জিম্মি করে বাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
‘তারা বেশ কয়েক জনকে মারধর করে এবং যাত্রীদের কাছে থাকা মোবাইল, নগদ টাকা ও মালামাল লুট করে। বাসটি সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈবজ্ঞহাটি (মোরেলগঞ্জ উপজেলার) এলাকায় পৌঁছালে ডাকাত দল বাস থেকে নেমে যায়।’
পরিবহণের মালিক লিটু শরীফ মোস্তফা জামান বলেন, ওই বাসটিতে টিকিট ছাড়া কোন যাত্রী ছিল না। সায়েদাবাদ জনপদের মোড় থেকে বাসটিতে এক সাথে পাঁচযাত্রী ওঠেন। তারাই এই ডাকাতি করেছে বলে মনে হচ্ছে।
‘ডাকাত দলের হামলায় আমার তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। যাত্রী এবং বাসের কর্মচারিদের কাছ থাকা নগদ টাকা, মোবাইল সেট নিয়ে গেছে।’
বাস ডাকাতির ঘটনা পুলিশকে জানানো হলেও তারা কোন তৎপরতা দেখাননি বলে অভিযোগ পরিবহন মালিকের।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জুনিয়র কলস্যালটেন্ট (অর্থোপেডিক) এস এম শাহনেওয়াজ বলেন, আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি বাসের সুপারভাইজার কামরুল তালুকদারের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।
ডাকাতির বিষয়ে মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুল আলমের ভাষ্য, ঘটনাটি মোরেলগঞ্জ থানার এলাকায় ঘটেনি। রাতে পুলিশ টহলে ছিল। ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কের কচুয়া থানা এলাকার উচু ব্রিজের কাছে।
‘ওই এলাকায় ডিউটিতে থাকার কথা কচুয়া থানা পুলিশের।’
তবে মোরেলগঞ্জ থানার ওসির এই বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করেন কচুয়া থানার ওসি মো. রবিউল কবির। তার ভাষ্য, এটা কচুয়ার মধ্যে নয়, মোরেলগঞ্জের মধ্যে ঘটেছে। কারণ কচুয়া থানা পুলিশের এএসআই রোকন টহল গাড়ি নিয়ে সাইনবোর্ড থেকে ঢাকার সব পরিবহনকে মোরেলগঞ্জের দৈবজ্ঞহাটি বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। ডাকাতির ঘটনা দৈবজ্ঞহাটির পরেই ঘটেছে।
দুই থানাই ডাকাতির কথা স্বীকার করলেও ঘটনাস্থল কোন থানার অধিনে তা নিয়ে ‘দ্বিধান্বিত’। ফলে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়নি।
এদিকে গেল দুই মাসে ওই সড়কে তিন দফা ডাকাতির ঘটনায় পরিবহন মালিক ও যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এইচ//এসআই/বিআই/০৮ মার্চ, ২০১৮